টাকা হাওলাত চেয়ে বিফল : সংঘবদ্ধ হামলায় ব্যাংক গার্ডের মৃত্যু


সংঘবদ্ধ বখাটেদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চারদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মারা গেলেন চাঁদপুর শহরস্থ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের নাইট গার্ড মোঃ সুমন খান (৩৫)। গতকাল ৯ এপ্রিল শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি পুরাণবাজার রঘুনাথপুর কেজি স্কুল সংলগ্ন হাজী করিম খান বাড়ির মৃত আঃ কাদির খানের ছেলে। চাঁদপুর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে নাইটগার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। মৃত সুমনের স্ত্রীর নাম রুনা। শুভ (৮) নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে তাদের। শুক্রবারই ময়না তদন্ত শেষে সুমনের মরদেহ চাঁদপুরে নিজ বাড়িতে আনা হয়।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাঁদপুর সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুর রশিদ, ওসি (তদন্ত) বিজন কান্তি বড়ুয়া নিহত সুমনের বাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে পুরাণবাজার ফাঁড়ির পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তুচ্ছ ঘটনায় স্থানীয় সংঘবদ্ধ চিহ্নিত গ্যাংয়ের নির্মম মারধরে এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা এ হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তোফায়েল গাজীর রঘুনাথপুর বেপারী বাজারস্থ বাড়িতে হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানেও যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
নিহত সুমনের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মোঃ আবদুল হক খান মিন্টু বলেন, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওয়াপদা রাস্তার উপরে আমার ছোটভাই নিহত সুমনের কাছ থেকে একই এলাকার গাজী বাড়ির দেলোয়ার গাজীর ছেলে নাজমুল গাজী কিছু টাকা হাওলাত চায়। টাকা হাওলাত না দেয়ার কারণে তাদের মধ্যে বাক-বিত-া হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন তাদেরকে শান্ত করলে তারা চলে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার ভাই ওই স্থানে আমাদের বাড়ির চাচাসহ অন্যদের সাথে কথা বলছিলো। ঠিক ওই সময় নাজমুল দলবলসহ এসে সুমনের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে।
ঘটনার যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাদের বরাত দিয়ে মিন্টু খান আরো জানান, নাজমুলের নেতৃত্বে মোস্তফা হাজীর ছেলে জিহাদ হাজী, খোকন গাজীর ছেলে তামিম, বাচ্চু গাজীর ছেলে তোফায়েল, সাজু গাজীর ছেলে সাগর, মিজান গাজীর ছেলে সুফিয়ান, জাহাঙ্গীর বেপারীর ছেলে লিমন বেপারীসহ আরো ১০ থেকে ১২জন সুমনের উপর দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন প্রথমে সুমনকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর হাজী মহসীন রোডস্থ মিডল্যান্ড হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তার অবস্থার অবনতি হয়। ৭ এপ্রিল বুধবার মিডল্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলে তাকে রেফার করে। সেখানে দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সে মারা যায়।
রঘুনাথপুর এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঘটনার সাথে জড়িত যুবকরা এর আগেও এলাকায় এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মামলার আসামীও আছেন। তারা অনেকে মাদকের সাথে জড়িত। প্রায় সময় তারা ছোটখাট বিষয় নিয়ে এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাঁদপুর সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কী নিয়ে এ হত্যাকা- সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। অবশ্যই মামলা হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জানতে পেরেছি সুমন খান নামে একজন মারামারির ঘটনায় নিহত হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদেরকে আগে ঘটনাটি জানায়নি। তারা এজহার দিলে বিস্তারিত জানা যাবে। এর চাইতে বেশি কিছু এখন বলা যাচ্ছে না।