একদিনেই পাল্টে গেল চাঁদপুরের চিত্র
প্রকাশ: ১২ মে ২০২০, ১১:১৯
অধ্যাপক রতন কুমার মজুমদার


করোনা সংকট শুরুর পর থেকেই নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালি ডাক্তার করোনা বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার নিয়মিতভাবে দুই বেলা লাইভে করোনা মহামারির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লাইভে কথা বলেন। ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশে মানবিক ডাক্তার ফেরদৌস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
গতকয়েকদিন থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে তার সাথে আমার বিভিন্ন বিষয় কথা হয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সারাবিশ্বে যেহেতু এর কোন প্রতিষেধক এবং ঔষধ আবিস্কার হয়নি তা হলে এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার উপায় কি ? তিনি সোজা উত্তর দিলেন উপায় একটাই-- লকডাউন- লকডাউন- লকডাউন। সেটার ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন কেন লক ডাউনে যেতে হবে।
আসি এবার চাঁদপুর প্রসঙ্গে। প্রথম পর্যায়ে চাঁদপুর লকডাউন ঘোষনার পর মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসন , পুলিশ, সেনাবাহিনী সক্রিয় হয়ে মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা করে। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক মানুষ ঘরে থাকতে বাধ্য হয় এবং লকডাউনের সফলতা পাওয়া যায়। কিছু দিন যেতেই মানুষকে আর ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি । প্রশাসনও একটু শিথিলতা প্রদর্শন করেছে বলে মনে হয়েছে। এই সুযোগে মানুষ পিপড়ের মত ঘর থেকে বের হয়ে আসতে থাকে। অটোরিক্সাগুলো , সিএনজিগুলো রাস্তায় নেমে পরে। ফলাফল যা হবার তাই হলো। লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা রোগীর সাংখ্যা বাড়তে লাগলো। ব্যাপক হারে ডাক্তার পুলিশ প্রশাসনের লোকসহ মানুষ আক্রান্ত হওয়া শুরু হলো।
এ অবস্থা দেখে শহরের সচেতন মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। এ নিয়ে চাঁদপুর শহরের সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলো কেন লকডাউন কার্যকর করা যায়নি। তারই প্রেক্ষিতে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ৯ মে থেকে আবার লাকডাউন শুরু হলো। শহরে মাইকিং করা হলো। ১০ তারিখ বেলা ১০ টা পর্যন্ত লকডাউনের তেমন কার্যকরিতা দেখা যায়নি। হঠাৎ করে ১০ টার পর পরই চাঁদপুর শহরের চিত্র পাল্টে যায়। বাসায় বসে খবর নিয়ে জানতে পারলাম প্রশাসন , পুলিশ , আর্মি এবং কিছু সেচ্ছাসেবী শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং মোবাইল কোট বসিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। নিমিষেই চাঁদপুর শহর ফাঁকা হয়ে গেল। প্রশাসনের এ কঠোর অবস্থানের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরিমধ্যে চলে এসেছে। নিজে নিজেও খুশী হলাম। ১১ তারিখ তো যা দেখলাম তা প্রশংসা করার মত। রীতিমত রাস্তার বের হলেই প্রশাসনকে কৈফিত দিতে হয়েছে। শহর থেকে অটো সিএনজি উধাও। লকডাউন শতভাগ সফল। শহরের মানুষও প্রশংসা করেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কৃতজ্ঞতা সহ ধন্যবাদ দিতেই হয়। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা মনে করি।
আগেই বলেছিলাম একটা শহরকে লকডাউনে নিতে হলে কিছু ব্যবস্থা নিতে হয় । প্রশাসন , পুলিশ আর্মির কঠোরতা দেখাতে পারবে কিন্তু সমাজিক সহায়তা লাগবে। লকডাউনে জনসম্পৃক্ততা লাগবে। কিছু সেচ্ছাসেবীকে দেখে ভাল লাগলো তারাও জীবনের ঝুকি নিয়ে চাঁদপুরকে রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমে এসেছে। প্রশাসন পুলিশ আর্মির পাশাপাশি এই তরুনরাও যথেষ্ট শ্রম দিয়েছে। এমন জনসম্পৃক্ততা আরো বাড়াতে হবে। এই সমস্ত তরুনদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , ভিয়েতনাম দক্ষিণ কোরিয়া, মালদ্বীপ করোনাকে জয় করেছে কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে। ভিয়েতনামে চীন দেশের একজন মহিলা ব্যবসায়ী যিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন একটি ফ্লাইটে ইউরোপ থেকে ভিয়েতনাম এসেছেন। ভিয়েতনাম এসেই তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ভিয়েতনাম প্রশাসন তাৎক্ষনিক ঐ চীনা নাগরিককে আইসোলেশনে নিয়েছে এবং ঐ ফ্লাইটে যে ৪০০ যাত্রী ছিল প্রত্যেককে ডেটাবেজ ধরে খুজে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে গেছে। বিমানবন্দর লক করে দেয়া হয়েছে। এক লকডাউনে সফলতা এসেছে ভিয়েতনামে।
চাঁদপুরের লকডাউনকে কার্যকরী করতে হলে আমার কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরলাম।
১। অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যানেডর মত প্রতিটি পরিবারের একজনের নামে একটি পাস দেয়া যেতে পারে। যেটা করবেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। জরুরী প্রয়োজনে ঐ ব্যাক্তি পাস নিয়ে বের হতে পারবেন কাজ সেরে দ্রুুত আবার ফিরে আসবেন।
২। প্রতিটি পাড়ায় ৫ জন সেচ্ছাসেবক এবং কমিউনিটি পুলিশ দিয়ে কমিটি করে পাহাড়ায় থাকবেন । যাতে করে অপ্রয়োজনে কেউ রাস্তায় নামতে না পারে। প্রয়োজনে জরুরী ঔষধ এবং সামগ্রী সেচ্ছাসেবীরা সরবরাহ করবে ।
৩। প্রশাসনকে সহয়াতরার জন্য আরো কিছু তরুন সেচ্ছাসেবীকে সংম্পৃক্ত করলে ভাল হবে।
৪। কোথাও কোন করোনা রোগী সনাক্ত হলে তার পরিবারের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে।
৫। বাজারকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। প্রতি পরিবার থেকে যখন একজন পাস পাবে তখন এমনিতেই সমাগম কমে যাবে। এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় বাজার করতে যেতে পারবে না।
৬। রাস্তাঘাটে বিনা প্রয়োজনে ঘোরঘুরি করা কিছু তরুনকে ধরে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দিলে আমার ধারনা বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় নামা বন্ধ হয়ে যাবে।
৭। যে সমস্ত কর্মকর্তা যেমন প্রশাসন , পুলিশ , আর্মি , সেচ্ছাসেবী আছে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে সর্বাগ্রে।
সূত্র : অধ্যাপক রতন কুমার মজুমদারের ফেসবুক থেকে।