আর্ট নিয়ে এক ক্ষুদে শিল্পীর ভাবনা
যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে আমি ছবি আঁকা শিখলাম কোথা থেকে? বা কার কাছ থেকে কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে? তখন আমি বলবো, আমাদের দেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য আমাকে যেভাবে মুগ্ধ করেছে সেভাবেই আমার হাতে প্রথমে পেন্সিল ধরা তারপর রং তুলি ধরা। এই যে এতো এতো বিষয় এতো এতো আর্ট করি সকলই তো আমার বাংলার রূপ, রস,গন্ধ এমনকি বাংলার মানুষের নিত্য নতুন দিনের এক একটা বাস্তব চরিত্র। ওহ হ্যাঁ এতো কথা বলবো পরিচয় দিবো না সেটা কী করে হয় বলুন তো...??
আমি সানজিদা রহমান, চাঁদপুর জেলা এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামের একজন অতি সাধারণ ঘরের একটা মেয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি আর্ট নিয়ে সময় পার করতে আমার বেশ ভালোই লাগে। প্রতিটি মানুষের জীবনেই ছোটবেলা থেকে কিছু ইচ্ছা, আগ্রহ নিয়ে বেড়ে উঠে আর এ বেড়ে ওঠার মাধ্যমে নিজেকে যথা সম্ভব প্রস্তুত করার চেষ্টা করে। ঠিক এমনই একজন মানুষ আমি। ছোট বেলা থেকেই অনেক ইচ্ছে, আগ্রহ নিয়ে নিজে নিজে যতটুকু পেরেছি আঁকা আঁকি করতাম। যখন ইচ্ছে হতো একটা গাছ, একটা ঘর, একটা ফুল ইত্যাদি ইত্যাদি আর্ট করতাম। সুন্দর হত না তো! একটুও সুন্দর হত না যখন ছোটবেলায় আর্ট করতাম কিন্তু মনের মধ্যে এক অন্যরকম ইচ্ছে শক্তি, আগ্রহ শক্তি কাজ করতো চেষ্টা করবো হ্যাঁ ইনশাআল্লাহ পারবো আমি। আমাকে পারতেই হবে এটা আমার নেশা,আর্ট আমার শান্তি। যেথায় শান্তি মিলে সেথায় মানুষ আঠার মতো লেগে থাকে শান্তি অনুভব করার জন্য। আমার বেলায় ও তেমনটি হতো শান্তি পাই আলাদা এক অন্যরকম শান্তি মিলে আর্ট করার মাধ্যমে। নিজের সকল আবেগ, অনুভূতি ইচ্ছে,ভালোলাগা,ভালোবাসা সবটুকু আমার এই আর্টের কাছেই।
ছবি আঁকা আমার নেশা রং আমার আত্মার শান্তি। জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ আর ভালোবাসা। কোনো ছবি এঁকে যখন শেষ করতে পারি তখন মনে হয় পৃথিবীতে আমার চেয়ে কেউ সুখী নয়! এই জীবনে আমি আর কিছুই চাইনা রং আর লেখার নেশায় যদি ডুবে থাকতে পারি মাঝে মাঝে আমি ভাবি আমি যদি নির্বাসনে যেতে পারতাম। যেখানে আমার সাথে থাকতো আমার রং তুলি আর কাগজ, ক্যানভাস, আর পেন্সিল, আর সামান্য কিছু খাবার সাথে খোলা আকাশের নিচে বিছানা। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভালোবাসার হাতছানি। জীবনে ভালোবেসে দেখেছি।মানুষের ভালোবাসা শুধু প্রতারণা। ভালোবাসা সেভাবে মায়ায় ফাঁদ। সে শুধুই ধোঁকা দিতে জানে। রং আর লেখা দিয়েছে আমায় অনেক শান্তি। তার ঋণ শুধিবার শক্তি কোথায়। তাই ভাবি,কেউ যদি মনে করে অনেক কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখবে আমি বলবো আমি ছবি আঁকতে সময় পাই তাহলে বলবো" তোমরা আমাকে বুঝতে পারোনি বন্ধু " ছবি আঁকার জন্য এই আমি সংসার ছেড়ে বনবাসী হতে পারি। তাহলে আর কীসের ভয় অন্য সব ছাড়তে?
আমার কেউ কোনোদিন হাতে রং তুলি হাতে পেন্সিল দিয়ে হাত ধরে ধরে শিখিয়ে দেয়নি কোনো একটা চিত্র যে এটা এভাবে না ওভাবে অঙ্কন করতে হবে। কেউ কখনো রং তুলির ব্যবহার ও শিখায় দেয় নি। তবে হ্যাঁ নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী যতটুকু পেরেছি আঁকা আঁকি করতাম ছোট বেলায় আগে থেকে বেশ ভালোই আর্ট পারি। আমি যখন ক্লাস ৫ম শ্রেণি পড়তাম, তখন আমি প্রতিদিন রাতে সকল বিষয় পড়া শেষ করে একটা একটা করে প্রতিদিন আর্ট করতাম। প্রতিদিন আলাদা আলাদা আর্ট করতাম। তখন থেকেই মূলত আর্টের প্রতি গভীর ইচ্ছে জাগে মনে। বাংলার মাটি, পানি, আকাশ- বাতাস, পরিবেশ, প্রকৃতি, গোধূলির আবির রাঙ্গা আলো। এমনকি বাংলার মানুষের জীবন বৈচিত্র্য আমাকে মুগ্ধ করে। সবুজে, শ্যামলে কতই না সুন্দর বাংলার মাঠ,ঘাট,আহা কত সুন্দর কৃষকের জমির ফসল, জেলের মাছ ধরার চিত্র। আমাকে বার বার মুগ্ধ করে। আসক্ত করে বাংলার প্রতি। আমার আর্টগুলো মূলত এই নিয়েই। যখন ইচ্ছে হয় বাংলার প্রকৃতি আঁকি। যখন ইচ্ছে হয় সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্ত অর্থাৎ গৌধুলির আবির রাঙ্গা আলোমাখা চিত্র আঁকি। তবে আমার একটা বিষয় খুবই ভালো লাগে। কোনো একটা আর্ট করলে কেউ যখন সুনাম করে বেশ আনন্দ লাগে। আমি আরো জোর পাই মনের মধ্যে। নিজেকে একজন ক্ষুদ্র আর্টিস্ট মনে করি। কেউ যখন আমাকে আর্টিস্ট বলে ডাকে নিজের ওহ.. কি যে শান্তি লাগে। তবে এর মাঝে এই আর্টের জন্য আমি বাইরের কিছু কিছু লোকের বাজে বাজে কথা শুনেছি। আবার সুনাম ও অর্জন করেছি। বিশেষ করে আমার ফ্যামিলি আমাকে অনেক উৎসাহ দিত। লোকে আমায় বলতো এই আর্ট করে কোনো লাভ নেই। কিন্তু তারা বুঝে না যাদের আর্টের প্রতি দুর্বলতা থাকে তাদের কাছে এই কথাগুলো কিছুই না।
সর্বোপরি আমি এইটুকুই চাই যে, সবাই যেন সকল আর্টিস্টদের সম্মান করে। সে যে অবস্থানেই থাকুক না কেনো। আমি তো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্ট শিখিনি তাই বলে আমি কি পারিনি হ্যাঁ পেরেছি।তবে এটা সামান্য মাত্র। আরো ভালো পারতে হবে আমাকে। অন্তত একজন আর্টিস্ট হয়ে যেন আর্ট এর শিক্ষক হতে পারি। রং তুলি পেন্সিল দিয়ে অন্যকে হাতে হাতে শিখাতে পারি। আমি যেনো নিজের প্রতিভাটুকু কাজে লাগিয়ে অন্যকে সাহায্য করতে পারি। এটাই আমার জীবনের অনেক বড় সফলতা। তবে আমি যা আর্ট করতে পারি তা সামান্য মাত্র আমাকে আরো শিখতে হবে আরো পারতে হবে। অন্যকে শিখাতে হলে আরো দক্ষ হতে হবে। তাই আর্ট নিয়ে যত কথাই হোক না কেন কারো কথায় কান দেওয়া চলবে না সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক : সানজিদা রহমান, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর