• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় ভৌমিক

মুক্তিযুদ্ধকালে চাঁদপুর বড়স্টেশন ছিলো জল্লাদখানা

প্রকাশ:  ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৫৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি অজয় কুমার ভৌমিক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকালে চাঁদপুর বড়স্টেশন ছিলো জল্লাদখানা। আর এই জল্লাদখানার নায়ক ছিলো মেজর শওকত। তার জঘন্নতা, নির্মমতা এই চাঁদপুরবাসী দেখেছে। বাঙালিদের ধরে এখানে এনে রেলের ওয়াগনগুলোতে ঢুকিয়ে ভোররাতের দিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়া হতো। রেলের ডাকবাংলোটি ছিলো অগণিত মেয়ের ধর্ষণের জায়গা। এ নির্মম ইতিহাস মানুষকে জানাতে হবে। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, মরণের ঝুঁকি নিয়ে সেদিনের সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারের কথা আজো মনে পড়ে। যার লেখনীকে পাকিস্তান জমের মতো ভয় করতো। সাংবাদিকরা সমাজের আয়না এটিই সত্যি। সাংবাদিকদের লিখনীর কারণেই সেদিন জনমত গড়ে উঠেছিলো।

অজয় ভৌমিক বলেন, প্রকৃতভাবে বুদ্ধিজীবীদের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা শুরু হয়েছিলো তা কিন্তু নয়, বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয়েছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এরপর তারা এক এক করে ২৫ মার্চ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ জন শিক্ষককে হত্যা করে। ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্রদের হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, সঙ্গীতশিল্পী আলতাফ মাহমুদসহ বহু শিক্ষক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিক, লেখক, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুণীজনকে হত্যা করা হয়। পাক হানাদাররা শুধু গুলি করে হত্যা করেছে তা নয়, বুটের আঘাতের রক্তাক্ত করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে জাতির সূর্যসন্তানদের হত্যা করা হয়েছিলো।

 


তিনি আরও বলেন, শেষ মুহূর্তে কঠিন যুদ্ধ চলছে। মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে চলছে। আমেরিকার সপ্তম নৌবহর আসছে হানাদার বাহিনীকে উদ্ধার করার জন্যে। কিন্তু আমেরিকা নিয়াজিকে বলেছিলো, আমাদের জন্যে বসে থেকো না। নিজেরা বাঁচতে চাইলে আত্মসমর্পণ করো। সেদিন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে, রংপুর, চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনীর পতন। এ মুহূর্তে একটি স্ট্রাজিজি নেয়া হয়েছিলো, যুদ্ধ ছাড়া যদি আত্মসমর্পণ করে তাহলে অনেক মানুষকে বাঁচানো যাবে। তার জন্যে একটু অপেক্ষা করা হচ্ছিলো। ঠিক সেই মুহূর্তে রাজাকার, আলবদররা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে হত্যাযজ্ঞ চালায়।

তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবীদের তালিকা যাছাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। যেনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকার মতো না হয়।

অজয় ভৌমিক বলেন, সেদিন বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলো। সেদিন মানুষের মৃত্যুভয় ছিলো না। প্রত্যেকটি মানুষ পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো।

তিনি বলেন, এ দেশ কোনোদিনই স্বাধীন ছিলো না। অনেকে বলেন নবাব সিরাজুদ্দৌলা স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব ছিলেন। এ কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। নবাব সিরাজুদ্দৌলা বাংলার মুর্শিদাবাদের মসনদে বসেছিলেন। তিনি বাংলায় কথাও বলতে জানতেন না। তিনি বাংলার নবাবও ছিলেন না। কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কারণে নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে আমরা বাংলার নবাব বলেছি। সিরাজুদ্দৌলাকে নিয়ে নির্মিত ছবি মুক্তিযুদ্ধে বিরাট উপকার করেছে। মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বরই বাংলার মানুষ স্বাধীন হয়েছে। এর আগে আমরা কোনোদিনই স্বাধীন ছিলাম না।

সর্বাধিক পঠিত