• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জেলার বিভিন্ন স্থানে পিতৃতর্পণ সম্পন্ন

প্রকাশ:  ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে চাঁদপুর জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ১৪ অক্টোবর শনিবার পিতৃতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন ভোরের আলোতে  সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারীগণ তাদের পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় পবিত্র গঙ্গা জলে পুত-পবিত্র হয়ে মন্ত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে, তাদের প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল দান করেন। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, মতলব, কচুয়া, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তিসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে পিতৃতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কালীবাড়ি মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য গোবিন্দ সাহা মন্দির কমিটির সদস্যদের সহায়তা চাঁদপুরে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পিতৃতর্পণ কার্যক্রম শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শহরের কালীবাড়ি মন্দিরের সহায়তায় বিগত ক’বছর যাবৎ পিতৃতর্পণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রথমবার হাতেগোনা কয়েকজন পিতৃতর্পণে অংশ নিয়ে পিতৃপুরুষদের জলদান করলেও গতকাল তার সংখ্যা ছিল অনেক। গতকাল পিতৃতর্পণ করার জন্য ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথেই শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী-পুরুষ শহরের কালীবাড়ি মন্দিরে সমবেত হতে থাকেন। পরে ভক্তবৃন্দ একত্রিত হয়ে তারা শহরের প্রেসক্লাব ঘাটে ডাকাতিয়া নদীতে গিয়ে পিতৃতর্পণ সম্পন্ন করেন। এ সময় নেতৃবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রণজিৎ রায় চৌধুরী, উদ্যোক্তা গোবিন্দ সাহা, কালী বাড়ি মন্দিরের প্রবীর পোদ্দার, অর্জুন সাহা, রতন মিত্র, বাপ্পি সিংহ রায়, সঞ্জীত পোদ্দার, খোকন চন্দ, অ্যাডঃ প্রভাষ সাহা প্রমুখ।
পিতৃতর্পণ কাজে পৌরোহিত্য করেন পৌরহিত কমল চক্রবর্তী ও অভিজিৎ চক্রবর্তী। পিতৃতর্পণ শেষে সকলের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও এদিন পুরাণবাজার শ্রী শ্রী গৌর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর মন্দির সংলগ্ন মেঘনা নদীর পাড়ে মন্দির কমিটির আয়োজনে প্রথমবারের মত পিতৃতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন এখানে শতাধিক ভক্তবৃন্দ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে তাদের পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় পিতৃতর্পণ করে থাকেন। এদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক গোপাল চন্দ্র সাহা, শ্রী শ্রী গৌর নিত্যানন্দ মহাপ্রভু মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শিমুল সাহা, বারোয়ারী দুর্গা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানিক সাহা, শ্রী শ্রী গৌর নিত্যানন্দ মহাপ্রভু মন্দিরের সুখান্ত সাহা টিটু, উত্তম সাহা, অধ্যাপক সমীরণ ঘোষ, দীপক সাহা, গিরিধারী সাহা, নারায়ণ সাহা (নারু), উত্তম বর্মন, দিলীপ সাহা, নিতাই পোদ্দার, খোকন দাস, রাম সাহা রামু, তপন কুমার দে প্রমুখ।
পিতৃতর্পণে পৌরোহিত্য করেন অনিক চক্রবর্তী। এছাড়াও এদিন সকালে পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স সংলগ্ন মেঘনা নদীতে, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্ন স্থানে পিতৃতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগের দিন অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর সকালে পুরাণবাজার বিড়ালা ঘাটে ও ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার, মৃদুল কান্তি দাস, সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স মুক্তি রাণী দাসসহ অনেকেই এদিন এস্থানে পিতৃতর্পণ করেন। তাদের কাজে পৌরোহিত্য করেন পণ্ডিত কালী পদ চক্রবর্তী।
গতকাল ১৪ অক্টোবর ছিলো মহালয়া। এদিন প্রাতে রেডিও-টিভিতে ভেসে আসে মহালয়া উপলক্ষে দরদি গলায় চণ্ডিপাঠ। রেডিও-টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে প্রকাশিত হয় দেবী দর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনি। চণ্ডিপাঠের মধ্যে জানান দেয় শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনি বার্তা।
এদিন শুরু হয় দেবী পক্ষ। এদিন থেকেই দুর্গা পূজার ক্ষণ গণনা করা হলেও মহালয়ার সাথে দুর্গাপূজার কোন সম্পর্ক নেই। মহালয়া কথাটি এসেছে ‘মহৎ আলয়’ থেকে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, পিতৃ পুরুষের আত্মা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহ-লোকে আসেন জল ও পিণ্ড পাওয়ার আশায়। তাই এদিন সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারী  প্রয়াত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল ও পিণ্ড প্রদান করে তাঁদেরকে তৃপ্ত করেন।
পিতৃপুরুষগণ কেন এই দিনেই আসেন এর সঙ্গে কিন্তু মহাভারতের যোগ আছে। মহাভারতে বলা হয়েছে যে, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। ব্যাপারটি জানার উদ্দেশ্যে কর্ণ জিজ্ঞাসা করলেন ইন্দ্রকে। তখন ইন্দ্র বললেন, ‘তুমি সারাজীবন সোনাদানাই দান করেছো, পিতৃপুরুষকে জল দাওনি।’
কর্ণ বললেন, ‘এতে আমার কি দোষ বলুন? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম কেবল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে। মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মৃত্যু হলো। পিতৃতর্পণ করার সময়ই তো পেলাম না। ‘ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের সত্যিই কোনো দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথামতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপ বিমুক্ত হলো। যে পক্ষকাল সময় কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন। সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে।
সেই থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই তর্পণের প্রথা চালু হয়। এই মহালয়া অমাবস্যা তিথিটি কেবল পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের তিথি হিসেবে নির্দিষ্ট হওয়ায় এদিন প্রাতে অনেকেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে শ্রদ্ধার সহিত তাদের প্রয়াত পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ করে থাকেন। আর পিতৃপুরুষগণ তাদের সন্তানদের কাছ থেকে জল পেয়ে তাদেরকে আশীর্বাদ করে থাকেন বলে বিশ্বাস করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ।