• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনাভাইরাসকালীন সময়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মান?

প্রকাশ:  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৭
ওসমান গনি
প্রিন্ট

বাস্থ্যসেবা পাওয়া দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। একটি রাষ্ট্রকে তার দেশের জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণে আন্তরিক হওয়ার কোন বিকল্প নাই। রাষ্ট্রকে নাগরিকের সুখ দুঃখের যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে একবারের করোনার দুর্যোগকালীন সময়ে দেখা গেল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কি রকম সুবিধা পেয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির কথা বার বার বলা হলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি। করোনার দুর্যোগকালীন সময়ে বাংলাদেশের মানুষ যে কি পরিমান যন্ত্রণা ভোগ করছে তা শুধু ভোক্ত ভোগীরাই বলতে পারবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান একবারেই নাজুক। সেটা কেউ স্বীকার করুক আর না করুক। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে বার বারই বিভিন্ন মিডিয়ায় লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের যেন এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যাথাই নাই। মানুষের রোগব্যাধি ও মহামারি কখনও বলে আসে না। এজন্য দেশের সরকার প্রধান কে সব সময় আগ থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

করোনাভাইরাসের কারনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান সম্পর্কে দেশের মানুষ এবার পুরোপুরিভাবে জানতে পারল।  স্বাস্থ্যখাতের সাথে জড়িত চিকিৎসকরা ও এবার প্রমাণ করে দিলেন তারা কতটা রোগীবান্ধব বা দেশপ্রেমিক।  করোনার আক্রমনের পর দেশের সরকারের বেতন/ভাতা ভোগকারী অনেক ডাক্তার দায়িত্ব ছেড়ে বাসায় চলে গেলেন। কিন্তু পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন চাপ ও প্রণোদনা পওয়ার আশায় অনেকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। আবার অনেকে বাসাতেই রয়েছেন। কিন্তু কেন এমনটা হবে? দেশের মানুষ জানতে চায়। সরকারের বা রাষ্ট্রের সুসময়ে তারা বসে বসে জনগনের টাকা খাবে আর দুঃসময় আসলে লেজঘুটে ঘরে চলে যাবে সেটাতো হতে পারে না। তারাতো দেশের জনগনের সেবক। তারা মানুষের সুসময় আর দুঃসময়ে পাশে থাকবে এটাই হওয়া উচিত তাদের নীতি। কিন্তু করোনার দুঃসময়ে তারা দেশের জনগণকে ও রাষ্ট্র প্রধান কে ক্ষুধার্ত  বাঘের মুখে ঠেলে দিয়ে তারা কাপুরুষের ন্যায় ঘরের কোণে লুকাইলেন। এটা তারা কেমন সৌজন্যণাবোধ দেখালেন?
যাক তারপর প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণ কে সাথে নিয়ে তিনি তার অবস্থান থেকে মনোবল শক্ত করে আজও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ তো প্রধানমন্ত্রী কে কোন না কোনভাবে চালিয়ে যেতে হবে। কারন তিনি তো রাষ্ট্র প্রধান বলে কথা। খেলার মাঠে যখন নেমেছেন তাকে খেলতেই হবে। জয় পরাজয় দেশের জনগণ দেখবে। জনগণ যাতে বলতে না পারে যে, কাণ্ডারিহীন নৌকায় জনগণ কে ভাসিয়ে দেয়া হলো। তার শক্ত মনোবল তাকে নিয়ে যাবে কোন সোনালী তীরে। তখন প্রমান হবে আসল দেশ প্রেমিক কারা।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা নিয়ে বরাবরই অভিযোগ থাকলেও, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর থেকেই দেশটির স্বাস্থ্য অবস্থা যে কতটা নাজুক, সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে।
একদিকে যেমন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালগুলো ঠিকভাবে সেবা দিতে পারছে না, অন্যদিকে চিকিৎসক সংকটসহ অন্যান্য জটিলতার রোগীরাও চিকিৎসা পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোও।
বাংলাদেশের জেলা বা উপজেলা শহরে চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার অভিযোগ বেশ পুরনো। সেখানে ভালো চিকিৎসক থাকেন না, হাসপাতালগুলোয় সরঞ্জামাদির অভাবের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন ঢাকা ও জেলা শহরগুলোর হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানের অভাব, আইসিইউ ও মেডিকেল সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততার নানা চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
গত কয়েক বছরে দেশজুড়ে যে হাজার হাজার বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে এই সংকটের সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রাখার অভিযোগও রয়েছে অহরহ। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, তাদেরকেও অনেক প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। মানসম্পন্ন মাস্ক ও পিপিই না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে করোনাভাইরাস সংকটের শুরু থেকেই। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক চিকিৎসক তাদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন।কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর হতে চললেও, স্বাস্থ্য খাতের এরকম অবস্থার সমস্যা বা কারণ কি?
প্রথমত একটি  বড় সমস্যা হলো, এটা বিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু সংস্কার হয়নি। জনসংখ্যার হিসাবে আমাদের যে চাহিদা, তার জন্য যে সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার না করেই এটা বিবর্তিত হয়ে আসছে। সেটাও হচ্ছে যার যার মর্জি মতো। ''দ্বিতীয় হলো, এটার অর্থায়ন নিয়ে একটা সমস্যা আছে। সরকারি অর্থায়ন যেটা দেয়া হয়, সেটা প্রতিনিয়ত কমছে। কমতে কমতে এখন যেই পর্যায়ে চলে আসছে, তাতে বেতন ভাতা হয় আর কিছু অবকাঠামো তৈরি, যন্ত্রপাতি কেনার খরচ হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় যতটা অবকাঠামো তৈরি হয়, যন্ত্রপাতি কেনায় যতটা দুবৃত্তায়ন হয়, কিন্তু জনগণের চিকিৎসার ট্রেন্ডটা কি হবে, সেটা ঠিক করা হয়নি। যেহেতু জন চাহিদা আছে, তখন একটা বিকল্প বেসরকারি ব্যবস্থাপনা চলে আসছে। কিন্তু চিকিৎসার নামে বেশিরভাগই সেখানে অর্থ উপার্জনের কাজটা হয়।''২০০০ সালে ও ২০১১ সালে দুইটি স্বাস্থ্য নীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর তেমন একটা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করছেন বিজ্ঞমহল।
 
'এখানে রাজনীতির একটা জায়গা আছে, আমলাদের একটা ব্যাপার আছে আর আছে কর্মী বাহিনী। তিনটার মধ্যে সমন্বয়টা হয়নি। সেই সমন্বয় না হওয়ায় এই গাড়ি চলে না। যে যার মতো কাজ করছে আর এখন এটা স্থবির হয়ে পড়ে আছে। সংস্কার এবং জবাবদিহিতা আগে নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে কর্মীদের ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও পরিকল্পনার মধ্যে আনতে হবে। বাংলাদেশে চিকিৎসক অনেক থাকলেও, দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই। টেকনিশিয়ান থাকলেও তাদের নাই কোন করোনাভাইরাস সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ। যার কারনে এ ক্ষেত্রে তারা সফলতা দেখাতে পারেনি। যেকোন কাজের পরিকল্পনা না থাকলে দেখা যাবে, অনেক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ আছে, কিন্তু অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার লোক নেই। এবারের করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে এ বিষয়টা উপলদ্ধি করা গেছে। কাজ জানা লোক না থাকলে কি সমস্যায় পড়তে হয়।
২০১৯-২০২০ সালের চলতি বাজেটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে জিডিপির মাত্র ০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থ মূল্যে যার পরিমাণ ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডে ব্যয় করা হয় জিডিপির ৯ শতাংশ।
জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের (এসকাপ) ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপির বিচারে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় বাংলাদেশ।কিন্তু সেই বরাদ্দ টুকুও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। যদি বাস্তবায়িত হতো তাহলে দেশের স্বাস্থ্যখাতের মান আরও ভালো হতো।
 
স্বাস্থ্য খাতের সংকট সমাধানে তারা বরাদ্দ ও ব্যয় সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠেলে সাজানোও প্রয়োজন।  
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলাতে সম্প্রতি জরুরি ভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার সেবিকা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
নিয়োগ দিলে কি হবে। তারা কি কাজ করতে পারবে? মনে হয় না, কারন তাদের কোন উন্নত প্রশিক্ষণ নাই।যারা দীর্ঘদিন কাজ করার পরও করোনা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের নিকট হতে কি আশা করায় যায়। এটা হলো নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো এমন অবস্থা। আইসিইউ ও হাসপাতাল শয্যা বাড়ানোর কাজও শুরু হয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসার বেহাল চিত্র খুব একটা পাল্টায়নি।
 
লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট
০১৮১৮-৯৩৬৯০৯

সর্বাধিক পঠিত