চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ
করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির বীর যোদ্ধা চিকিৎসকগণ
সাথে রয়েছেন নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মী


কোভিট-১৯ বা আতঙ্কের ভাইরাস 'করোনায়' চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগ। ৩০ শয্যা বিশিষ্ট এ আইসোলেশন বিভাগে শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বা আক্রান্ত রোগীকে যারা চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরাই হচ্ছেন এ করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির সেই বীর যোদ্ধা। এই চিকিৎসকগণ পরিবার-পরিজন থেকেও দূরে। তাদের থাকার জন্যে চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কস্থ হোটেল গ্র্যান্ড হিলশাকে ছেড়ে দিয়েছে দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এটাও মানবতার সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখলো হোটেল হিলশা কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, করোনা নামক ভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কায় তা প্রতিরোধে চাঁদপুরেও প্রস্তুত করা হয় এই রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট। যার নাম সারাদেশের মতো করে দেয়া হয় আইসোলেশন বিভাগ।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে মূল ভবনের পাশেই তৃতীয় তলা বিশিষ্ট এ ভবনটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস করোনা। যে কারণে পূর্ব থেকেই সম্পূর্ণরূপে আলাদা ভবনে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। আর তাদের সেবার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা দায়িত্বকালীন সময়ে এ ভবন থেকে বের হতে পারবেন না, এমনভাবে এ আইসোলেশন বিভাগটি তৈরি করা হয়। আর দায়িত্বকালীন সময়েও তাঁরা একেবারেই সুরক্ষিত অবস্থায় থাকবেন।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের করোনাভাইরাস বিষয়ক ফোকালপার্সন এবং এ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক আরএমও ডাঃ মোঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে গত ২৯ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন, বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৫ জন। ২ জন করোনায় আক্রান্ত। বাকী তিন জনের রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায়। বাকী ১৮ রোগীর মধ্যে ১ জন কিশোরী মারা যায়। অবশ্য এ রোগীর মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্যে প্রেরণ করা হলে তা পজিটিভ পাওয়া যায়
করোনা বিষয়ে প্রতিটি মুহূর্তে রোগী, ডাক্তারসহ সকলের সাথে সমন্বয়ের দায়িত্বে বা ফোকালপার্সন হিসেবে কাজ করছেন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। এছাড়া হাসপাতালের ফ্লু কর্নারের দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের অপর আরএমও ডাঃ আসিবুল আহসান ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান।
এ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হওয়া রোগীদেরকে এবং সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ নোমান হোসেন, ডাঃ মোঃ আহসান উল্লাহ, ডাঃ নাহিদ সুলতানা, ডাঃ হাসিনুর রহমান, ডাঃ মোঃ কামাল হোসেন ও ডাঃ মোঃ সিরাজুম মুনির। এসব চিকিৎসক বলতে গেলে জীবনের মায়া ত্যাগ করে রোগীদের চিকিৎসাসহ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিবার পরিজন থেকেও দূরে থাকছেন।
এছাড়া সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি যাদের থাকে অর্থাৎ নমুনা সংগ্রহকারী, এরা সপ্তাহে ৭ দিন প্রতিদিন ২ জন করে ১৪ জন পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। এরা হচ্ছেন : রোববার আঃ মালেক মিয়াজী ও মোঃ সোলাইমান হোসেন; সোমবার সিরাজুল ইসলাম ও খান মোঃ রিয়াজ; মঙ্গলবার নাজির আহমেদ ও মোঃ মনির হোসেন; বুধবার ফয়েজ আহমেদ ও মোঃ সোলাইমান হোসেন; বৃহস্পতিবার মালেক মিয়াজী ও ফয়েজ আহমেদ; শুক্রবার সিরাজুল ইসলাম ও খান মোঃ রিয়াজ এবং শনিবার মোঃ নাজির আহমেদ ও মোঃ মনির হোসেন।
এ বিভাগে নার্স বা সেবিকার দায়িত্বে রয়েছেন কাজল মালাকার, মাসুম রাব্বানী, মোঃ ফারুক, লতিফা বেগম ও সালমা আক্তার।
ব্রাদার হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তারা হচ্ছেন : দিল মোহাম্মদ, আবুল খায়ের, আবুল কালাম আজাদ, গোলাম সারওয়ার, সালামত উল্লাহ, আব্দুর রশিদ ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
এ বিভাগের ওয়ার্ড বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন আসমা আক্তার, নীরব হোসেন, রামবাবু, শান্তা আক্তার ও তাসলিমা বেগম।
এ সকল চিকিৎসক, নার্স বা সেবিকা, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ওয়ার্ডবয়সহ দায়িত্ব পালনকালীন উল্লেখিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া, তাদের সাথে সরাসরি কথা বলা, নমুনা সংগ্রহ করাসহ সকল বিষয়ে সরাসরি সম্পৃক্ত।
এরাই এখন করোনা যুদ্ধের প্রথম সারির যোদ্ধা। যারা পরিবার-পরিজনের কথা বাদ দিয়ে এবং নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষকে সেবা দিয়ে সুস্থ করার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
উলি্লখিত ব্যক্তিগণ এ আইসোলেশন বিভাগে সন্দেহভাজন বা এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৭ দিন অথবা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন শেষে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ হোটেল গ্র্যান্ড হিলশায় ১৪ দিন হোমকোয়ারেন্টিনে থাকার পর বাসায় চলে যান। ৭ দিন পরিবারের সাথে সময় দিয়ে পুনরায় কাজে যোগদান করেন।
উল্লেখিতরা কেউ হোমকোয়ারেন্টাইনে, কেউ পরিবারের সাথে, কেউ পুনরায় কাজে যোগদান করেছেন এবং কেউ দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া জেলার ৮টি উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতি মুহূর্তে সমন্বয় করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা বা সচেতনতার বিষয়ে সমন্বয় করে চলছেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ।