ভূমিকম্পে করণীয়
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই নাগরিকদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাসস্থান। প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই আকাঙ্খা থাকে একটি সুন্দর বাড়ি তৈরি করার। বাংলাদেশে বর্তমান নগরজীবনে সবারই স্বপ্ন একটি সুন্দর ফ্লাটে বসবাস করার । সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দেশ থেকে বিদেশযাত্রা শত কষ্ট পরিশ্রমের অর্জিত হয় স্বপ্ন পূরণ । কিন্তু সেই স্বপ্নের প্রাসাদ বা অট্টালিকা হঠাৎ পূর্বাভাস ছাড়াই এক ভয়াল দুর্যোগ এসে সব ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে যায়।
শহরের জমি না বাড়লেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষ। ফলে ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে শহরে মাথা গুঁজার ঠাঁই। গ্রাম থেকে শহর মুখি হচ্ছে নিয়মিত, সুযোগ সুবিধার দিক বিবেচনা করেই শহরে ছুটে আসছে কিন্তু অপরিকল্পিত শহরায়নের ফলে শহরে বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে উঠছে। কিছু দিন আগে ২ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ভূমিকম্প অনুভব হয়েছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫•৬।
ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ আবহওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ - পূর্বে লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায়। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১২ কিলোমিটার গভীরে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে কোনো সময় ৮ দশমিক শূন্য থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হওয়াতে স্বস্তির বিষয়। তবে অতীত বিবেচনায় নিলে স্বস্তি বা চিন্তা মুক্তির কোনো কারণ নেই। ভূমি বিশেষজ্ঞ দের কপালে চিন্তার চাপ তাই বার বার আমাদের সতর্ক করে যাচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আমাদের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দিতে পারে! এজন্য আমাদের আগাম করণীয় প্রস্তুতির কথাটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের অজ্ঞতা অসর্তরকতা সেটির দিকে নজর দিই না।
অন্যান্য প্রকৃতিক দুর্যোগ পূর্বাভাস জানিয়ে দিলেও কিন্তু ভূমিকম্প এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার পূর্বাভাস জানার সুযোগ থাকে না। ছোট মাত্রায় ভূমিকম্প আমাদের বারবার সর্তকবাণী মতো দিয়ে যাচ্ছে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে, কিন্তু আমরা সাবধানতা অবলম্বন করছি না। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্পে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আমাদের ঘিরে রাখছে।
বাড়ি নির্মাণের বিল্ডিং কোড মেনে না চলা বন উজাড় পাহাড় কেটে ধ্বংস করা সহ নানা উপায়ে আমরা ভূমিকম্প নামক মহা দুর্যোগকে ডেকে আনছি। ঢাকা শহরের মতো দেশের সর্বত্র ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিকের উপরে। শহরের স্বল্প জাগায় আকাশচুম্বী ভবন বা অট্টালিকার সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। যার অধিকাংশ তৈরী হয় পরিকল্পনা বিহীন, দূরত্ব বা বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরী করা হচ্ছে ভবন। যেকোনো সময় স্বল্প মাত্রার কম্পনেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে ।
মূলত সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও ভূমিকম্প পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই ভূমিকম্প রোধ বা মোকাবেলা করা সম্ভব নয় তবে ক্ষয়ক্ষতি বেশি না হয় তাই বিশেষ সর্তক থাকার কোনো বিকল্প নেই। যেমন ফায়ার সার্ভিস, স্কাউট রোভার বাহিনীকে আগাম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেকোনো সময় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার কাজ যেনো দ্রুত করতে পারে। সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে নির্ধারিত বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হচ্ছে কিনা তার তদারকি করতে হবে। উপকূলীয় এলাকার আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করে রাখতে হবে যাতে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হওয়া মানুষ দ্রুত আশ্রয় নিতে পারে।