নিজের সম্পত্তির অধিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ফরিদগঞ্জের এক ব্যবসায়ী


মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে পাকা সড়ক। এর এক পাশে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় এবং অপর পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি। সর্বশেষ বিএস খতিয়ানেও দুই ভূমির দাগ নাম্বার আলাদা। তারপরও ইউনিয়ন পরিষদ ওই ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি তাদের দাবি করে যতবার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে ততবার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি চিহ্নিত করে বুঝিয়ে দিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সম্পত্তি নেই বলে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে এসেছে। সেই অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে পাকা ভবনের কাজ শুরু করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এবার বাধা দেন থানার ওসি। তাদের আদেশ মেনে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে প্রথমে থানায় এবং পরে উপজেলা ভূমি অফিসে এসে বিষয়টি সমাধানের জন্য বারংবার ঘুরলেও অজ্ঞাত কারণে তা সমাধান হচ্ছে না। এমতাবস্থায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনসহ সকল মহলের কাছে জমি সংক্রান্ত এই ক্ষুদ্র বিষয়টির নিষ্পত্তি চেয়েছেন আলী হোসেন বেপারী নামে এক ব্যবসায়ী।
গতকাল বুধবার দুপুরে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বর্ণনা দেন উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গোয়ালভাওড় বাজারের ব্যবসায়ী ও বাজার কমিটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বেপারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, আমি ও আমার পরিবার আইনের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গোয়ালভাওড় বাজারে বিগত ১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবসা করে আসছি। সেই বাজারেরই ইউনিয়ন পরিষদের অপর পাশে সুমন পাল থেকে ২০১২ সালে ১শতক জমি ক্রয় করে দখলে আাছি। উক্ত জমিতে আমার টিনের কাঁচা ঘর ছিল। কিন্তু উক্ত কাঁচা ঘর থাকাবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান দাবি করেন উক্ত সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা রয়েছে। এই কথার প্রেক্ষিতে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ কয়েকবার সালিস হয়। উক্ত সালিসের সিদ্ধান্তক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হান্নান মিয়া এবং সাবেক চেয়ারম্যান খাজে আহাম্মদ ভূঁইয়াসহ অন্যরা উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগোর কাছে গিয়ে আমাদের কাগজপত্র এবং ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। তখন ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত দেন আমাদের সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ কোনো জায়গা পাবে না। এই সিদ্ধান্তের পরও চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের কাছে সময় চান। তখন আমরা চেয়ারম্যানের কথা রাখি। তারপর চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ফরিদগঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ড অফিস থেকে কানুনগো এবং সার্ভেয়ার আনেন। গত ১৫ জুলাই বুধবার ইউনিয়ন পরিষদে এসে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা মেপে বুঝিয়ে দেন।
তিনি বলেন, কানুনগো এবং সার্ভেয়ার জায়গা পরিমাপের সময় চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যরা উপস্থিত থেকে পরিষদের জায়গা বুঝে নেন। ওই সময় নিশ্চিত হয় আমাদের সম্পত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি নেই। তাই দখলের প্রশ্নই উঠে না। এমনকি ওই সম্পত্তিতে কোনো খাস বা সরকারি জমি নেই। আমরা চেয়ারম্যানের কাছে ভবন নির্মাণে লিখিত অনুমতি চাইলে চেয়ারম্যান আমাদের মৌখিক অনুমতি দেন। পরে আমরা ২১ জুলাই মঙ্গলবার ওই স্থানে টিনের ঘর সরিয়ে পাকা ভবন করার জন্যে ইট, বালু এবং রড এনে কাজ শুরু করি। কিন্তু ওই দিনই বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানার একজন এসআই এসে মৌখিকভাবে আমাদের বলে ওসির নির্দেশে কাজ বন্ধ করতে বলেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় ওসির সিদ্ধান্ত মতে আমরা কাজ বন্ধ রাখি। পরে ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার সকল কাগজপত্র এবং দলিল নিয়ে ওসি আব্দুর রকিবের সাথে দেখা করি। কিন্তু তখনও ওসি কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেন। তা মেনে নিয়ে তারপর আমরা গত ২৬ জুলাই রোববার ওই কাগজপত্র নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর নিকট যাই। সেদিনই দুপুরে হঠাৎ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাবেক চেয়ারম্যান খাজে আহাম্মদ ভঁূইয়া এবং বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মিয়া সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তারা মৌখিক বক্তব্যে আমাদেরকে সন্ত্রাসী এবং মাদকসেবী বলে চিহ্নিত করে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আনেন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের বি.এস. দাগ এবং আমাদের জমির বি.এস দাগ আলাদা।
তিনি আরো বলেন, গত ২৯ বছর ধরে আমরা ওই বাজারে ব্যবসা করে আসছি। বর্তমানে আমাদের ৪টি প্রতিষ্ঠানে আমরা নিজেরা কাজ করার সাথে সাথে ২০জন কর্মচারী কাজ করছে। আমার ভাতিজা সোহেল বেপারী উপজেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী। গত ৬ মে বুধবার গোয়ালভাওড় বাজারের দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনার সময় কোনো কারণ ছাড়াই আমার মেসার্স নাহিদ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ভাংচুর চালিয়ে সন্ত্রাসীরা লুটপাট করে। আমার দুই ভাতিজা সোহেল বেপারী ও জুয়েল বেপারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। উক্ত ঘটনায় আমার ভাতিজা সোহেল বাদী হয়ে উক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও ওসি সাহেব ঘটনা মিমাংসা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু মামলা গ্রহণও করেন নি। এমনকি মিমাংসাও করেন নি। এরপর থেকে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তাদের কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি আমাদের জীবন হুমকির মুখে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমাদের সম্পত্তিতে যদি ইউনিয়ন পরিষদ কোনো জায়গা পায় তাহলে আমরা উক্ত জায়গা ছেড়ে দিব। আর যদি উনারা আমাদের কাছ থেকে কোনো জায়গা না পায়, তাহলে আমাদের হয়রানিমুক্ত করার জন্য অনুরোধ রইল। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সফল মৎস্য ব্যবসায়ী সোহেল বেপারী ও তরুণ আইনজীবী মাসুদ গাজী।