• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

প্রভাবশালীর প্রতিষ্ঠান না সরানোয় ব্যবসায়ীদের লিখিত অভিযোগ

ফরিদগঞ্জের কালিরবাজারে স্থাপনা ভেঙ্গে অবশেষে রাস্তা হচ্ছে

প্রকাশ:  ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বাজারের রাস্তা সরু থাকার কারণে প্রায়শই যানজট লেগে থাকতো। ফলে বাজার ব্যবসায়ী, পথচারী এবং স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নদী ও ঘাটলা থাকলেও তা বেদখল হয়ে যাওয়ায় ইতিপূর্বে ঘটা বেশ ক'টি অগি্নকা-ের ঘটনায় পানি স্বল্পতার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়। অবশেষে বাজার ব্যবসায়ীদের চাপে লিজ নিয়ে স্থাপনা গড়ে তোলা কিছু অংশ ভেঙ্গে রাস্তা তৈরি হচ্ছে। তবে এখনো জনৈক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর কারণে উদ্ধার হয়নি নদীর ঘাটলাসহ কিছু অংশ। ফলে বাধ্য হয়ে বাজারের ব্যবসায়ী কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার কালির বাজারের ।

জানা গেছে, ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের কালির বাজারটিতে প্রায় সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারের দুই পাশে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তফা বেপারীসহ লোকজন জানান, কালির বাজারে এক সময় নৌকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল আনা নেয়া করতো। বাজারের পশ্চিম পাশে নদীর উপর ঘাটলা ছিল। সেই ঘাট দিয়ে মালামাল উঠানামা হতো। স্থানীয় লোকজন নামাজের ওজুসহ নানা কাজে তা ব্যবহার করতো।

বিগত বিএনপি জোট সরকারের সময় রাস্তার পাশের নদীর পাড় লিজ নিয়ে একের পর এক দোকানপাট গড়ে উঠে। ফলে দখল হয়ে যায় নদীর ঘাটলাসহ অধিকাংশ স্থান। বিগত কয়েক বছরে কালির বাজারে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ অগি্নকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুন নিভাতে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারেনি কেউ। ফলে প্রচ- আর্থিক ক্ষতি হয় ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া বাজারের সড়কগুলো কালের বিবর্তনে কালক্রমে প্রশস্তকরণ প্রয়োজন হলেও স্থান না থাকায় তা হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কালির বাজারের উপর ৩৭৩ মিটার সড়কটি আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৭৭লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। ঠিকাদার টিপু সরকার জানান, ১৮ফুট চওড়া রাস্তা করার জন্যে তিনি চুক্তিবদ্ধ হলেও বাজারের পশ্চিম অংশে নদীর পাড় ১৪ফুট ছিল। এই বিষয়টি বাজার ব্যবসায়ী কমিটি ও উপজেলা ভূমি অফিসকে জানালে তারা নদীর পাড়ে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৬ফুট করে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশনা দেয়।

দোকান মালিকদের মধ্যে বেশিরভাগই ভাড়া দিয়ে চলছে। অভিযোগ রয়েছে, একজন লিজ নিয়ে আরেকজনের কাছে বিক্রি বা ভাড়া দিয়েছে লিজ গ্রহীতা। আবার কোনো কোনোটি বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। বর্তমানে ১৪টি দোকানের লিজ গ্রহীতারা হলেন : মোস্তফা দেওয়ান, মোস্তফা পাটওয়ারী, ডাঃ করিম ,আবুল কালাম, লিটন দেওয়ান, এমদাদ ভূঁইয়া, খোরশেদ আলম, মোস্তফা মৃধা, আনোয়ার উল্যা, আব্দুল মজিদ, হারুন, সেকান্তর বেপারী, সেতারা বুলবুল ও জাকির খান।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ের উপর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৪ জন ব্যবসায়ীর মধ্যে ১৩জন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৬ফুট ভেঙ্গে নিলেও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি জাকির খান নিজের প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গেন নি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবসায়ীরা গত ১৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগ, বাজারের ঘাটলার উপর ওই স্থাপনা থাকলেও তার উপর জাকির খান স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তাছাড়া সর্বশেষ রাস্তা বর্ধিতকরণের কারণে তাকে ৬ফুট ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলেও তা কাজে আসেনি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২ বছর যাবত লিজ দাতা প্রতিষ্ঠান ওই ঘরগুলোর লিজ নবায়ন করছেন না। ফলে এগুলো অবৈধ স্থাপনা। নদী রক্ষা, ঘাটলা উদ্ধার ও সড়ক প্রশস্তকরণের জন্যে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি জাকির খান জানান, তিনি বিগত বছর অগি্নকা-ের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন যদি রাস্তার জন্য তার দোকানটি ভাঙ্গার প্রয়োজন হয়, তবে তিনি তা সরাবেন। তাই আপাতত তিনি স্থাপনা ভাঙ্গেন নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার জানান, সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের ৬ফুট করে ভূমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ও চিহ্নিত করে দিয়ে এসেছি। তারা সেমতে কাজ করছে। যারা তা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও শিউলী হরি এসিল্যান্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বাধিক পঠিত