মহান বিজয় দিবস
আজ বিজয়ের দিন। রক্তগঙ্গা পাড়ি দিয়ে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে করায়ত্ত করার দিন। বহুল কাক্সিক্ষত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে প্রাপ্তির মহাআনন্দ প্রকাশের দিন। আমরা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপ্তিকে নয় মাস বলি। আসলে এ ব্যাপ্তি ছিলো নয় মাসেরও কম-মাত্র ৮ মাস ২০ দিন। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারত সহ বিশে^র অনেক দেশেই কেবল স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণার পর ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করে রক্ত¯œাত বিজয় তথা পরম প্রিয় স্বাধীনতাকে অর্জন করতে হয়নি। অথচ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিরিশ লাখ সাধারণ মানুষের আত্মদান, দেশের সেরা মেধাবী সন্তান প্রায় দেড় হাজার বুদ্ধিজীবীর গণহত্যা এবং দু লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আমাদেরকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে পেতে হয়েছিলো। সেজন্যে আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস নামে দুটি দিবস পৃথকভাবে উদ্যাপিত হয়। এমনটি বিশে^র খুব কম দেশেই হয়ে থাকে।
একটি গৌরব করার মতো বিষয় হলো এই যে, বাংলাদেশের বিজয় দিবস ভারতেও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বল্প পরিসরে পালিত হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক বিজয় হিসেবে তারা এই দিবসটি পালন করে। কেননা ১৯৭১ সালের এই দিন (১৬ ডিসেম্বর) পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি ঢাকার রমনায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ৯৩ হাজার সেনা দলের সঙ্গে জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ভারতে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর তারিখটি সেই থেকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এইদিন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর তিন শাখার প্রধানেরা ইন্ডিয়া গেটের অমর জওয়ান জ্যোতিতে মাল্যদান করেন।
এবার বাংলাদেশে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে। স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা, জঙ্গিবাদমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রয়াসের ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যে ব্যতিক্রম ঘটনা হিসেবে সরকারে থেকেই এই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ অনেক বড় জোট গঠন করে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে দাবি করেছে। প্রতিপক্ষের অভিযোগ, এই নির্বাচনে শাসক দলের হামলাসহ বহুবিধ বাধায় নির্বাচনী পরিবেশে নেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ মাঠ ছেড়ে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, আমরা ২০১৪ সালের মতো শাসক দলকে খালি মাঠে গোল করতে দেব না। নির্বাচনে তাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তারা প্রমাণ করতে চান, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কতোটুকু সুষ্ঠু হয়। এদিকে শাসক দল বলছে, প্রতিপক্ষ মূলত নির্বাচন
বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের জনগণ উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, শান্তি-স্থিতিশীলতা চায় এবং স্বাধীনতার চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রত্যাশা করে। সেজন্যে শাসক দলকেই পুনরায় ক্ষমতাসীন করতে চায়।
সুধীজন মনে করেন, মহান বিজয় দিবসে দেশের জনগণ শাসক দল ও তাদের শক্ত প্রতিপক্ষের বক্তব্য এবং ইশতেহার বিশ্লেষণ করে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় এমন শপথ নেবে, যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ করার মতো কোনো অপশক্তি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ না পায়। আমরা গণতন্ত্র রক্ষায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন প্রত্যাশা করি, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও অনির্বাণ থাকুক-সেটাও প্রত্যাশা করি।