বীর মুক্তিযোদ্ধা, শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী চির বিদায় নিলেন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে


মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পড়ন্ত বিকেলে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চির বিদায় নিলেন শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী (ইন্না...রাজউন)। ২৬মার্চ বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকাঅবস্থায় ঢাকাস্থ সেন্টার হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলেসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর মৃত্যুর সংবাদটি শাহরাস্তিতে এসে পৌঁছলে উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে তার মৃত্যু সংবাদটি আসলে তৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসন শোক জানিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করে দেয়। বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা সংক্ষিপ্ত করে নেতা-কর্মীরা তার বাড়িতে ছুটে যান। ঢাকায় প্রথম জানাজা শেষে রাতেই তার মরদেহ ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের উনকিলায় নিয়ে আসা হয়। সকাল ১০টায় শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ মাঠে তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা পরিষদ মাঠে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। জানাজার পূর্বে শোকাহত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সমাজিক ব্যক্তিবর্গ ও মুক্তিযোদ্ধাগণ তার প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ও তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
জানাজার পূর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী কামরুজ্জামান মিন্টুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মহিলা যুবলীগের নেত্রী মরহুম ফরিদ উল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী নাছরিন জাহান সেফালী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার, পৌর মেয়র হাজী আব্দুল লতিফ ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম পাটওয়ারী লিটন। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ মরহুমের জানাজায় অংশ নেন। জানাজায় ইমামতি করেন মুফতি মাওঃ সলিমুল্লাহ। বেলা ২টায় মরহুমের তৃতীয় জানাজা তাঁর গ্রামের বাড়ি উনকিলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেন। মরহুমের তৃতীয় জানাজা শেষে তাঁর নিজ বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী ব্যবসা, রাজনীতি ও যুদ্ধে সফল একজন মানুষ। তিনি হাসি মাখা মুখে নেতা-কর্মীদের মন জয় করে রাখতেন। ১৯৭১ সালে তিনি অস্ত্রহাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রায় ২১ বছর বয়সে তিনি বৃহত্তর রায়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। দুই মেয়াদে তিনি প্রয় ১০ থেকে ১২ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা শহরে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মগবাজারের থ্রি স্টার হোটেল সকলের কাছে অতি পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তাঁর স্ত্রী নাছরিন জাহান শেফালী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদিকা।
ফরিদ উল্ল্যাহ চৌধুরী ২০০৫ সালে শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত হন, ২০০৭ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন, ২০১২ সালের দলীয় কাউন্সিলে তিনি মরহুম হুমায়ুন কবির মজুমদারকে পরাজিত করে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি এ পদে থেকেই মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথম বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
বিভিন্ন মহলের শোক
শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উল্ল্যাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শাহরাস্তি উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্টজন। শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান মিন্টু, উপজেলা বিএনপির পক্ষে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ আয়েত আলী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম পাটওয়ারী লিটন। আরো শোক জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন মিয়াজী, সাবেক পৌর মেয়র মোঃ মোস্তফা কামাল, ইঞ্জিনিয়ার মুকবুল হোসাইন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার শাহজাহান পাটওয়ারী, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের পক্ষে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ আবুল হোসাইন, গোল্ডমার্ক ওভারসিস লিঃ-এর পরিচালক আবু নাছের ওয়াজেদসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।