• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচর রক্ষা বাঁধ উপচে মেঘনার পানি তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম

মেঘনায় পানির চাপ কমছে ৭৯ থেকে নেমে ৬৩ সেন্টিমিটারে

প্রকাশ:  ০৭ আগস্ট ২০২০, ২৩:৫১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় জোয়ারে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বুধবারের চেয়ে গতকাল পানির চাপ অনেক কম ছিলো। গত বুধবার সান্ধ্যকালীন জোয়ারে মেঘনার পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে হাইমচর রক্ষা বাঁধের মহজমপুর ও পুরাতন হাইমচর বাজার স্থানে পৃথক দুটি ব্রিজের স্থান দিয়ে প্রবলবেগে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে পড়ে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে হাইমচর রক্ষা বাঁধ ও পানি পরিস্থিতি সরজমিনে দেখার জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।


তিনি জানান, বুধবার জোয়ারে মেঘনার পানি আকস্মিকভাবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তাই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার মেঘনার পানির লেবেল ১৬ সেন্টিমিটার নীচে ছিলো। তিনি জানান, হাইমচরে বাঁধ ভাঙ্গেনি। উত্তর আলগীর মহজমপুর ও দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের চরভাঙ্গা গ্রামের এলজিইডির দুটি ব্রিজের নীচ থেকে পানির চাপে মাটি সরে গিয়ে এ দুটি স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকেছে।

 


তিনি বলেন, বাঁধ এলাকায় কোনো ব্রিজ থাকার কথা নয়। এলজিইডি সেখানে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করলেও রেগুলেটর না করায় সে স্থান দিয়ে স্রোতের চাপে প্রবল বেগে পানি ভেতরে প্রবেশ করে। আমরা সেই স্থান পরিদর্শন করেছি। সে জায়গা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।

 


হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী জানান, হাইমচর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গেনি। মহজমপুর ও হাইমচর বাজার এলাকার দুটি ব্রিজ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ায় ৩/৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানির চাপে বিদ্যুতের অনেক খুঁটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘর-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। চরাঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ।

 


নূর হোসেন পাটোয়ারী আরো জানান, জুম মিটিং করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাথে হাইমচরে বাঁধভাঙ্গা ও শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির নির্দেশ-যে কোনোভাবে সে বাঁধ মেরামত করতে হবে। যাতে আর ভেতরে পানি না ঢুকে। আমরা আজকে মহজমপুর ও চরভাঙ্গা গ্রামের এলজিইডির ব্রিজবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা পরিদর্শন করেছি। স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে হলেও বালু ও মাটিবস্তা দিয়ে সে বাঁধ মেরামত করে পানি ঢুকার পথ বন্ধ করবো।

 


এদিকে আকস্মিক এ বন্যার পানিতে শহর-গ্রামের পুকুর ও জলাশয়গুলো নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় কোটি কোটি টাকার চাষ করা মাছ ভেসে গেছে। পুরান বাজার পশ্চিম শ্রীরামদী ছৈয়াল বাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম মুক্কু জানান, তার পুকুরে চাষ করা প্রায় তিন লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এভাবে অনেক মৎস্যচাষী আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

 


হাইমচর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শফিক জানান, হাইমচর সেচ প্রকল্পের মহজমপুর ও চুন্নু চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে সাবু মাস্টারের মোড় এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে পানি ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এতে গ্রামের বহু বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, সুপারি বাগান তলিয়ে গেছে। বন্যার আতঙ্কে রয়েছে গ্রামবাসী।

এদিকে জোয়ারের পানিতে চাঁদপুর শহরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। অসংখ্য বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। তবে বুধবারের চেয়ে গতকালকে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া এ তিন নদীর পানি বুধবারের জোয়ারে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাইমচর, চাঁদপুর সদর, মতলব দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তির বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক জায়গার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিঘি্নত হচ্ছে। বন্যার আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষক মহল। এখন দেখার অপেক্ষা জোয়ারে বৃদ্ধি পাওয়া পানি কমে যায় কি না।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্যে চাঁদপুর সদর ইউএনও কানিজ ফাতেমা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান বৃহস্পতিবার সকালে হানারচর এবং চান্দ্রা ইউনিয়নের নদী এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাঁর উপজেলার পানিবন্দী মানুষের জন্যে শুকনা খাবার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

পুরাণবাজার ব্যবসায়িক এলাকায় আকস্মিক বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীদের অনেক পণ্য বীজের নষ্ট হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারের পানি কিছুটা কম ছিলো। সন্ধ্যার জোয়ারের পানি আগের দিনের চেয়ে অনেক কম ছিলো।