• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

শাহরাস্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধ ও অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে এক গৃহবধূর আর্তি

প্রকাশ:  ২২ জুন ২০২০, ১৩:৫৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শাহরাস্তিতে নিজের জমিতে মাটি কাটার সময় ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু নিউজ পোর্টালে সরকারি জমির মাটি কাটা দেখিয়ে অপপ্রচার, লকডাউনে সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে লোকজন বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করা এবং এতে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন এক গৃহবধূ। মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের ভোলদিঘি গ্রামের মনির হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার সীমা শনিবার এসব অপতৎপরতার বিচার চেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনি তার বক্তব্যে জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি ভোলদিঘি গ্রামের মিয়াজী বাড়ি সংলগ্ন স্থানে কেনা সম্পত্তিতে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন। ভোলদিঘি মিয়াজী বাড়ি হতে জনগণের চলাচলের রাস্তা দখলের প্রতিবাদ করায় বেশ কয়েকবার হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভোলদিঘি মিয়াজী বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি সিএস ও বিএস খতিয়ানে ভোলদিঘি মৌজার ২৮৯ ও ৩০৯ দাগে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। উক্ত জায়গা ওই গ্রামের মৃত আঃ জাব্বারের পুত্র মোঃ সফিকুর রহমান গং দখল করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করায় বাড়ির লোকজন সাময়িক পায়ে হেঁটে যাতায়াতের সুবিধার্থে সরকারি খাস জমি হতে ১৫ গজ দূরে (বাড়ির উত্তর পাশে সরকারি রাস্তার দক্ষিণ পাশে) তাদের মালিকানা জায়গা ব্যবহার করে। যা তাদের নিজেদের নামে কেনা খারিজ খতিয়ানভুক্ত ২৭৮ ও ২৬০ নম্বর দাগের জায়গা।

গত ১৫ নভেম্বর ২০১৫ সালে একই বাড়ির মোঃ আজমুল হক, পিতাঃ মৃত আঃ সোবহান সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হালটের সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত করা প্রসঙ্গে শাহরাস্তি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসাঃ জেসমিন আক্তার বানু বরাবর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সামিউল মাসুদ ১৭ জুলাই ২০১৬ তারিখে হালটটি দখলমুক্ত করে জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এর কয়েকদিনের মাথায় সফিকুর রহমান গং সরকারি রাস্তার জায়গা তথা হালটটি পুনরায় দখলে নেন এবং সরকারি রাস্তা উচ্ছেদের কাজে সাহায্য করাকে ফৌজদারি অপরাধ আখ্যা দিয়ে আজমুল হক, তার পুত্র, স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসলাম মাস্টার ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়া শ্রমিকদের আসামী করে আদালতে একটি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে। গত ১১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে 'শাহরাস্তিতে সরকারি রাস্তা উচ্ছেদের পর ফের দখল' শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে গত ২২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে শাহরাস্তির সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিটুস লরেঞ্চ চিরানের ৮৩১ নং স্মারকের সূত্রে পৌর ও মেহের দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান সরেজমিনে দখলের সত্যতা প্রমাণিত হয় মর্মে নোটিস প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে সরকারি রাস্তা অবমুক্ত করতে সফিকুর রহমানকে নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় সরকারি রাস্তার জায়গা অবমুক্ত না করে উল্টো গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে ওই গৃহবধূ সফিকুর রহমানের জায়গা দখল করে মাটি কেটে নেয়ার পাঁয়তারা করছে মর্মে শাহরাস্তি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয়দের সাক্ষ্য প্রমাণ ও কাগজপত্রের ভিত্তিতে উক্ত অভিযোগ বানোয়াট প্রমাণিত হয় ও সফিকুর রহমান জায়গার সঠিক ও বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় তাসলিমার সম্পত্তির উপর আর কোনো বাধা প্রদান করবে না মর্মে থানায় অঙ্গীকারনামা দেন। এসব ঘটনার পরও সরকারি রাস্তার জায়গা দখলমুক্ত না করায় আজমুল হক একই খতিয়ানে বিএস ২৭৮ ও ২৬০ দাগে তার মালিকানা অংশে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে আদালত স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যার কারণে গত ২৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ বেলা ১১টার সময় সফিকুর রহমান লোকজন দিয়ে আজমুল হককে ভোলদিঘি বাজার হতে ঔষধ নিয়ে ফেরার পথে চা দোকানে ডেকে নিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। গত ২০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আজমুল হক হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম ইসলাম বীরউত্তমের নিকট একটি আবেদন করলে তিনি শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হালট উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও আবেদনকারীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে শাহরাস্তি থানায় জিডি নং- ২২০, তারিখ : ০৫-১২-২০১৯ দায়ের হয়।

এসব ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ চলাচলের স্বার্থে সরকারি জায়গা হতে প্রতিবন্ধকতা দূর করে রাস্তাটি উন্মুক্ত করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেয়। গত ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ নিজ মালিকীয় ভূমিতে মাটি ফেলার সময় একই বাড়ির মৃত জয়নাল আবেদীনের পুত্র মোঃ আবু সুফিয়ান, শাহজাহান, শাহজাহানের পুত্র শাহাদাৎ হোসেন রাসেল, মনির হোসেনের পুত্র মোঃ আঃ রহিম ও ফারুক হোসেন তার বসত বাড়ির পূর্ব পাশে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। তিনি গুরুতর আহত হয়ে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় তিনি বিজ্ঞ আমলী আদালত, শাহরাস্তি, চাঁদপুর বরাবর একটি মামলা দায়ের করলে শাহরাস্তি থানার তদন্ত কর্মকর্তা গত ৩১ মার্চ আবু সুফিয়ান, শাহাদাৎ ও রাসেলকে অভিযুক্ত করে ৩২৬, ৩২৩, ৩০৭ সহ বিভিন্ন ধারায় চার্জশীট দেন। সরকারি হালট মুক্ত হওয়ার পর, সরকারি রাস্তা দিয়ে জনগণ ও যানবাহন চলাচল শুরু করলে ঐ রাস্তার মাত্র ১৫ গজ দূরের তাসলিমা বেগমের মালিকানা জায়গার উপর দিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তার প্রয়োজনীতা না থাকায় তিনি উক্ত জায়গায় আবাদ শুরু করেন। এতে ব্যক্তিগত ক্ষোভে পূর্ব শত্রুতার বশে সফিকুর রহমান তার পুত্র আদনানকে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, উস্কানিমূলক ও অরুচিকর পোস্ট এবং ভিডিও আপলোড করে। তাকে (তাসলিমা) সামাজিকভাবে হেয় করতে তাদের জায়গাকে সরকারি জায়গা আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য সেখানে উল্লেখ করে। তাকে বিভিন্ন ভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় বলে তিনি জানান। এছাড়া সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে লোকজন পাঠিয়ে তাকে হয়রানি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকারি ভূমি সফিকুর রহমানের দখলে থাকাকালীন নিজের ক্রয়কৃত ভূমির উপর দিয়ে লোকজনের চলাচলের সাময়িক সুবিধা দেয়ায় আজ তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের জায়গা আত্মসাৎকারী হিসেবে জঘন্যভাবে উপস্থাপন করে তার মান-সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে বলে তাসলিমা বেগম উল্লেখ করেন। করোনা সঙ্কটে আশপাশের বাড়িতে লোকজন আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে লকডাউন চলাকালে বিভিন্ন লোকজনের আনাগোনায় তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা করছেন বলে উল্লেখ করেন।

এমতাবস্থায় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লোকজনের আনাগোনা বন্ধ এবং তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ-প্রচার বন্ধে মাননীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।