ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দুই উদ্যোক্তা চাকুরি হারিয়ে দিশেহারা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিশন ২০৪১-এর ভিতর ডিজিটাল তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সারাদেশে প্রযুক্তি নির্ভর নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে প্রত্যেক ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক ওয়ার্ডে একজন দক্ষ নারী ও পুরুষ প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই আলোকে ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় তৎকালিন মেয়র প্রশিক্ষিত দুই উদ্যোক্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্তরা খেয়ে না খেয়ে পৌরসভার অনলাইন সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে নিজেদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এই সেবাটি উল্লেখযোগ্য স্থানে নিয়ে আসে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব পাওয়ারপর এই দুই উদ্যোক্তার কপাল পুড়ে, নিজেদের দায়িত্ব হারিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ ও অনুযোগ দেওয়ার পরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই দুই উদ্যোক্তা ফখরুল ইসলাম ও ফারজানা আক্তার।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে দেশের তরুণ-তরুনীদের কাজে লাগাতে এটুআই প্রজক্টের আওতায় প্রশিক্ষন প্রদান করার পর স্থানীয়ভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন। এটুআই প্রজেক্ট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ফখরুল আলম ও ফারজানা আক্তার। সম্পন্ন বৈধভাবে সরকারের সকল প্রকারের নিয়মনীতি মেনে তৎকালিন মেয়র মাহফুজুল হক প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা ফখরুল ইসলাম ও ফারজানা আক্তারকে নিয়োগ প্রদান করে। ডিজিটার সেন্টারের সকল প্রকার নিয়মনীতি মেনে তারা দু’জন নাগরিকদের ডিজিটাল সেবা দিয়ে আসছে। পূর্বে তাদের বিরুদ্ধে পৌর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অনুযোগ না থাকলেও বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী দায়িত্ব গ্রহণেরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষ করে এই দ্ইু উদ্যোক্তাকে কোন প্রকারের কারন দর্শনোর নোটিশ না দিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। নিজেদের মেয়রের কাছে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে নিজের দায়িত্ব ফিরে পেতে উদ্যোক্তা ফখরুল ইসলাম জেলা প্রশাসক ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভা থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ফখরুল আলম বলেন, দীর্ঘ দিন কাজ করেছি সাবেক ও বর্তমান মেয়রের আমলে কেউ কোন দিন কোন অভিযোগ দিতে পারে নাই। গত ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর আর্থিক বিষয় অনিয়ম উল্লেখ করে কোন কারন দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই সরাসরি স্থায়ীভাবে অব্যহতি চিঠি দেয়া হয় আমাকে। মূলত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন থেকে সরকার নির্ধারিত ফি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। তাই আমি পৌরসভার একাউন্টে ব্যাংক রিসিটের মাধ্যমে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা জমা করি। ব্যাংক থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে খরচ করে ফেলে মেয়র ও ক্যাশিয়ারসহ একটি চক্র। তাই স্থানীয় সরকার চাঁদপুর শাখা সরকারি ফি জমা না দেয়ায় সাময়িকভাবে পৌরসভার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভার বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন পর জেলা প্রশাসক মহোদয় পৌরসভায় নিয়মিত পরিদর্শনের চিঠি প্রদান করিলে তাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয় এবং তারা কৌশলে আমাকে ঐ টাকা আত্মাসাৎ করার অভিযোগে স্থায়ী অব্যহতির চিঠি প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে মেয়রের মেয়ে অ্যাডঃ নাজমুননাহার অনির ইন্ধনে জহিরুল ইসলাম পাটওয়ারী ও রবিউল নামের দুই যুবক আমার কাছে নিয়মিত মাসওয়ারা চায়, আমি তা দিতে না চাইলে তারা পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে অব্যাহিত প্রদান করে।
এ বিষয়ে আমি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর সোনালী ব্যাংক ফরিদগঞ্জ শাখার একাউন্টে জমা করার রশিদসহ জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ১১/১০/২০২৩ খ্রি: লিখিত অভিযোগ ও পরে গণশুনানিতে সরাসরি অভিযোগ জানাই আমার বিশ্বাস জেলা প্রশাসক মহোদয় আমার বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এছাড়াও ২৫/০৫/২০২৩ খ্রি: ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করি।
অব্যাহতি প্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তার বলেন, আমাকে কি কারনে বা কেন পৌরসভা উদ্যোক্তা থেকে বাদ দিয়েছেন তা আমি আজও জানি না। তবে মেয়র বা তার কন্যা নাজমুন নাহার অনি বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনি কোন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কি? লিখিত অভিযোগ কাকে দিব কার কাছে দিব যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন উদ্যোক্তা বাদ দেওয়া যাবে না, তাহলে তিনিতো প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনলেন না। আমার সহকর্মী পুরুষ উদ্যোক্তা মো: ফখরুল আলম তিনি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে লিখিত ও গণশুনানীতে সরাসরি অভিযোগ করেও কোন ফলাফল পায়নি। তাই সম্মানের সহিত চলে আসছি।
গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রশিক্ষিত ও সফল দুই উদ্যোক্তাকে সরিয়ে দিয়ে প্ররিকল্পিতভাবে খালি দুটি পদে পৌরসভায় নিয়োজিত মাষ্টারোল কর্মচারী অপু ও মুক্তা চক্রবর্তীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় উদ্যোক্তা পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য আগামী ২ জুুন রোববার লোকদেখানো নিয়োগের আয়োজন করে। যা তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে পৌর সচিব শাহ আবু সুফিয়ান বলেন, আমি সদ্য ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় যোগদান করেছি। উদ্যোক্তাদের কি কারনে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি বক্তব্যের জন্য ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীকে অফিসে না পেয়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নং ০১৭১৬০৮৯৫৮০ তে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।