• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শিল্পপতি জালাল আহমেদ এবার অসহায়দের বসত ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন

প্রকাশ:  ১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:৩৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কাতারের শিল্পপতি জালাল আহমেদ (৫৫) এবার বসতঘরহীন গরিব ও অসহায়দের থাকার জন্য বসতঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন। এর আগে প্রচারবিমুখ জালাল তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে গরিব ও অসহায়দের জন্য রিকশা ভ্যান ও বসতঘরের জন্য প্রায় ৬ হাজার বান্ডেল উন্নত মানের ঢেউ টিন বিতরণ করেছেন।

সাদামাটা মানুষ শিল্পপতি জালাল আহমেদ। চাল চলনেও নেই কোনো হাঁকডাক। ফরিদগঞ্জের গরিব ও অসহায়দের স্বার্থে তার নিজের অর্থ ব্যয় করে দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ। উপজেলার সর্বত্র এমনটা মনে করছেন অনেকেই।

নিরহংকারী ও উদার মানসিকতা সম্পন্ন এই জালাল আহমেদের বাড়ি হচ্ছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বড়ালী গ্রামে। কাতারে তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও সততার গুণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। খুব সহজেই সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিশে যান তিনি। বাংলাদেশে শিল্পকারখানা গড়ে তুলে দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সিআইপি মর্যাদাও লাভ করেছেন।

জালাল আহমেদ কারো কাছে গরিবের বন্ধু, আবার কারো কাছে দানবীর কিংবা সমাজসেবকও বটে। বৈশি্বক করোনা পরিস্থিতিতে মরুর দেশ কাতার ও নিজের উপজেলা ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন অসহায় ও কর্মহীন মানুষদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামের প্রয়াত হাজী আব্দুর রশিদের ৭ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে জালাল আহমেদ ২য় সন্তান। তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী। অভাব অনটনের মধ্যে কষ্টে দিনযাপন করে জালাল আহাম্মেদ ডিগ্রি পাস করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে মরুর দেশ কাতারে পাড়ি জমান। সে দেশে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সততার বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। এক পর্যায়ে কাতারে মার্বেল পাথরের ব্যবসা করার সুবাদে সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে তুলেই ক্ষান্ত হননি, নিজের দেশ বাংলাদেশের খুলনার মংলা পোর্ট এলাকায়ও শিল্প কারখানা গড়ে তোলার সুবাদে শত শত লোককে চাকুরি দিয়েছেন। গরিবের জন্য তার অগাধ ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে বিভিন্ন সময় নানা দান অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন।

দেশে জালালের কার্যক্রমের একাংশ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যবসায়ী সফিকুর রহমান জানান, পৌর এলাকা ও ১৫ ইউনিয়নের অসহায় ও গরিবের জন্য জালালের ব্যক্তিগত অর্থায়নে বসতঘর নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকায় ১৫টি বসতঘর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। উপরে টিন দিয়ে ৩/৪ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর নির্মাণে প্রায় ৪/ ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে।

৪ কক্ষ বিশিষ্ট নতুন ঘর পেয়ে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বড়ালী গ্রামের হতদরিদ্র মোঃ কবির বলেন, গত রমজান মাসে আমাদের জালাল ভাই ঘুরতে ঘুরতে আমার বাড়ি এসে দেখেন আমার ঘর নেই, জরাজীর্ণ একটি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এ দৃশ্য দেখে জালাল ভাই তাঁর নিজস্ব টাকায় আমার জন্যে ঘরটি নির্মাণ করে দিতে দায়িত্ব দেন তাঁরই বড় বোন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজুদা বেগমকে।

জালালের ছোট ভাই ফরিদগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন সাবু এক পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, তার ভাইয়ের অর্থায়নে বিগত বছরগুলোতে অনেক অসহায়ের চিকিৎসা, বিয়ের খরচ সহ বিভিন্ন দান অনুদান দেয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার বান্ডেল উন্নতমানের ঢেউটিন ও ৩শ রিকশা বিতরণ এবং বর্তমানে পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নে অসহায়দের মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে পর্যায়ক্রমে বসত ঘর নির্মাণ কাজ।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজুদা বেগম বলেন, সত্যিকার অর্থে আমরা গরিবের ঘরে জন্ম নিয়ে এক সময় বহু কষ্টে দিনযাপন করতাম। তাই গরিবের কষ্ট আমার ভাই জালাল প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে বিধায় সে সব সময় অসহায় ও গরিবের স্বার্থে উদার মনেই সহযোগিতা করে আসছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে কোন্ দল করে তা কখনোই আমার ভাই বিবেচনা না করে শুধু অসহায় ও গরিব মানুষের স্বার্থে গোপনে বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছে।

এলাকাবাসী বলছে, শিল্পপতি জালাল আহমেদের মতো দেশের সকল শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তি অসহায় ও গরিবের স্বার্থে আন্তরিক হলে অসহায় মানুষদেরকে আর মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে না।

সর্বাধিক পঠিত