চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণ কাজ শেষের দিকে


আইসিইউ বেড এবং করোনা রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার বদৌলতে এখন আড়াইশ' বেডের পুরো হাসপাতালটিই (সকল ওটিসহ) অক্সিজেন প্লান্টের আওতায় চলে আসছে। লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট থেকেই পুরো হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। সিলিন্ডার অক্সিজেনের ব্যবহার আর হবে না। এখন কুমিল্লা থেকে কয়েকদিন পর পর সিলিন্ডার বোতল পুরিয়ে অক্সিজেন আনতে হয়। নির্মাণাধীন অক্সিজেন প্লান্টটি চালু হয়ে গেলে আর কুমিল্লা যেতে হবে না। হাসপাতাল তো বটেই পুরো জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে এই লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট থেকে। আর এটি হয়ে গেলে বাংলাদেশের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি জেলার মধ্যে চাঁদপুর জেলাও হয়ে যাবে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে অন্যতম জেলা। আর এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বদান্যতায়।
করোনাভাইরাস উচ্চ সংক্রমণে আক্রান্তদের এবং অন্যান্য রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজ শেষের দিকে। এ কাজটি করার দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হিসেব মতে আগামী মাসের অর্থাৎ জুলাইর প্রথম সপ্তাহের যেকোনো দিন কর্তৃপক্ষ এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেয়ার কাজ চালু করতে পারবে।
জানা যায়, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্যে কুমিল্লা থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। গত বছর থেকে করোনা মহামারী দেখা দেয়ায় এ রোগীদের জন্যে প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। একসময় অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়। এ সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি নিজে উদ্যোগী হয়ে গত বছর হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোজনের ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট অনেকটা কেটে যায়। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের হার ভয়ানকভাবে বেড়ে গেলে আবারো অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়। তখনি ডাঃ দীপু মনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতাল অঙ্গনে স্থায়ীভাবে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। যেটির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। রোগীদের চিকিৎসা সেবায় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বসানো হচ্ছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলি লিটারের লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট বা ট্যাঙ্ক।
এ ট্যাঙ্কটি বসানোর কাজে অর্থায়ন করছে ইউনাইটেড ন্যাশন ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ইমার্জেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এবং বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজটি করার দায়িত্ব পায় ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গত ২ মাস পূর্বে এ প্লান্ট বা ট্যাঙ্ক বসানোর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করে। বর্তমানে এটির কাজ শেষ পর্যায়ে। শুধু তাই নয়, এ প্লান্ট বা ট্যাংক থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের জন্যে যেখানে যেখানে অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন সে সকল জায়গায় ইতিমধ্যে অক্সিজেন সংযোগ লাইন বসানোর কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। অর্থাৎ হাসপাতালে আর সিলিন্ডার অক্সিজেনের ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলি লিটারের ধারণ ক্ষমতার লিকুইড অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসানোর অবকাঠামো এটি। মূল প্লান্টটি হচ্ছে ৬ হাজার লিটারের। এটি যখন অক্সিজেনে রূপান্তর হয় তখন ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলি লিটারে রূপান্তর হবে। আমরা দৃশ্যমান যে ভবনটি করেছি এতেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি। হাসপাতালে রোগীদের প্রয়োজনে যে সকল রুমে অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে সে সকল রুমের সংযোগ কাজ (সকল ওটি রুমসহ) আমরা প্রায় ৯০ ভাগ শেষ করেছি। কিন্তু ট্যাংকের স্থানটি হলো মূল। তিনি জানান, ভবনের ভেতরে এবং বাহিরে প্রতিদিন যা কাজ করা হবে, তা কখনো শেষ করে আবার ঐ কাজ না করেই স্থানটির ছবি তুলে বিশেষজ্ঞ বা এক্সপার্টদের দেখিয়ে কাজ করতে হয়। এক কথায় প্রতিটি কদম এখন আমাদেরকে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে সময়টা একটু বেশি লাগলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে এটি হস্তান্তরের যে নির্দেশনা রয়েছে, ইনশাআল্লাহ আমরা নির্ধারিত সময়ে তা হস্তান্তর করতে পারবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যেদিন হস্তান্তর করবো ঐদিন থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটি চালু করতে পারবে। তাই সবমিলিয়ে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের যেকোনো দিন এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, চাঁদপুরবাসী সত্যি সৌভাগ্যবান। যা ছিলো স্বপ্ন তা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। সত্যি কথা বলতে কী, এটি সম্ভব হয়েছে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।
তিনি আরো বলেন, এটি চালু হলে একদিকে সময় অন্যদিকে অর্থ সংকোচন হবে। শুধু তাই নয়, লিকুইড প্লান্টটি চালু হলে আমাদের জেলার বর্তমান চাহিদা পূরণ করে ৪-৫ মাসের অক্সিজেন মওজুদ থাকবে। এছাড়াও এখান থেকে অন্য জেলায় অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতি ১ম ধাপের শুরুতে চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্তদের অক্সিজেনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোজনের ব্যবস্থার পাশাপাশি এটি স্থাপনের ব্যবস্থা করে দেন। তিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রথমে ২৫ বেড পরবর্তীতে ৩০ বেডের আইসোলেশন বিভাগের ব্যবস্থা করেন। করোনা শনাক্তকরণে সমস্যা সমাধানের জন্যে নিজস্ব অর্থায়নে তিনি এবং তাঁর ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে চাঁদপুরে স্থাপন করেন কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষাগার (আরটিপিসিআর ল্যাব)। ইতিমধ্যে ৩টি আইসিইউও বেড অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন। সর্বশেষ অক্সিজেন প্লান্ট স্থায়ীভাবে বসানোর মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে পুরো এগিয়ে গেলো চাঁদপুর। এটি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির বদান্যতায় সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন জেলাবাসী।