• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

ছেলে হত্যায় পিতাই বাদী ও বিচারপ্রার্থী

হাইমচরে মিস্টার হত্যায় দু'জন আটক আপন বড় ভাই চুক্তিতে হত্যা করায় ছোট ভাইকে

প্রকাশ:  ২৮ এপ্রিল ২০২০, ১৩:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরপোড়ামুখী গ্রামে হাসিম রাঢ়ীর পুত্র মিস্টার (৩৮) রাঢ়ী হত্যা মামলায় আল-আমিন (১৬) ও রবিন (১৬) কে আটক করেছে হাইমচর থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য ও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। মিস্টার হত্যার মূল হোতা এবং পরিকল্পনাকারী তারই আপন বড় ভাই আকতার।

হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম খান জানান, মিস্টার রাঢ়ী হত্যা মামালায় সন্দেহজনক হিসেবে দু'জনকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটক আল-আমিন ও রবিন হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি জানান, হত্যার শিকার মিস্টারের বড় ভাই আকতারের সাথে হত্যাকারীদের ৬ লাখ টাকা চুক্তিতে মিস্টারকে হত্যা করার চুক্তি হয়। এ টাকার লোভে তাকে হত্যা করা হয় বলে আটক আল-আমিন ও রবিন আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়।

জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল বুধবার বিকেল ৫টায় চরপোড়ামুখী বাদশা রাঢ়ী সুপারী বাগানে মিস্টার রাঢ়ীকে হত্যা করা হয়। ২৩ এপ্রিল সকালে মিস্টারের লাশ এলাকাবাসী দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়। পরে হাইমচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ও হত্যায় ব্যবহৃত রুমাল এবং লাঠি উদ্ধার করে।

২৩ এপ্রিল মিস্টারের পিতা হাসিম রাঢ়ী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ করে হাইমচর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৬ তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০২০খ্রিঃ

এরপর হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মরিয়া হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে গোপন তথ্য ও সন্দেহজনকভাবে ২৬ এপ্রিল রোববার আল-আমিন (১৬) ও তার জেঠাতো বোনের ভাগিনা রবিন কাজী (১৬) কে আটক করে পুলিশ। তাদের উভয়ের বাড়ি চরপোড়ামুখী গ্রামে।

আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আল-আমিন ও রবিন জানায়, নিহত মিস্টারের বড় ভাই আকতারের সাথে তাদের ৬ লাখ টাকা চুক্তি হয় মিস্টারকে হত্যা করার জন্যে। তারা এসব কথা আদালতে স্বীকার করে।

হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম জানান, মিস্টার হত্যায় আটক আল-আমিনের তথ্য মতে জানা গেছে, মিস্টারকে হত্যা করলে তার আপন বড় ভাই আকতার রাঢ়ী আল-আমিন, রবিন ও পলাতক (নাম প্রকাশ করা হলো না) একজনসহ মোট ৩জনকে ৬ লাখ টাকা দিবে এমন চুক্তিতে তারা এ হত্যার মিশন চালায়। এরপর তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তার সহযোগী রবিনকে আটক করা হয়।

এদিকে মিস্টারের বড় ভাই আকতার ও অপর আসামী পলাতক রয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে অপর আসামীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি।

মিস্টার হত্যা মামলায় আটক আল-আমিন ও রবিনকে গতকাল সোমবার চাঁদপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। পলাতক রুমালওয়ালা এবং মিস্টারের ভাই আকতারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মিস্টার রাঢ়ী হত্যাকা- বিষয়ে এলাকাবাসী জানায়, সম্পত্তির লোভে হয়তো এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মিস্টার ও আকতার দু'ভাই এলাকায় বিভিন্ন মানুষজনের সুপারী বাগান লীজ (কট চুক্তিতে) নিয়ে ব্যবসা করতো। দু'ভাইয়ের ব্যবসা আলাদা ছিল।

সূত্রটি আরো জানায়, সুপারীর বাগান কট চুক্তি ব্যবসা করে উভয়েই বেশ কিছু নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন। দু'বছর পূর্বে মিস্টারের মা মারা যান। দু'জনেই অবিবাহিত। বাবা হাসিম রাঢ়ী বার্ধক্য অবস্থায় আছেন। এলাকায় মিস্টার বা তার ভাইয়ের প্রকাশ্য কোনো শত্রুতা সম্পর্কে এলাকাবাসীর তেমন ধারণা নেই।

হত্যাকা-ে জড়িত আল-আমিনের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, তার ভাগিনা এবং মিস্টারের আপন ভাইয়ের পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়।


হত্যায় জড়িতের দেয়া তথ্য মতে, গত ২০ এপ্রিল বুধবার মিস্টার কাজ শেষে বিকেল বেলা আল-আমিনের আমন্ত্রণে পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনা মোতাবেক পার্শ্বর্বর্তী বাগানে যায়, সেখানে যাওয়ার পর হামলাকারী মামা-ভাগিনা (দু'জনই আটক) ও পলাতক রুমালওয়ালা মিস্টারকে মাথায় আঘাত এবং মুখে রুমাল গুঁজে হত্যা নিশ্চিত করে।