• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হরিসভায় শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিওব্যাগ শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

প্রকাশ:  ০৯ জুলাই ২০২০, ১২:০৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার এলাকার শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় হরিসভা এলাকার ভাঙ্গনকবলিত স্থানে জরুরি ভিত্তিতে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও টেঙ্টাইল ব্যাগ। জরুরি ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চাঁদপুর জেলার বৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেঙ্রে সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষসহ পুরাণবাজারবাসী। তারা ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র পুরাণবাজার রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান।


বর্ষা মৌসুমে বিগত ২/৩ বছর ধরে পুরাণবাজার শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে ভাঙ্গন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও তা প্রকট আকার ধারণ করে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায়। আর এ ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায়, প্রতি বছরই বসবাসরত মানুষজন তাদের বাপ-দাদার ভিটে-মাটি হারাচ্ছে, আর নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। গত ৩ জুলাই হরিসভা এলাকার মোড় সংলগ্ন স্থানসহ প্রায় ৩০ মিটার এলাকাজুড়ে শহররক্ষা বাঁধ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বাঁধ রক্ষায় জিও টেঙ্টাইল ব্যাগসহ সিসি বস্নক নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে এলাকাবাসীর মাঝে দেখা দেয় পুনরায় ভাঙ্গন আতঙ্ক। তারা ঘটনাটি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান মহোদয়কে জানান। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। ছুটে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাবুল আক্তারসহ কর্মকর্তাগণ। তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুভব করে ঝুকিপূর্ণ স্থানে জরুরি ভিত্তিতে জিও টেঙ্টাইল বালুভর্তি ব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেন ঠিকাদারের লোকজনদেরকে। কিন্ত এস্থানে বালুভর্তি ব্যাগ ফেলার ওয়ার্ক ওয়ার্ডার না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন গুটি কয়েক ব্যাগ ফেলেই রণে ভঙ্গ দেন। ফলে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় গত ৬ জুলাই হরিসভা এলাকার মোড় সংলগ্ন স্থানটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় ঐতিহ্যবাহী জনপদ হরিসভা এলাকার রাস্তাটি। এ আশঙ্কায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদে এলাকাবাসী যোগাযোগ করেন পৌর যুবলীগ নেতা মালেক শেখের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির সাথে। ভাঙ্গনের সংবাদ পেয়ে ডাঃ দীপু মনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরি কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। তারপর কাজের অগ্রগতি ও ভাঙ্গন পরিস্থিতির নিয়মিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানা যায়। মন্ত্রীর নির্দেশনায় গত ৭ জুলাই রাত ৯টা থেকে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গনস্থলে বালুভর্তি জিও টেঙ্টাইল ব্যাগ ফেলতে দেখা যায়। এখনও এ ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক প্রায় একশ' শ্রমিক এ কাজে কর্মরত রয়েছেন বলে ঠিকাদারের লোকজন জানান।

ডাঃ দীপু মনির জরুরি পদক্ষেপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পুরাণবাজারবাসী জানান, হরিসভা রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। এ সড়কটি যদি বিলীন হয়ে যায়, তাহলে নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী জনপদ।

 


উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই পুরাণবাজার শহর রক্ষাবাঁধের হরিসভা মন্দির সংলগ্ন স্থানে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয়। কয়েক ঘণ্টা ভাঙ্গনের ফলে সেখানে বসবাসরত মানুষের বাড়ি, ঘর, স্থাপনাসহ বিশাল অংশ নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ ২০/২২ বছর পর এ স্থানে এমন ভাঙ্গন দেখে এলাকার মানুষসহ পুরো পুরাণবাজারবাসীর মাঝে ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে, যদি ভাঙ্গন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে তাহলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সেইদিনের ভাঙ্গনকালীন সময় ভাঙ্গনকবলিত স্থানে তড়িৎগতিতে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তাগণ। তারা যুদ্ধকালীন সময়ের মত বিশাল নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পারলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় শহর রক্ষাবাঁধের অনেকাংশ নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। সন্ধ্যা রাতে ভাঙ্গন শুরু হলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় প্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্টের জন্যে। রাত ২টার পর শম্বুক গতিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ শুরু হয়। চাঁদপুরের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ভাঙ্গন সংবাদ শুনে ঘটনাস্থল দেখার জন্য পর্যায়ক্রমে ছুটে আসেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা ঘোষণা দেন বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে বলে। যা শুনে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের মাঝে আশার আলো দেখা দেয়। সেই সময় ভাঙ্গন প্রতিরোধে গ্রহণ করা হয় সাময়িক ব্যবস্থা। কথা ছিলো বর্ষা পার হলে শুকনো মৌসুমে স্থায়ীভাবে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

এরই মাঝে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিকেলে প্রায় আড়াই মাসের মাথায় হরিসভা মন্দির কমপ্লেঙ্রে কিছুটা উত্তরে গিয়ে পুনরায় শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয় (বর্তমান ভাঙ্গনকৃত স্থান)। তলিয়ে যায় বাঁধের পাশে থাকা ক'টি বাড়ি-ঘরসহ বেশ কিছু অংশ। ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ। সেই সময়ও জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও টেঙ্টাইল ব্যাগ ফেলে অবস্থা সাময়িকভাবে সামাল দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছিলো বর্ষা পার হয়ে গেলে শুকনো মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণপূর্বক কাজ করা হবে। কিন্তু সেই সময় বর্ষা পার হওয়ার পরও সময়মত কাজ না করায় এখন আবার পুরাণবাজারের মানুষের মাঝে ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা না হলে, বর্ষা মৌসুমে এ স্থানে প্রমত্তা মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিবে। ফলে ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজারের হরিসভা এলাকাসহ মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি কিছুই রক্ষা করা যাবে না। তলিয়ে যাবে পুরাণবাজারের ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র রাক্ষুষে মেঘনার অতল গর্ভে। তাই প্রমত্তা মেঘনার ভাঙ্গন আতঙ্ক থেকে রক্ষাসহ পুরাণবাজারের শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির আন্তরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন পুরাণবাজারের মানুষ।