১৬২ জন মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
মুক্তিযোদ্ধাদের একনজর দেখার জন্যে এ আয়োজন
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক থাকবে : এসপি মিলন মাহমুদ


বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে চাঁদপুরের ১৬২জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল ১১টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদানসহ এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, যুদ্ধকালীন বিএলএফ কমান্ডার হানিফ পাটোয়ারী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বরকন্দাজ, সহকারী কমান্ডার ইয়াকুব আলী মাস্টার, সরকারী কমান্ডার মহসিন পাঠান।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মুজিবুর রহমান, নৌ-কমান্ডো বাচ্চু মিয়া পাটোয়ারী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সরকারী কমান্ডার রৌশন আলী বেপারী, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, শফিকুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, মৃনাল কান্তি সাহা, আবুল হাশেম, মোঃ শহিদুল্লাহ প্রমুখ। গান পরিবেশন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার ছেলে মাহাতাব হোসেন রাসেল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সানাউল্লাহ খান এবং গীতা পাঠ করেন বিমল চন্দ্র দে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তাদের মাঝে সম্মাননা বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তাঁর বক্তব্যে বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর সময়েও মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থ দেখতে পাওয়াটা সৌভাগ্যের। মুক্তিযোদ্ধাদের একনজর দেখার জন্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন। কারণ, যাদের জন্যে আমাদের এই স্বাধীনতা, যারা জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছেন, দেশের জন্যে কতটুকু নিবেদিতপ্রাণ হলে তারা ত্যাগ স্বীকার করার জন্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নিজের জীবনের কথা, পরিবার-পরিজনের কথা ভাবেননি। তারা দেশের স্বাধীনতার কথা ভেবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দেশকে স্বাধীন করার জন্যে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমার আপনজন। যখনই প্রয়োজন মনে হবে মুক্তিযোদ্ধারা আমার কাছে আসবেন, তাদের জন্যে আমার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছেন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরে যুদ্ধকালীন সময় যে জাহাজটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছিলো, সেটি এখন নারায়ণগঞ্জে রয়েছে। চাঁদপুরে সেই জাহাজটি নিয়ে আসা হবে এবং প্রেসক্লাবের পেছনের জায়গা একোয়ার করা হয়েছে, সেখানে মিউজিয়াম গড়ে তোলা হবে। সেটির কাজ আমরা শুরু করেছি।
তিনি বলেন, এই যুদ্ধজাহাজকে ঘিরে মিউজিয়ামের পাশাপাশি এখানে একটি টুরিস্ট প্লেস হবে। যাতে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।
পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। তাঁদের ঋণ কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না। এই ঋণ আমরা কোনোদিন কোনো কিছু দিয়ে শোধ করতে পারব না।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক খোলা হবে। আপনাদের সেবার জন্যে আমার দরজা সবসময় খোলা থাকবে। যে কোনো প্রয়োজনে যে কোনো সময় আপনারা আমাকে স্মরণ করবেন, ইনশাল্লাহ আমি আপনাদের পাশে থাকব।