• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

সঙ্কটকালীন সময়ে প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ : চাঁসক অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ

করোনাকালীন সঙ্কটেও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ অব্যাহত আছে : জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার

প্রকাশ:  ২৪ জুলাই ২০২০, ১১:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের সহযোগিতায় 'করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভা গত ২২ জুলাই ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন। সম্মানীয় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস। মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য রফিক আহমেদ মিন্টু। টিআইবি প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ আতিকুর রহমান।

সম্মানীয় আলোচকের বক্তব্যে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ বলেন, দেশের যে কোনো সঙ্কটকালীন সময়ে প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈশি্বক মহামারির এই সময়ে সনাক-টিআইবির আজকের ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভার যে বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে 'করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এই সঙ্কটের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের সাথে যে কোনো মূল্যে যোগাযোগ রাখতে হবে। বাড়িতে শিক্ষার্থীরা যেন লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ দেয়, তাদের যেন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকে সেজন্যে শিক্ষকবৃন্দ অভিভাবকদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে। যতটুকু সম্ভব অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, খেলাধুলা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য কিভাবে ঠিক রাখা যায় সেজন্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কাজও চলমান আছে। সরকার অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা চালু করার চিন্তাভাবনা করছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, এই দুর্যোগময় সময়ে আজকের এই আলোচনা কিছুটা হলেও আমাদেরকে করণীয় সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সঙ্কটেও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। কিন্তু দেখা যায় যে সকল শিক্ষার্থীর এন্ড্রয়েড মোবাইল বা ঘরে টেলিভিশনও নেই সেসকল শিক্ষার্থী সংসদ টেলিভিশনের পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা এখনো অনিশ্চিত। এই অনিশ্চিতার মধ্যে থেকেও শিশুদের পাঠের সাথে সম্পৃক্ত রাখার জন্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে শিশুদের বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। বিনোদনের মাধমে আমরা যেন তাদেরকে পাঠের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে পারি। তিনি করোনাকালীন সংকটেও সনাক-টিআইবি'র এ ধরণের ভার্চুয়াল সভা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

টিআইবি প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন টিআইবি'র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা ভয়াবহ বৈশি্বক মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদেরকে এই সঙ্কটের মধ্যে থেকেও পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের একটা সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। শিক্ষা হচ্ছে শরীর-মন-আত্মার একটি সুসমন্বয়। ইতিমধ্যে শিক্ষকবৃন্দ করোনাকালীন সঙ্কটে শিক্ষার মান কিভাবে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, যদি সোস্যাল মিডিয়া, ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ক্লাস্টারভিত্তিক গ্রুপ করে জ্ঞানের আদান প্রদান করা যায় সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ফলদায়ক হবে। এই মহামারিতে শিক্ষার্থীরা যাতে আতঙ্কগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাসে ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে কিভাবে পড়ালেখা করতে পারে সেদিকে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, টিআইবি বিশ্বাস করে, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রতি নজর দেওয়া শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, জাতির প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে ও প্রতিটি আন্দোলনে শিক্ষকবৃন্দের ভূমিকা ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন বলেন, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে যদি যোগাযোগ বৃদ্ধি করা যায় তাহলে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা অনেক লাভবান হবে। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে একবার ৩০জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে যদি একজন শিক্ষক কথা বলতে পারেন তাহলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। করোনাকালীন সঙ্কটেও কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠে, খেলাধুলায় ও অন্যান্য শিক্ষামূলক কর্মকা-ে মনোনিবেশ করানো যায় সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।

টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মাসুদ রানার সঞ্চালনায় করোনাকালীন সঙ্কট মোকাবেলায় শিক্ষা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ, বাস্তবায়ন এবং চ্যালেঞ্জ বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ফরিদ উদ্দীন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান, হাজীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান, মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ইকবাল হোসেন, শাহরাস্তি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ খাজা মাইন উদ্দিন, উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান সিদ্দিকী ও উত্তর তরপুরচন্ডী কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোদেজা বেগম। তারা বলেন, আমরা খুবই দুর্যোগ ও মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা খুবই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিশুদের স্কুল থেকে দূরে সরে যাওয়া, সিলেবাস শেষ করতে না পারা, অনেক শিক্ষার্থীর ঘরে টেলিভিশন না থাকা, অনেকের এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট না থাকা, শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা দিতে না পারা-এগুলো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তারা আরও বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো সিলেবাস কমানো, শিক্ষকদের ছুটি কমানো, শিক্ষাবর্ষ বাড়ানো, এসএমসি ও অভিভাবকদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, বিনোদন, খেলাধুলা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের প্রতি খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। তারা আরও বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে আমরা প্রতিটি উপজেলায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাদ্য সহায়তা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছি। এ ধরনের ভার্চুয়াল সভা আয়োজন করার জন তারা সনাক ও টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।

মতবিনিময় সভায় আরও অংশ নেন, বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ, টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সিই) কুমিল্লা ক্লাস্টার মোঃ হুমায়ুন কবির, চাঁদপুর সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মানছুর আহমেদ, সনাক চাঁদপুরের সদস্যবৃন্দ, ইয়েস গ্রুপের দলনেতা ও সদস্যবৃন্দ এবং টিআইবি কর্মীবৃন্দ।