বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং সারাদেশে সুস্থ নাট্যচর্চার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে
চাঁদপুরে নাট্যাঙ্গনের প্রতিবাদ সমাবেশ
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং সারাদেশে সুস্থ নাট্যচর্চার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে গত ২৩ জুন শুক্রবার বিকেল ৪টায় চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডস্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্মুখে চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর ড্রামার সভাপতি তপন সরকার।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য (চট্টগ্রাম) ও অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি শহীদ পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি হারুন আল রশীদ, অনুপম নাট্যগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ মণ্ডল, স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম আর ইসলাম বাবু প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা থিয়েটারের সভাপতি তবিবুর রহমান রিংকু, বাবুরহাটস্থ অরূপ নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি মহসীন খান ও সাধারণ সম্পাদক সাধন দত্ত, নটমঞ্চের সভাপতি পিএম বিল্লাল, অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি জয়রাম রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলমগীর ও মানিক দাস, নাট্যশিল্পী হৃদয় কর্মকার ও তীর্থ ভৌমিক, চাঁদপুর ড্রামার সাধারণ সম্পাদক মানিক পোদ্দার ও নাট্যশিল্পী পলাশ মজুমদার, অনুপম নাট্যগোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক কার্তিক সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাত মণ্ডল, নটমঞ্চের কর্মকর্তা আঃ খালেক বিশ্বাস, স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম, নাট্যশিল্পী সপ্তমী দত্তসহ অসংখ্য নাট্যশিল্পী।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত সদস্য সংগঠন চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে সর্ববৃহৎ জাতীয় মোর্চা বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান। এ সংগঠনটি পরিচালিত হয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। ফেডারেশনের বর্তমান কেন্দ্রীয় পরিষদ অর্ধশতাধিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যে স্বপ্নময় অভিযাত্রা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিল, তন্মধ্যে বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাস আমাদের জীবন থেকে দুই বছরের অধিক সময় কেড়ে নেয়। তাই স্বাভাবিকভাবে আমাদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা ছেদ পড়ে। অন্যদিকে এ বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল কামাল বায়েজীদের একগুঁয়েমি ও অশৈল্পিক এবং কুক্ষিগত করে রাখার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন যেখানে বাংলাদেশের নাট্যচর্চাকে বেগবান এবং কার্যকরভাবে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে একটি কুচক্রী মহল বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে অকার্যকর হিসেবে আখ্যায়িত করার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং নাট্যকর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার কাজে লিপ্ত থেকেছে। আমরা এ অপচেষ্টার নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পোস্ট প্রদান করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা এবং বিভিন্ন প্রকার সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য প্রদান করে আসছে ওই কুচক্রী মহলের কতিপয় নেতা। মূলতঃ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান মহান মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে। এর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কার্যক্রম দেশব্যাপী পরিচালিত হয়ে আসছে।
বক্তাগণ বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় ব্যক্তির পক্ষে একটি সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এ ধরনের বিবৃতি বা সংবাদ প্রকাশ করার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারে না। যে সকল সংগঠনের সাথে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই তাদের এ ধরনের বিবৃতি প্রদান করার যৌক্তিকতার বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। নাট্য আন্দোলন ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনকে নিয়ে অর্বাচীন উক্তি নাট্যচর্চাকে অবমাননার সামিল বলে মনে করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন।
বক্তাগণ আরো বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত সদস্য সংখ্যা সারা বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিনশ’র অধিক (সহযোগী সংগঠনসহ)। নাট্যদলগুলোর দায়িত্ব হলো বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে হলে অথবা দ্বিমত পোষণ করলে, ব্যক্তিগতভাবে অথবা পত্র মারফত বিষয়টি জানা। এটিই হচ্ছে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন তথা নাট্য আন্দোলনবিরোধী পোস্ট দেয়া সংগঠন বিরোধী তৎপরতার সামিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন থেকে সেক্রেটারী জেনারেল পদে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কামাল বায়েজীদকে পুনর্বহাল করার দায়িত্ব নিয়েছেন কতিপয় ব্যক্তি। এটি সকলেরই জানা, সেক্রেটারী জেনারেল কামাল বায়েজীদের বিরুদ্ধে ২৯টি গুরুতর অপরাধ এবং ফেডারেশনের তহবিল তছরূপ করার দায়ে কেন্দ্রীয় পরিষদের কয়েক দফা সভার মাধ্যমে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এবং ৪৩জন কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্যদের স্বাক্ষরে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কামাল বায়েজীদ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মোট ১,২৪,৫১,৩৭৭.০০ (এক কোটি চব্বিশ লক্ষ একান্ন হাজার তিনশত সাতাত্তর) টাকা কোনো প্রকার অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংক থেকে উত্তোলন এবং ব্যয়, সংগঠনের তহবিল থেকে নিজের ব্যাংক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার, কেন্দ্রীয় পরিষদকে অবজ্ঞা ও অসম্মান, কেন্দ্রীয় পরিষদের গৃহীত সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন না করা, সম্পাদকদের কাজে বাধা প্রদান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেন্দ্রীয় পরিষদকে হেয়প্রতিপন্ন করে পোস্ট প্রদান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের গঠনতন্ত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন ধারার শব্দ, লাইন ও অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করে নিজের মত করে সাজিয়ে একক সীল ও স্বাক্ষর প্রদান করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, শিল্পী কল্যাণ ফান্ডের ব্যাংকের কোনো প্রকার হিসাব প্রদান না করা, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদানকৃত ১০টি নাট্যদলের প্রণোদনার টাকা বন্টন না করা, করোনা অতিমারীর সময় বাংলাদেশের নাটকের ৮০জন নেপথ্যকর্মীকে মানবিক সাহায্য প্রদানের সিদ্ধান্ত একনায়কতান্ত্রিকভাবে বাতিল করার কারণে কেন্দ্রীয় পরিষদের ৪৩ জনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, আমরা বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত চাঁদপুরের নাট্যসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ এ মর্মে প্রতিবাদ জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মত বৃহৎ নাট্যমোর্চাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন এবং অশোভন আচরণ ও হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন তাদেরকে আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, তৃণমূলের নাট্যসংগঠনগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের নাট্যচর্চার অন্যতম প্লাটফর্ম। সুতরাং সাধু সাবধান!