চাঁদপুরে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বিট পুলিশিং সমাবেশে পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)
নারীরা একা নয়, পুলিশ তাদের পাশে রয়েছে


চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার) বলেছেন, নারীরা একা নন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য তাদের সঙ্গে রয়েছে। স্বদেশের দুঃসময়ে বাংলাদেশ পুলিশ অতীত থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছে। বর্তমানে সারাদেশে একযোগে নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন করছে পুলিশ। সমাজের সবাইকে নিয়ে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
১৭ অক্টোবর শনিবার সকালে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার নতুন রাস্তার মোড়ে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বিট পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 'মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার', 'বন্ধ হোক নারী নির্যাতন নিশ্চিত হোক দেশের উন্নয়ন' এই শ্লোগানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা এবং পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির যৌথ আয়োজনে বিট পুলিশিং নং-১৫-এর সচেতনতামূলক এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মোঃ আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় নারী নির্যাতন বিরোধী এই সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং জেলা কমিটির সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক গোপাল চন্দ্র সাহা, ২নং ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর আঃ মালেক শেখ, সংরক্ষিত মহিলা আসনে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ফেরদৌসি আক্তার, পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কার্তিক সরকার, জাতীয় পার্টির নেতা শাহজাহান মাতাব্বর, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তৈমুর হাসান টিপু দেওয়ান, ১নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ময়না বেগম ও ২নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী রৌশন আরা বেগম। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৈশাখী চক্রবর্তী।
সমাবেশ সফল করতে চাঁদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসিম উদ্দিন ও পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মাসুদ সার্বিক সহযোগিতা করেন।
ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশিদ, যুবনেতা মোবারক হোসেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকবৃন্দ, পাড়া মহল্লার নারী-পুরুষ এবং সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা মোঃ জামাল ও গীতা পাঠ করেন অর্পিতা নন্দী।
সমাবেশে পুলিশ সুপার আরো বলেন, যেকোনো দুঃসময়ে বাংলাদেশ পুলিশ স্বদেশকে নিয়ে ভেবেছে। তাদের ভাবনা সাধারণ মানুষকে নিয়ে। আমাদের সমাজে যারা নারী মা-বোনরা রয়েছেন, তাদের সম্মানের বিষয়টি যখন নানাভাবে সবার সামনে আসছে, তখনই বাংলাদেশ পুলিশের যিনি কর্ণধার আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তিনি চিন্তা করলেন, সারা বাংলাদেশে যেহেতু আমাদের সবচাইতে বেশি উইং রয়েছে এবং থানার চাইতে আমাদের বিট পুলিশিং-এর সংখ্যা বেশি, এখন প্রায় ৭ হাজার বিট পুলিশিং নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত হচ্ছে, সুতরাং এর মাধ্যমে আমরা জনগণকে একটা ম্যাসেজ পেঁৗছে দিতে চাই, নারীরা একা নন, আমরা তাদের পাশে রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য তাদের সঙ্গে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে দুই ধরনের গুণাবলি রয়েছে, যার একটি হচ্ছে মানবিক আরেকটি হচ্ছে পশুত্ব। যখন তার ভিতর পশুত্ব জেগে উঠে তখন এই সমাজে অনাচার শুরু হয়। পুলিশ সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ আমরা সকল ভাই-বোন মিলে এই পশুত্বদের দাবিয়ে দিব। তখন মানবিক বিষয়টি জাগ্রত হবে। আমাদের মা-বোন নিরাপদ হবে, আমরা সবাই নিরাপদ থাকবো।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, আমাদের স্পিকারও নারী এবং এ জেলার শিক্ষামন্ত্রীও নারী। তাই এই জেলা থেকে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করে সবার দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে চাই।
তিনি সবাইকে একটি বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নিজেরা এবং আমাদের যারা সন্তান রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তারা যেন এই বিষয়ে সতর্ক থাকে।
তিনি জাতীয় কবির কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কোনো কালে এক হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি/প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী'। আমরা চাই বিজয় লক্ষ্মী নারীর স্বার্থে পুরাবাজার থেকেই সবাইকে সম্পৃক্ত করে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী অভিযানকে পুরো জেলার মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেই।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের বর্তমান আইজিপি স্যারের নেতৃত্বে সারাদেশে ৬ হাজার ৯১২ বিট পুলিশিং পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলায় রয়েছে ১১৪টি বিট পুলিশিং কার্যক্রম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশ এবার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সমাবেশের আয়োজন করেছে। শনিবার দেশজুড়ে ৬ হাজার ৯১২টি বিট পুলিশিং এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় দেশের সব বিটের সঙ্গে চাঁদপুর জেলার সকল বিটে একযোগে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সংশ্লিষ্ট বিট এলাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
সমাবেশস্থলে পোস্টার, লিফলেট, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতন করাই এর মূল উদ্দেশ্য। প্রতিটি সমাবেশ স্ব স্ব বিটের ফেসবুক পেজে সরাসরি সমপ্রচার করা হয়।