• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ

চাঁদপুরে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে

সম্প্রতি আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়লেও সুস্থতার হার বেড়েছে দ্বিগুণ মৃত্যুর হার কমেছে

প্রকাশ:  ০৯ জুলাই ২০২০, ১২:০৭
এএইচএম আহসান উল্লাহ
প্রিন্ট

চাঁদপুর জেলায় কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ৮ এপ্রিল থেকে ৮ জুলাই। এই তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে বর্তমান চিত্রের আলোকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মানুষের মাঝে এখন আর আগের মতো এটি নিয়ে তেমন একটা ভীতি নেই। মানুষ এর সাথে নিজেকে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রথম প্রথম যেমন দেখা যেতো মানুষ রোগটি গোপন রেখে নিজে শেষ হতো, অন্যদেরও সংক্রমিত করতো, সেখান থেকে মানুষ কিছুটা হলেও বের হয়ে এসেছে বুঝা যাচ্ছে। কারণ, এখন করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে মৃত্যু অথবা হাসপাতালে আসার সাথে সাথে মৃত্যুর ঘটনা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে।


এদিকে গত পৌনে তিন মাসের সাথে চলতি জুলাই মাসের সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে এ বিষয়টি উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। চলতি মাসের করোনা টেস্ট, রিপোর্ট, পজিটিভ, পজিটিভ বিবেচনায় মৃত্যু এবং সুস্থতার হারের সাথে গত কয়েক মাসের এ সব হিসেব তুলনা করে এটাই প্রতীয়মান হলো যে, চাঁদপুরে করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে।

 


গত ৮ এপ্রিল চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মতলব উত্তরের জামাতা সুজন হচ্ছে এ জেলার প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী। সে থেকে গত ৯ জুন পর্যন্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, ওই দুই মাসে চাঁদপুর জেলা থেকে স্যাম্পল পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়েছে ২ হাজার ৩শ' ৩৫ জনের। আর ১০ জুন থেকে গতকাল ৮ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে ২ হাজার ৮শ' ৩৩ জনের। প্রথম দুই মাসে যে পরিমাণ স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে, পরবর্তী এক মাসে তার চেয়ে ৫শ' স্যাম্পল বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বেশি হওয়াতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। এটিকে বিশ্লেষকগণ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। কারণ, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়ে যাওয়াই ভালো। এটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক। দেখা গেছে যে, কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে রইল, কিন্তু শনাক্ত হলো না, তা পুরো সমাজের জন্য বিপজ্জনক। আর শনাক্ত হয়ে গেলে তার চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাটা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কেউ করোনায় আক্রান্ত কি না তা শনাক্ত করতে হলে ওই ব্যক্তির নমুনা টেস্ট করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তাই নমুনা টেস্ট বেড়ে যাওয়ার বিবেচনায় বলা যাচ্ছে এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ৯ জুন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা থেকে যে ২৩৩৫ জনের স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এসেছে ২ হাজার ৪ জনের। এই ২০০৪ জনের মধ্যে পজিটিভ তথা করোনায় আক্রান্ত ছিলো ২শ' ৭৭ জন। যা রিপোর্ট প্রাপ্তির বিবেচনায় ১৩.৮২% লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল তখন। এদিকে ১০ জুন থেকে গতকাল ৮ জুলাই পর্যন্ত এই এক মাসে নমুনা পরীক্ষা আরো ২৮৩৩ যোগ হয়ে তিন মাসে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ১শ' ৬৮ জনের। এর বিপরীতে রিপোর্ট এসেছে ৫ হাজার ৩ জনের। এই ৫০০৩ জনের রিপোর্টের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১শ' ৯৪ জনের। এই রিপোর্ট প্রাপ্তির বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২৩.৮৬%। এদিকে আক্রান্ত ১১৯৪ জনের মধ্যে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে ৬৫৮ জনকে। যা আক্রান্তের বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৫.১০%। অথচ প্রথম দুই মাসে সুস্থতার হার ছিল ২৬.৩৫%।

অপরদিকে গত তিন মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর পর নমুনা টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে এমন সংখ্যাসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা গতকাল ৮ জুলাই পর্যন্ত ৬৬ জন। যা আক্রান্তের বিবেচনায় ৫.৬৭%। আর প্রথম দুই মাসে এ হিসেবে মৃত্যুর হার ছিলো ৮.৩০%। এদিক থেকেও দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

এখানে আরো একটি বিষয় বেশ গুরুত্বের সাথে লক্ষণীয়। কিছুদিন আগেও চাঁদপুরের রিপোর্ট ঢাকা ল্যাবরেটরিতে পেন্ডিং অবস্থায় থাকতো ৯শ' থেকে এক হাজারের মতো। আবার রিপোর্ট আসতেও ১০ দিন ১২ দিন পর্যন্তও সময় লেগে যেতো। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এখন ২ দিনের মাথায়ই রিপোর্ট পাওয়া যায়। রিপোর্ট পেন্ডিং থাকে দুই শ' থেকে আড়াই শ'র মতো। যেমন গতকাল পর্যন্ত রিপোর্ট পেন্ডিং আছে ১৬৫ জনের। এ ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলা যাচ্ছে।

তবে সচেতন মানুষ এবং বিশ্লেষকগণের বক্তব্য হচ্ছে মানুষ যত সচেতন হবে, ততই এই গুপ্ত ঘাতক করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।