• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী দেহ ত্যাগ

প্রকাশ:  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

অগণিত ভক্ত ও গুরু ভ্রাতাদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী অযাচক আশ্রম চাঁদপুরের অধ্যক্ষ কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী। তিনি গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর রোববার ঢাকা বারডেম হাসপাতালে বিকেল সাড়ে ৫টায় লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা চলাকালীন দেহত্যাগ করেন (দিব্যান লোকান স্ব গচ্ছতু)। তাঁর এ মহাপ্রয়াণের সংবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত শ্রী শ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের অগণিত ভক্তদের ছাড়াও চাঁদপুরে অবস্থানরত পরমহংসদেবের ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মহাপ্রয়াণের সংবাদে তার গুরুভ্রাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই ঢাকা ছুটে যান এ মহান মানুষটিকে চাঁদপুরে নিয়ে আসার জন্য। অগণিত গুরু ভাই আর শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিকতায় আজ ভোরে তাঁকে তাঁর প্রাণপ্রিয় গুরুধাম শ্রী শ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের পুণ্য জন্মস্থান অযাচক আশ্রম চাঁদপুরে নিয়ে আসা হবে। এ সময় গুরুভ্রাতা, ভগ্নিসহ অনুরাগীগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আজ সকাল ৯টায় পরমারাধ্য গুরুদেব শ্রী শ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব প্রবর্তিত সমবেত উপাসনার মাধ্যমে অখ-বিধিমতে অযাচক আশ্রমে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
অধ্যক্ষ কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী গত ২৮ আগস্ট চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে চাঁদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় পরদিন ২৯ আগস্ট রাতে তাকে ঢাকা গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তার অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার চাঁদপুরে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু দুদিন পার হতে না হতেই আবারো তিনি শ^াসকষ্টজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তার গুরুভ্রাতাগণ গত ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে পুনরায় ঢাকা নিয়ে যান এবং ঢাকা বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করান। তার অবস্থায় খারাপ মনে হওয়ায় চিকিৎসকগণ তাকে আইসিইউতে রাখেন। তার অবস্থা গত পরশুদিন একটু ভালো দেখা দিলেও গতকাল তার স্বাস্থ্যের অবস্থা আবারো খারাপ হয়ে পড়ায় তাকে বারডেমের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায়ই বিকেল সাড়ে ৫টায় তিনি দেহত্যাগ করেন। এ সময় ঢাকায় অবস্থানরত গুরু ভাইসহ শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই তার পাশে ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ব্রহ্মচার্য পালন করায় তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
১৯৫০ সালে পিরোজপুর জেলা ও থানাধীন নন্দীপাড়া গ্রামে সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত রতিকান্ত দাস ও মাতা মৃত লালমতি রাণী দেবীর ইচ্ছা ছিল তাদের প্রাণপ্রিয় আদরের সন্তান একদিন বড় হয়ে ভালো মানুষ হবেন এবং মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। বাবা মায়ের সেই ইচ্ছা হয়তো পূর্ণ হয়েছে। তিনি পরিপাটি বাড়ি-ঘর ও বাবা মায়ের স্নেহকে দূরে ঠেলে দিয়ে ছুটে এলেন পরমারাধ্য শ্রী শ্রীমৎ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের সান্নিধ্যে। প্রথম কর্মময় জীবনের ধর্মীয় সেবা কার্যক্রম শুরু করেন খুলনা অখ-ম-লীতে। পরবর্তী সময় ১৯৮০ সালে তিনি স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের স্বহস্তে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা জেলাধীন রহিমপুর আশ্রমে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের দেহত্যাগের পর ১৯৮৬ সালে রহিমপুর থেকে চাঁদপুরে এসে পুণ্য জন্মস্থান পুনরুদ্ধারের মহান কাজে ব্রতী হন সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী। তিনি ভক্তদের বাড়িতে বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনেক কষ্ট ও আইনী লড়াই মোকাবেলা করে ১৯৮৭ সালে উক্ত পুণ্য জন্মস্থানে মাটির ভিটিতে ছোট টিনের ঘর নির্মাণ করে চাঁদপুরে অযাচক আশ্রমের যাত্রা শুরু করেন এবং স্বরূপানন্দের জন্মোৎসব পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বহু কষ্ট আর সাধনার ফলস্বরূপ ১৯৯৬ সালে টিনশেড পাকা ঘর নির্মাণ করে আশ্রমের কার্যক্রম বেগবান করতে সক্ষম হন। তারপর বহুবিধ কর্মকা-ে এই আশ্রমের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটান।
বিভিন্ন মহলের শোক
অযাচক আশ্রম চাঁদপুরের অধ্যক্ষ কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর মহাপ্রয়াণে শোক জানিয়েছেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, চরিত্রগঠন আন্দোলন পরিষদের পক্ষে ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, রাজীব চন্দ্র দে, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক চাঁদপুর জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিকসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মঠ, মন্দির ও উপাসনালয়ের অধ্যক্ষগণ। তারা শোক বার্তায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী কবিরাজ সুখরঞ্জনের মহাপ্রয়াণে শোক প্রকাশ করে বলেন, সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী একজন নিরহঙ্কারী সেবাপরায়ণ মহৎ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। আজীবন ব্রহ্মচার্য পালনের মাধ্যমে অসহায় গরিব দুঃখী মানুষের সেবা করে গেছেন। তিনি কখনো সাম্প্রদায়িকতাকে বড় করে দেখেননি। সকল সম্প্রদায়ের মানুষকেই আপন করে নিতে চেষ্টা করেছেন। মানুষকে ভালোবেসেছেন অকাতরে। মানুষের মাঝে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে। পূজা, ঈদে, শীতে বা উৎসবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চাঁদপুরে চরিত্রগঠন আন্দোলন করেছেন, অযাচক আশ্রমের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন। তার মহাপ্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি পরম শ্রদ্ধাভরে।