• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ঘোষণা ছাড়াই চাঁদপুর বিদ্যুৎ অফিস লকডাউন, গ্রাহক ভোগান্তি চরমে

প্রকাশ:  ০৯ জুন ২০২০, ১০:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর শহরের নতুন বাজারে অবস্থিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এ ঘটনায় শহরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বৈশি্বক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণকালে অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহক অনেকটা নিরূপায় হয়ে বাসা থেকে বের হন। পথে-ঘাটে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও অন্তত বাসায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বিদ্যুৎ বিভাগের দ্বারস্থ হন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওই ভবনের নিচতলার তালা লাগিয়ে অফিসটিকে অঘোষিত লকডাউন করে রেখেছেন।

শুধুমাত্র সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকই নন, চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি প্রয়োজনীয় কাজে তার সাথে ঠিকমত দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছেন না। এ নিয়ে ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে । কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিধায় এ বিষয়ে তারা মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।

এমনিতেই চাঁদপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। চাঁদপুর শহরবাসী প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসলেও গ্রাহক হয়রানি কমেনি। উপরোক্ত বৈশি্বক মহামারী করোনাভাইরাসের দুর্যোগকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্বের উছিলায় গ্রাহক হয়রানির মাত্রা আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় সরজমিনে ওই অফিসে গেলে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ছুটে এসেছেন, তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য। সবাইকেই করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও দেখা গেছে। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস দ্বিতল ভবনের প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেইট তালাবদ্ধ থাকায় কেউ উপরে উঠতে পারছেন না। অনেক ডাকাডাকির পর একজন পিয়ন আসলেও তিনি তার অপারগতা প্রকাশ করেন। তার সোজাসাপটা কথা, তালা খোলার অনুমতি নেই। স্যার এখন মিটিংয়ে আছেন।

অগত্যা এদিক-ওদিক ঘুরাঘুরি করে গ্রাহকরা বিরক্ত হয়ে পড়ছেন। কেউবা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু সবাই অসহায়। কারণ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়টি অঘোষিত লকডাউন।

এই প্রতিবেদক গতকাল ৮জুন (সোমবার) প্রায় ৩০ মিনিট চেষ্টা করে অফিসে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল নাম্বারে কল করেন। দু'বার কল দেয়ার পর তিনি কেটে দেন। এরপর তার মোবাইলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এসএমএস পাঠানো হয়, তাতেও সাড়া মেলেনি।

নিরূপায় হয়ে ওই ভবনের পিয়নকে অনুরোধ করে তার হাতে ভিজিটিং কার্ড দেয়া হয়। সেই সাথে নির্বাহী প্রকৌশলীকে সালাম পৌঁছানোর কথা বলা হয়। বেচারা পিয়ন কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে ভিজিটিং কার্ডটি ফেরত দেন। বলেন, স্যার মিটিংয়ে আছেন। এখন দেখা-সাক্ষাৎ সম্ভব নয়।

চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় তালাবন্ধ করে রাখার বিষয়টি ফোনে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানকে অবহিত করা হয়। প্রত্যুত্তরে জেলা প্রশাসক বললেন, আমি বিষয়টি অবহিত হলাম। উনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। উনি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

বাংলাদেশ পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসাইনকে বেলা ১১টা ৫৭ মিনিটে বিষয়টি অবহিত করা হয়। চাঁদপুরের কৃতী সন্তান মোহাম্মদ হোসাইন ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই চাঁদপুরের মানুষের খোঁজ-খবর নেন। বৈশি্বক মহামারীর এ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। চাঁদপুরে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় অঘোষিত লকডাউন কথা শুনে তিনি কিছুটা বিব্রত হন। তিনি এই প্রতিবেদককে লাইনে রেখেই নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন দিয়ে জানতে চান, তিনি অফিসে আছেন কিনা। চাঁদপুরের একজন সিনিয়র সাংবাদিক তার কার্যালয়ের নিচতলায় দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাই দ্রুত তার সাথে সাক্ষাতের নির্দেশ দেন।

খানিক পর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ইকবাল এই প্রতিবেদককে কলব্যাক করেন। তিনি উপরে যাওয়ার জন্যে বলেন। কিন্তু প্রধান ফটকে তালাবদ্ধ থাকায় উপরে উঠা সম্ভব হচ্ছিল না। এমতাবস্থায় গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মচারী এই প্রতিবেদককে চিনতে পেরে পিয়নকে ডেকে এনে তালা খুলে দেয়ার জন্য বলেন। পিয়নের জবাব , 'স্যার আমাকে তালা খুলতে বলেনি। অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।' শেষতক পিয়নকে অনুরোধ করা হলো 'স্যারের' অনুমতি নিয়ে আসার জন্যে। অবশেষে অনুমতি পাওয়া গেল, পিয়ন গেট খুলে দিলেন।

চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে সালাম বিনিময়ের পর তাকে প্রতিবেদকের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত জটিলতার কথা জানানো হয়। তিনি মিটার নম্বর জেনে নিয়ে তার ব্যবহৃত কম্পিউটারের মাধ্যমে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে সমাধান করে দেন। কিন্তু এই এক মিনিটের কাজটি সারতে গিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভাগে সময়ক্ষেপণ করতে হয়েছে।

'বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় অঘোষিত লকডাউন!' সম্পর্কে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গতকাল বেলা পৌনে ১টায় নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ফোনে জানতে চান। এ সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম ইকবাল ভবনের প্রধান ফটকের কলাবসিবল গেইটে তালাবদ্ধ রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওই সময়ে তিনি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে থাকায় গ্রাহকদের সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকেন। তখন প্রেসক্লাব সেক্রেটারি নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেন, আপনি মিটিংয়ে থাকতেই পারেন, সেটা তো কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু গ্রাহকরা গেলে আপনার অন্য অফিসারদের সাথে কথা বললেও তো সমস্যার সমাধান করা যায়। সে সুযোগ থেকে কেনো গ্রাহকদের বঞ্চিত করবেন। তখন তিনি বললেন, সে সুযোগ তো অবশ্যই আছে। কিন্তু নিচতলার গেইটে তালা লাগানো থাকলে কীভাবে উপরে ওঠা যাবে ?