পুরাণবাজারে ২৭শ' বস্তা চাল নিয়ে ট্রলার উধাও


চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের ভূঁইয়ার ঘাট থেকে ব্যবসায়ীদের ২৭শ' বস্তা চাল নিয়ে রাতের অন্ধকারে উধাও হয়ে গেছে চাল পরিবহনকারী ট্রলার। ট্রলারের সন্ধানসহ চাল উদ্ধারে থানায় জিডি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাল ব্যবসায়ী। চাল ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক। অবিলম্বে চাল উদ্ধারসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজমুল আলম পাটওয়ারী। ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র পুরাণবাজারে চাঁদপুর জেলাসহ আশেপাশের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের চাহিদা পূরণে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ট্রাক, ট্রলার, নৌকাসহ বিভিন্ন পরিবহনযোগে ডাল, চাল, তেল, আটা, ময়দা, চিনিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল আমদানি-রপ্তানি হয়ে আসছে। পুরাণবাজারে এ সকল আমদানিকৃত অধিকাংশ মালামালই এসে থাকে নৌপথে। এ সকল মালামাল ব্যবসায়িক সুবিধার্থে ব্যবসায়ীগণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে না তুলে অনেকসময় নৌকা বা ট্রলারে রেখেই পাইকারী ক্রেতা সাধারণের নিকট বিভিন্ন পন্থায় ডেলিভারী দিয়ে থাকেন। এভাবেই চলে আসা আমদানি রপ্তানি নির্ভর পুরাণবাজারে এ যাবৎকালে কখনো মালামাল নিয়ে মাঝি উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছে গত ২৮ এপ্রিল আনুমানিক রাত ৩টার সময়। ২৭০০ বস্তা চাল নিয়ে উধাও হয়ে যায় সোনার মদিনা নামে একটি ট্রলার। যার মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
গত ১০/১২ দিন পূর্বে পুরাণবাজারের চাল ব্যাবসায়ী পরেশ মালাকার, শম্ভুনাথ সাহা, আলহাজ্ব আবুল কাসেম, মোঃ সেলিম খান, রোটারিয়ান রিপন সাহা, আনিছ বেপারী, মফিজ বেপারীসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর ৫হাজার ৭ শ' বস্তা চাল নিয়ে সোনার মদিনা বলগেড-২ নামে একটি ট্রলার নগর বাড়ি ঘাট থেকে চাঁদপুর পুরাণবাজারে আসে এবং পুরাণবাজার ভূঁইয়ার ঘাট এলাকায় নোঙ্গর করে। ব্যবসায়ীদের চাহিদানুযায়ী প্রায় ৩ হাজার বস্তা চাল তারা ট্রলার থেকে রপ্তানি দেন। এমনি পরিস্থিতিতে গত ২৮ জুলাই ট্রলারে থাকা বাকি চাল রপ্তানি দিতে গিয়ে চালের মালিকগণ দেখতে পান ভূঁইয়ার ঘাট এলাকায় থাকা চালের ট্রলারটি নেই। সাথে সাথে তারা ট্রলার মালিকসহ ট্রলারের মাঝির সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তারা ট্র্রলারের মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে পারলেও মালিক সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ট্রলার মাঝির উপর দোষ চাপিয়ে দেন। বিষয়টি বেগতিক দেখে চাল উদ্ধারে ক্ষতিগ্রস্ত চাল ব্যাবসায়ীদের পক্ষে পুরাণবাজার আড়তপট্টির মেসার্স সেলিম খান এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ সোলিম খান বাদী হয়ে গতকাল চাঁদপুর মডেল থানায় ট্রলারের মালিক হুমায়ুন বেপারী ও ট্রলারের মাঝি মিলনকে বিবাদী করে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন।
চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজমুল আলম পাটওয়ারী বিস্ময় প্রকাশপূর্বক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের এ পর্যন্ত এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। পুরাণবাজারে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন মোকাম থেকে কোটি কোটি টাকার মালামাল নৌপথে আমদানি হয়ে থাকে, যা আমরা নৌকা বা ট্রলারে রেখেই রপ্তানি দিয়ে থাকি। কখনো এমন ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা যদি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার বা চাল উদ্ধার করতে না পারি তাহলে দুষ্ট চক্রের সাহস বেড়ে যাবে এবং আমাদের আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা দিবে নিরাপত্তাহীনতা। তাই অবিলম্বে উধাও হওয়া চাল উদ্ধারে তিনি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। উধাও হওয়া ট্রলারে পরেশ মালাকার, আলহাজ্ব আবুল কাশেম, মোঃ সেলিম খান, আনিছ বেপারী, মফিজ বেপারী ও শম্ভুনাথ সাহার ২৭শ' বস্তা চাল রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিদিনই পুরাণবাজার ব্যবসায়িক এলাকার নদীবেষ্টিত ঘাটে কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে আসা ট্রলার বা নৌকা রাতের অন্ধকারে অবস্থান করলেও তাদের নিরাপত্তায় তেমনভাবে কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়ে না। এমনকি অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানেই এ সকল নৌকা ও ট্রলার নোঙ্গর করে মাঝিদের রাত যাপন করতে হয়। প্রতিদিন ঘাটে মালামাল পরিবহনকারী কী পরিমাণ ট্রলার বা নৌকা অবস্থান করে তারও কোনো সুষ্ঠু পরিসংখ্যান নেই বলেও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান। কোটি কোটি টাকার মালামাল আমদানিকৃত এ সকল পরিবহনের যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে যেকোন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে বলে কোনো কোনো ব্যবসায়ী মনে করেন।