• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

পানিমিশ্রিত দুধ বিক্রেতাদের প্রতারণার শিকার রোজাদাররা

প্রকাশ:  ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১৩:০৬ | আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১৩:১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

রোজা আসলেই গরুর দুধের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দরিদ্র কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবার সেহরির খাবারে চেষ্টা করেন গরুর তরল দুধ দিয়ে ভাত খেতে। সেজন্যে চাঁদপুর শহরের অধিকাংশ রোজাদার পরিবারগুলো খাঁটি গরুর দুধের আশায় ধর্ণা দেন চরাঞ্চল থেকে আসা গোয়ালাদের কাছে। একটু ভালো দুধের জন্যে সকাল ১০টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত বাজার ঘুরে বেড়ান। কিন্তু খাঁটি ও ভেজালমুক্ত গরুর দুধ কি এসব ক্রেতার হাতে মিলে? একবাক্যে বলা যায়, মিলে না। আর যা মিলে তাতে ভেজাল ও পানি মেশানোই বেশি থাকে। বিশেষ করে এবারের রোজায় পানিমিশ্রিত দুধ ঘরে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে রোজাদারদের।


কেবল রোজাই নয়, সারাবছরই শহরের পুরাণবাজার, নতুনবাজারের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় খাঁটি গরুর দুধের নামে ক্রেতাদের কাছে পানিমিশ্রিত দুধ বিক্রি করে প্রতারণা করে আসছে পাইকারি ও খুচরা দুধ বিক্রেতারা।

একটি সূত্রে জানা যায়, শহরের বড় বড় মিষ্টির দোকানে ছানা পরিমাণে কিছুটা ভালো দুধ কেবল তারাই পেয়ে থাকেন। অন্যসব ক্রেতাসাধারণ পানিমিশ্রিত দুধে প্রতারিত। ৫০/৬০ টাকা কেজি দরে দুধ কিনে তারা সেহরি খাবারের সময় ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

ক্রেতারা জানায়, প্রতিদিন মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড় রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর ও শরিয়তপুরের চরাঞ্চল থেকে ড্রামভর্তি বিপুল পরিমাণ গরুর দুধ চাঁদপুর নদীবন্দরের পুরাণবাজার ১নং ঘাট, ভঁূইয়ারঘাট, মদিনা মসজিদ ট্রলারঘাট, কয়লাঘাট, বাকালীপট্টি ও বড়স্টেশন ট্রলারঘাট দিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে গোয়ালারা ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে থাকে। কিছু চিহ্নিত গোয়ালা তাদের ১ মণ দুধে ৫ কেজি পরিমাণ পানি মিশিয়ে আনছে। এদের দুধেই এখন রোজাদার পরিবারগুলো বেশি প্রতারণার শিকার।

চরের গোয়ালা সফিক, খোরশেদ, ইমান, রৌশন আলী, আমির খাঁ, শাহজাহানসহ আরো অনেকে পানি ও ভেজাল দুধ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইট-বালু ব্যবসায়ী মিজান মোল্লা নামে নিয়মিত একজন দুধ ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১০ টাকা কেজিতেও দুধ বিক্রি করতে পারছে না। দাম না পাওয়ায় গোয়ালারা দুধ ফেলে দিচ্ছে। অথচ আমরা ৫০/৬০ টাকা দিয়ে পানি দুধ কিনে খাই।

তিনি আরো জানান, ভোর রাতে সেহরির সময় আমরা রোজাদাররা তরকারি যাই থাকুক, দুধ দিয়ে একটু ভাত খাই। কারণ সারাদিন রোজা থেকে আল্লাহর ইবাদতে আমাদের কাছে স্বস্তিবোধ হয়। সেই দুধে পানি থাকলে খাওয়ায় কোনো স্বাদ পাই না। খাঁটি বলে আমাদের কাছে দুধ বিক্রি করা হয়। এভাবে চাঁদপুর শহরে গরুর দুধ বিক্রির স্থানগুলোতে চলছে ক্রেতা ঠকানোর প্রতিযোগিতা।

রোজার শুরুর আগ থেকে শহরের যেসব স্থানে গরুর দুধ বিক্রির পসরা বসে থাকে বা ফেরি করে যেসব দুধ বাসা বাড়িতে দেয়া হয়, সেখানে খাঁটি দুধের অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্যে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছেন ক্রেতারা। স্যানিটারী কর্মকর্তাকে ল্যাকটোমিটার ব্যবহার করে দুধের ঘনত্ব নির্ণয়ে অভিযান চালানোর দাবি করেছেন সচেতন মহল।

তারা বলেন, খাদ্যে এভাবে ভেজাল মেশালে মানুষ সুস্বাস্থ্য নিয়ে জীবন নির্বাহের নিশ্চয়তা কীভাবে পাবে? তাই মানুষের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসনের ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার জন্যে মত দেন তারা।