• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কালিরবাজার কলেজের শিক্ষক কর্তৃক ইসরাইলের পক্ষে মন্তব্য

প্রকাশ:  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন ও রাজস্ব খাতের সুবিধাভোগী একজন কলেজ শিক্ষক প্রকাশ্যে ইসরাইলের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করার ২ মাস পরও তার বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি! এতে ওই শিক্ষক সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে বা বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নেয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে তিনি রেহাই পাওয়ার সম্ভাব্য সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি স্বপদে বহাল তবিয়তে থেকে নিয়মিত মাসিক বেতনাদি গোপনে উত্তোলন করে চলেছেন। যার ফলে এলাকার সচেতন জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও মারাত্মক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বহুল সমালোচিত, নিন্দিত ও ঘৃণিত এই শিক্ষকের নাম স্বপন কুমার দাস। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলার কালিরবাজার কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক।
স্বপন কুমার দাস তার নিজ নামের ফেসবুক আইডি থেকে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের ফেসবুক পেইজে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের যুদ্ধের বিষয়ে ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে মন্তব্য করেন। তার সুস্পষ্ট মন্তব্য হচ্ছে, হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। ইসরাইল কঠোর হস্তে সন্ত্রাস দমন করবে। সন্ত্রাসীদের সাথে কোনো আপোষ নেই। হামাস ১ দিনে ৭০০ লোক হত্যা করেছে। এবার ইসরাইল প্রতিশোধ নেবে। আমরা শুধু ভিডিও দেখবো। উভয়পক্ষ মানুষ মারার খেলায় মেতে উঠেছে। স্বপন কুমার দাস আরেকটি মন্তব্যে লেখেন, মৌমাছির চাকে ঢিল মেরে আল্লাহকে ডাকলে কী লাভ হবে? ইসরাইল চরম প্রতিশোধ নেবে। এটা কোনদিনও থামবে বলে মনে হয় না।
তার এমন মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে কলেজ শিক্ষার্থীরা এবং আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে থাকে। গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখ সকালে স্বপন কুমার দাসের বিরুদ্ধে কলেজের সকল শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা কলেজ ক্যাম্পাসে এবং এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে।
খবর পেয়ে চাঁদপুর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় সুযোগ বুঝে অভিযুক্ত স্বপন কুমার দাস কলেজ ক্যাম্পাস থেকে গা ঢাকা দেয়। স্বপন কুমার দাস খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলাধীন তালা উপজেলার বাইগুনি গ্রামের গজেন্দ্র নাথ দাসের পুত্র। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের এবং প্রতিবাদমুখর এলাকাবাসীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে বেশ হিমশিম খেতে দেখা যায়। এ সময় ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন এবং প্রতিবাদমুখর ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে বিশেষভাবে সফল হন। পরে কলেজ মিলনায়তনে অভিযুক্ত স্বপন কুমার দাসের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদানপূর্বক সকলকে নিয়ে একটি শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে কালিরবাজার কলেজের বেশ ক’জন ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে তারা গণমাধ্যমকে সুস্পষ্টভাবে জানান, ইসরাইল ফিলিস্তিনে আক্রমণ করার পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইসরাইলের এহেন হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, নিরীহ ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করার পাশাপাশি গুরুতর আহত নারী, শিশু ও পুরুষের জন্যে সাধ্যমতো বেশকিছু মূল্যবান ওষুধ পাঠিয়েছেন। আমরা কালিরবাজার কলেজের ছাত্র-ছাত্রী তথা শিক্ষার্থী ও সচেতন এলাকাবাসী দেশবাসীর ন্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এহেন আন্তরিক ভূমিকার সাথে সম্পূর্ণ একমত এবং আন্তরিকভাবে একাত্ম।   
এ ব্যাপারে কালিরবাজার কলেজের অধ্যক্ষ এবং কলেজ গভর্নিং বডির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাফিজ আল মামুন  বলেন, আমরা আমাদের কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক স্বপন কুমার দাসকে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছি। আমরা তার জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তাই তাকে দ্বিতীয়বারের মতো কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করি। তিনি ইতোমধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জবাব দিয়েছেন। এ নিয়ে আমরা খুব সহসাই কলেজ গভর্নিং বডির সভায় দ্বিতীয়বারের মতো কারণ দর্শানোর লিখিত জবাব দেয়ার বিষয়ে সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে কালিরবাজার কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক মোঃ তছলিম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে মুঠোফোনে  জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কারো সাথে কোনো আপোষ নাই এবং একবিন্দুও ছাড় নয়। কলেজের আইসিটি বিভাগের শিক্ষক স্বপন কুমার দাস যে কাজটি করেছেন তা সুস্পষ্টভাবে আইন ভঙ্গের শামিল। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে এহেন স্ট্যাটাস দিয়ে দেশবিরোধী রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করে আমাদের কলেজের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছেন। তাই এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে যে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হবে, আমি তার সাথে সম্পূর্ণ একমত।