• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

জোয়ারে নদীর পানি বিপদসীমার উপরে, তলিয়ে গেছে শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল

প্রকাশ:  ২১ আগস্ট ২০২০, ১২:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাঁদপুর শহরের রাস্তাঘাটসহ মেঘনার পশ্চিমপাড়ের চরাঞ্চল, হাইমচর উপজেলা সদর এবং জেলার নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। অমাবস্যার প্রভাব আর অতিবৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার বিকেলের জোয়ারে মেঘনার পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর প্রভাবে জেলার আরও দুটি নদী ডাকাতিয়া ও ধনাগোদার পানিও বেড়ে যায়।

অস্বাভাবিক জোয়ারের নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চাঁদপুর-শরিয়তপুর নৌরূটের ফেরি চলাচল তিন ঘণ্টা করে ছয় ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআইডবিস্নউটিসির হরিণা ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক ফয়সাল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, দুইবেলা জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা বেশি থাকে। তখন ফেরির গ্যাংওয়ে রাস্তাসহ তলিয়ে যায়। ফেরিতে গাড়ি উঠতে এবং নামতে পারে না। নিম্নচাপের প্রভাবে নদ-নদীর এই পানি বৃদ্ধি।

এদিকে চাঁদপুর শহরের অনেক এলাকার রাস্তাঘাটে জোয়ারের পানি উঠেছে। শহরের নিচু স্থানসহ নদীতীরবর্তী অনেক এলাকার বাড়িঘর, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, ফসলি জমি এবং অন্যান্য স্থাপনা দ্বিতীয় দিনের মতো প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসংখ্য পুকুর-জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে।

পুরাণবাজার জাফরাবাদে বাঁধ উপচে মেঘনার পানি প্রবলবেগে ভেতরে ঢুকে পড়ায় পৌর ২নং ওয়ার্ডে পশ্চিম জাফরাবাদ, মধ্য শ্রীরামদী, পশ্চিম শ্রীরামদী, ৭নং ওয়ার্ডের উত্তর শ্রীরামদী, যমুনা রোড, ৮নং ওয়ার্ডের কোড়ালিয়া, ৯ ও ১০নং ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি, উঠোনে পানি উঠেছে।

এছাড়া ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের পূর্ব জাফরাবাদ এলাকাসহ সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। ব্যবসায়িককেন্দ্র পুরাণবাজারের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। অনেকের মালামাল ভিজে নষ্ট হবার খবরও পাওয়া গেছে। ইব্রাহিমপুর ও রাজরাজেশ্বর চরের বহু মানুষ পানিবন্দী।

এদিকে হাইমচর উপজেলা সদরের আলগী উত্তর ও দক্ষিণ এবং চরভৈরবী ইউনিয়ন আগের মতো বন্যাকবলিত। এ তিনটি ইউনিয়নে জোয়ারে মেঘনার পানি ঢুকে শত শত বাড়িঘর, উঠোন, রাস্তা নিমজ্জিত হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক মহসিন মিয়া তাঁর তথ্যচিত্রে জানিয়েছেন, মহজমপুরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। দুপুর ৩টার পর জোয়ারে পানি রাস্তা তলিয়ে ভেতরে পানি ঢুকে। হাইমচর নীলকমল এলাকার রতন হাজী জানান, তাদের এলাকার চরাঞ্চলসহ নদীপাড়ের বাড়িঘর, ফসলি জমি সব তলিয়ে গেছে। গবাদিপশুর গোয়ালঘরও বন্যার পানি থেকে রক্ষা পায়নি। মতলবের আলো পত্রিকার সংবাদদাতা হোসেন গাজী জানিয়েছেন, মহজমপুর বাঁধ ছুটে গিয়ে প্রবলবেগে জোয়ারের পানিতে গ্রামের বহু এলাকার স্থাপনা তলিয়ে গেছে।

ঈশানবালা এমজেএস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, স্কুল, মসজিদ, রাস্তা, বাড়িঘর সর্বদিকে পানি।

অপরদিকে শহরের পুরাণবাজারের বেকারী ব্যবসায়ী নাছির আখন্দ জানান, তার বেকারিতে পানি উঠেছে। জাফরাবাদ বাড়িতেও হাঁটু পানি। একমাত্র রাস্তাটিও পানির চাপে স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গেছে। এ এলাকার আবু বকর (রাঃ) জামে মসজিদের ইমাম মাওঃ কামাল উদ্দিন জানান, আসরের পর থেকে তিন ওয়াক্ত নামাজের সমস্যা হচ্ছে। আশাপাশের বাড়িঘর ও রাস্তা তলিয়ে গেছে। মুসলি্লদের হাঁটু পানি ভেঙ্গে মসজিদে আসতে হচ্ছে।

জোয়ারে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি দুর্ভোগের মধ্য রয়েছে বেড়িবাঁধের বাহিরে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী কয়েক হাজার হাজার বাসিন্দা। জোয়ারের পানিতে মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আক্তার জানান, আপাতত বাঁধের কোনো সমস্যা তারা দেখছেন না। হাইমচরের দুটি স্থানের পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। নদ-নদীর পানি আবারও জোয়ারে বেড়েছে। চাঁদপুর শহর ও হাইমচর রক্ষা বাঁধ তাদের কড়া নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

এদিকে পর্যবেক্ষক মহলের মতে, চাঁদপুরে স্থায়ীভাবে বন্যা না হলেও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে মেঘনার চরাঞ্চলসহ চাঁদপুর শহর, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও হাইমচর উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, কৃষিপণ্য এবং মৎস্যচাষের অনেক ক্ষতি হয়েছে।