ডাকাতিয়ায় ট্রলার ডুবিতে পাঁচ শ্রমিক নিহত
ঘাতক বাল্কহেড জব্দ ॥ আটক ৪
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মুন্সিবাড়ির সম্মুখে ডাকাতিয়া নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঘাতক বাল্কহেড জব্দ ও ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছেন : ইউনুস, আবুল বাসার, দিদার ও জাবেদ। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায়।
সরেজমিনে জানা যায়, চাঁদপুর সদরের রামচন্দ্রপুর চর থেকে ফরিদ মাঝির মাটির ট্রলার মাটি নিয়ে মৈশাদীর এমএস ব্রিক ফিল্ডের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আর চাঁদপুর থেকে বালুভর্তি এমভি ইকবাল হোসেন-১ নামের বাল্কহেড দ্রুতগতিতে রং সাইড দিয়ে হাজীগঞ্জের উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। ভোরবেলা ঘনকুয়াশার কারণে কিছু দেখা যায় নি। বালুবাহী বাল্কহেড দ্রুতগতিতে এসে মাটির ট্রলারের ওপর উঠিয়ে দেয়। সাথে সাথে ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ট্রলারে থাকা ১১ জন মাটি কাটার শ্রমিকের মধ্যে ৭ জন শ্রমিককে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় জীবিত ও ১ জনকে মৃত উদ্ধার করা হলেও ৩ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃত ১ জন শ্রমিককে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্মরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিনজকে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা মৃত উদ্ধার করেন।
নিহতরা হচ্ছেন : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শুশুন্ডা গ্রামের আউয়াল মাঝি (৫০), বৈরাপুরী গ্রামের মোবারক (৩৫), তিতাস উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের নাছির (৩৩), মুরাদনগর উপজেলার মাদবপুর গ্রামের আল-আমিন (৩৫) ও তিতাস উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের নজরুল ৩২)। এরা প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটায় ইট তৈরির জন্যে বিভিন্ন চর থেকে মাটি কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এদের মধ্যে আউয়াল মাঝি হচ্ছেন উক্ত ট্রলারের মালিক। দুর্ঘটনার পরপরই চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস, চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ, চাঁদপুর নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে যায়।
চাঁদপুর নৌপুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, নৌ দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুজন হলেন চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ ও হরিণা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। ঘাতক বাল্কহেড জব্দ ও ৪ জনকে আটক করেছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
চাঁদপুর মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়।
আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে নিহতদের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক সাহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রলার ডুবির ঘটনা শুনে টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এক ঘণ্টার মধ্যে নিখোঁজ ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করাসহ ৫জনের মৃতদেহ নৌ পুলিশের নিকট হস্তান্তর করি।
বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর নদীবন্দর কর্মকর্তা কায়সারুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডসহ অন্যান্য ট্রলার সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত চলাচল না করার জন্যে স্থায়ী আদেশ রয়েছে। নৌযানগুলো এ আদেশ মানে না।
এ ব্যাপারে বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল বলেন, দুর্ঘটনার কথা শুনে ঘটনাস্থলে যাই। এটা একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করি। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।
স্থানীয় আল-আমিন মুন্সী, জাকির মুন্সী ও ভুলু মুন্সী জানান, সকালে নদীতে ডাকচিৎকার শুনে এসে দেখি একটা মাটির ট্রলার ডুবে গেছে। সাথে সাথে নৌকা নিয়ে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এদের মধ্যে ১ জন মারা যান। আহত ১ জনকে হাসপাতালে নিলে মারা যান। দুর্ঘটনার হোতা বাল্কহেড থামানোর চেষ্টা করলে তারা না থামিয়ে আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। তাদের বাল্কহেড থামিয়ে পাড়ে নিয়ে আসি।
ট্রলারের বেঁচে যাওয়া শ্রমিক ফরিদ জানান, আমরা মাটি নিয়ে ব্রিকফিল্ডের উদ্দেশ্য যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা বাল্কহেড আমাদের ট্রলারের উপর উঠিয়ে দেয়। এতে আমাদের ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় ডাক-চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন আমাদেরকে উদ্ধার করে। এর মধ্যে একজনকে মৃত উদ্ধার ও হাসপাতালে নেয়া হলে একজন মারা যান। ডুবুরিরা এসে বাকি তিনজনকে মৃত উদ্ধার করেন।
স্থানীয়রা জানান, ডাকাতিয়া নদীতে চলাচলকারী বালুবাহী বাল্কহেডগুলো প্রতিযোগিতা দিয়ে চলাচল করে থাকে। কে কার আগে যাবে সেদিকে খেয়াল রেখে দ্রুত গতিতে আসা যাওয়া করে থাকে। প্রায় সময় এরা ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।