• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, হাইমচরে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন

প্রকাশ:  ২৪ জুলাই ২০২০, ১১:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে মেঘনার পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে নদীভাঙ্গনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। নদীর তীরবর্তী দুই পাড়ের চরাঞ্চলসহ হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যে জানা যায়। সেখানে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে পানিবন্দী মানুষ। রয়েছে গবাদি পশুর খাবারের সঙ্কটও। সান্ধ্যকালীন জোয়ারে মেঘনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি হারিয়ে মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব। নদীপাড়ের প্রবীণ লোকদের অনেকেই জানান, তাদের এলাকায় এমন ভয়াবহ ভাঙ্গন ইতিপূর্বে দেখেননি তারা। নদীর ভাঙ্গনে গত একমাসে হাইমচরে চর এলাকার ৫টি গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়েছে। চাঁদপুর সদরের হানারচর, ইব্রাহিমপুর, আলুবাজার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে নিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙ্গন পরিস্থিতি রাজরাজেশ্বরে। লক্ষ্মীরচর, জাহাজমারা গ্রাম নিশ্চিহ্ন। পদ্মার ভাঙ্গনে অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে নবনির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট রাজরাজেশ্বর ওমর আলী হাইস্কুল ও সাইক্লোন শেল্টার। ২৩ জুলাই দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি নদীর ভাঙ্গনের মুখে বেশ কিছুদিন দাঁড়িয়ে থাকার পর সেটি আর রক্ষা পায়নি।

অপরদিকে সন্ধ্যাকালীন জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর শহরের অনেক জায়গার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু সড়ক, কলেজ রোড, বেগম মসজিদ সিএসবি খালের রাস্তা, রহমতপুর কলোনী, বড় স্টেশন মাদ্রাসা রোড, পুরাণবাজার কলেজ, মৈশালবাড়ি রাস্তাসহ শহরের অনেক রাস্তায় জোয়ারের পানি থৈ থৈ করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী জানান, তার ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। একমাত্র সাইক্লোন শেল্টারটিও ভাঙ্গনে রক্ষা পেলো না।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী জানান, তাঁর উপজেলার হাইমচর, নীলকমল ও গাজীপুর এ তিনটি ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে ভাঙছে। মধ্য চরে নদী ভাঙ্গনের ব্যাপকতায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যে নির্দ্দিষ্ট করা জায়গাটিও এখন হুমকির মুখে। ভাঙ্গন রক্ষায় সেখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা জরুরি।

তিনি আরো জানান, হাইমচর উপজেলা নদীবেষ্টিত। মেঘনার পানি জোয়ারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পঞ্চাশ মানুষের বাড়ি করে পানি উঠলেও ভাটায় আবার নেমে যায়।

চাঁদপুর সদর ১২নং চান্দ্রা ইউপি চেয়ারম্যান খানজাহান আলী কালু পাটোয়ারী জানান, তার ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী বাখরপুর ও দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী। রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমি পানির নিচে। বিষয়টি তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আক্তার জানান, গত আগের দিনের চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারে পানির পরিমাণ কিছুটা কম ছিলো। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি ৪.৪৫ সেন্টিমিটার এবং সান্ধ্যকালীন জোয়ারে ৪.৬১ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়।

তিনি আরো জানান, শহর রক্ষা বাঁধ মোটামুটি অবস্থানে রয়েছে। জরুরিভিত্তিতে কাজ করার জন্যে চার হাজার বালুভর্তি বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদের আগে শহর রক্ষা বাঁধের মোলহেড ও পুরাণবাজার অংশে কিছু বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হবে। তিনি আরো জানান, চাঁদপুর সদরের হানারচর, রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের আলুরবাজার, হাইমচরের মাঝের চর ও ঈশানবালা নদী ভাঙ্গন রয়েছে।

এদিকে মেঘনা-ধনাগোদা পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ধনাগোদা নদীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এখানে পানির ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রম করেনি। গত পরশু আমরা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেছি, কোথাও সমস্যা হয়নি। বেড়িবাঁধের বাইরে এবং চরাঞ্চলের অনেক গ্রামে পানি উঠেছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে।

এছাড়া মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে আরো জানা যায়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। অপরদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গাইবান্ধা ২৫০ মিলিমিটার, বরগুনা ১৮৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ ১০০ মিলিমিটার, সাতক্ষীরা ৮৩ মিলিমিটার, দেওয়ানগঞ্জ ৮০, পটুয়াখালী ৭৮ মিলিমিটার, মহাদেবপুর ৭৩ মিলিমিটার, চাঁদপুর বাগান ৬৯ মিলিমিটার এবং চট্টগ্রাম ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।