• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ফরিদগঞ্জে সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

প্রকাশ:  ২৩ জুলাই ২০২০, ১৪:২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দেশ মাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীনতার পর এক সময় জীবিকার টানে পাড়ি জমিয়েছেন প্রবাসে। সেখানে অর্জিত অর্থ দিয়ে নিজের ও সন্তানদের জন্যে কিনেছেন জমি। কিন্তু জমি কিনে একদ- শান্তিতে থাকতে পারেননি বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম। গত ১৭ বছর আদালত আর থানায় ছুটোছুটি করতেই বেলা শেষ। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে এখন অর্থ ও প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের কাছে সম্পত্তিটুকু হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। সর্বশেষ কয়েকদিন পূর্বে প্রতিপক্ষরা তার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। থানা পুলিশ সহায়তা করলেও প্রতিপক্ষের কূটকৌশলে বারংবার হোঁচট খাচ্ছেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম পাটওয়ারীর (৬৮) কাহিনী এটি।


জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নে প্রবাস থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের ভবিষ্যতের চিন্তা করে ২০০৩ সালে ২ একর ৪৩ শতক জমি ক্রয় করেন। সেখানে বসবাস শুরুর পর থেকে ওই সম্পত্তির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কিছু লোকের।

 


নিজেদের করুণ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম পাটওয়ারীর ছেলে ফয়সাল পাটওয়ারী জানান, আমার পিতা সম্পত্তি ক্রয়ের পর থেকে প্রভাবশালী আঃ মান্নান পাটওয়ারীর কারণে গত ১৭ বছর ধরে আদালত ও থানায় ছুটাছুটি করছেন। সম্পত্তি রক্ষার জন্যে প্রায় অর্ধশত অভিযোগ করেছেন। থানা পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে সাধ্যমত সহযোগিতা করলেও প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী ও কূটকৌশলী হওয়ায় আমরা তাদের সাথে পারছি না। আঃ মান্নান পাটওয়ারীকে সহযোগিতা করেন তার চাচাতো ভাই আঃ হান্নান পাটওয়ারী ও আঃ কুদ্দুছ পাটওয়ারী।

 


ফয়সাল আরো জানান, সর্বশেষ গত ৪ জুলাই শনিবার তাদের বসত ঘরে হামলা ও সম্পত্তিতে জোরপূর্বক চাষাবাদের চেষ্টার অভিযোগে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গেলে প্রতিপক্ষ আঃ হান্নান ও আঃ কুদ্দুছ পাটওয়ারীসহ অভিযুক্তরা থানায় বসে ভবিষ্যতে খোরশেদ আলমের কোনো ক্ষতি করবে না বলে অঙ্গীকার করে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। পরে স্থানীয় সালিসরা আপসনামার মাধ্যমে গত ১০ জুলাই শুক্রবার এর নিষ্পত্তি করে দেয়। এর ৫দিনের মাথায় গত ১৫ জুলাই বুধবার আঃ মান্নান পাটওয়ারী তার বাবার বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তুলে পাল্টা অভিযোগ করে। সেই অভিযোগের বিষয়ে তাদের ব্যস্ত রেখে আঃ মান্নান পাটওয়ারী তার লোকজন আঃ হান্নান পাটওয়ারী, কুদ্দুছ পাটওয়ারীসহ অন্য লোকজনদের দিয়ে গত ১৭ জুলাই শুক্রবার সকালে তাদের বসতঘরটি গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় তাদের ঘরের চালসহ আসবাবপত্র পুকুরে ফেলে দেয়। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।

 


মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম জানান, সরকারিভাবে দুঃস্থ ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর তৈরির করে দেয়ার প্রকল্পে আমি আবেদন করেছি। হয়তবা অচিরেই সরকার আমাকে ভবন করে দিবে। এই কথা জানাজানি হওয়ায় প্রতিপক্ষরা আরো হিংস্র হয়ে উঠেছে। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু ভূমি খেকোদের কবলে পড়ে এখন সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় রয়েছি। তারা ১৭ জুলাই আমাদের অনুপস্থিতির সুযোগে আমার বসতঘর, রান্নাঘরসহ সকল কিছুই গুঁড়িয়ে দেয়। থানায় এই বিষয় নিয়ে অভিযোগ দায়েরের পর এখন তারা নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফলে প্রতিটি দিন আতঙ্ক নিয়ে কাটাচ্ছি। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে সন্তানদের জন্য ক্রয় করা জমিটুকু রক্ষা করতে পারবো কিনা তা বুঝতে পারছি না। তারা এখন আমার পুরাণ বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় বেড়া দিয়ে দিয়েছে। যাতে আমি ও আমার পরিবার ঘরবন্দী থাকি। ভুয়া দলিল তৈরি করে আঃ মান্নান পাটওয়ারী আমার সম্পত্তিসহ আশপাশের লোকজনেরও সম্পত্তি গ্রাস করার পাঁয়তারা করছে।

 


মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম আঃ মান্নান পাটওয়ারীর আক্রোশের শিকার বলে জানিয়ে একই বাড়ির সফিউল্লাহ পাটওয়ারী , শফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী ও সেলিম মিজি বলেন, আঃ মান্নান পাটওয়ারীর দ্বারা আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা এর প্রতিকার চাই। যেহেতু দলিল রয়েছে। তাই যাচাই-বাছাই করলেও সব সত্য বেরিয়ে আসবে।

 


সর্বশেষ অভিযোগগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই হেলাল মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলমের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সত্য বলে জানিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ আপসনামা দিয়ে কৌশলে আবারো নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়েছে।

 


ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব জানান, আইনীভাবে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 


ব্যাপারে আঃ মান্নান পাটওয়ারী জানান, আমি ওই সম্পত্তির খরিদ সূত্রে মালিক। মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম যে দাবি করছে তা সঠিক নয়। আমার পৈত্রিক সম্পত্তির সাথে সাথে খরিদ সূত্রেও সম্পত্তির মালিক। তাই খোরশেদ আলম যে জায়গার দাবি করছে , সেই অংশ আমিই খরিদ সূত্রে মালিক।