জয় জয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৪৩
টুটুল মজুমদার
প্রিন্ট
বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে যে সংগঠনটি মানুষের বিপদের বন্ধু হয়ে সব সময় পাশে দাঁড়ায় সেই সংগঠনটির নাম ছাত্রলীগ ।
বয়সে নবীন বা কিশোর বলেই হয়ত এরা সকল বাধা বিপত্তি ভয়কে সহজেই জয় করতে পারে। এদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সংকটে এরা অগ্রগামী, এই তরুণের দল ছাপিয়ে যায় সকল কিছুকে। তারুণ্যের প্রথম ভালবাসা বলা হয় ছাত্রলীগকে।
আমি নিজেও ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী ছিলাম, রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ আজও স্মৃতিতে নাড়া দেয় ৷ নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে গর্ব বোধ করি। প্রাণপ্রিয় সংগঠনটির যখনই কোন ভাল খবর শুনি ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান সকল নেতা কর্মীর মত আমিও আনন্দ অনুভব করি। যদিও বিষয়টি অপ্রিয় হলেও সত্য এদেশের বেশিরভাগ মিডিয়া-প্রচার যন্ত্র, তথাকথিত সুশীল সমাজ ছাত্রলীগের ভাল কাজগুলো কখনও সেভাবে প্রচার করে না ৷
পিতা মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যা দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সর্ব বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। ১৯৪৮ সনের ৪ঠা জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি এই সংগঠনটি বাংলাদেশের সকল সংকটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাহির থেকে অনেকে এই সংগঠনটি নিয়ে অনেক কথা বলে। আমার নিজ অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকে যদি বলি এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ত্যাগের সংগঠন। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের মত এত ত্যাগ এত শ্রম কোন সংগঠনের নেতা কর্মীদের সংগঠন করতে গিয়ে দিতে হয় নাই। ছেলে মেয়েদের বাবা মায়ের টাকা দিয়ে করা সংগঠনের নাম ছাত্রলীগ। সারাদিন মিছিল মিটিং করে না খেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরা ছেলেটির নাম ছাত্রলীগ। নিজের সর্বোচ্চ নিয়ে গরীব দুঃখী মানুষের বিপদের পাশে দাড়ানো ছেলেটির নাম ছাত্রলীগ। এছাড়া এলাকার কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে ছাত্রলীগ, কারো মেয়ে রাস্তায় বেরুলে বখাটেরা বিরক্ত করে বখাটেদের রুখবে কে ? ছাত্রলীগ, গরীবের মেয়ের বিয়ে, অসুস্থ্য হলে সাহায্য তুলে পৌঁছে দিবে কে ছাত্রলীগ।
নিজের পড়ালেখার সাথে দেশের জন্য দশের জন্য সেবা করা ছেলেটি যখন নিজের জীবিকানির্বাহের জন্য চাকুরি বা ব্যবসার খোজে কোথাও যায় তখন শুধুমাত্র ছাত্রলীগ করার জন্য তাকে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। নিজ দল ক্ষমতায় থাকার পরেও সরকারি চাকুরীতে লিখিত ভাইবা পাশ করেও চাকুরী জোটেনা এমন উদাহরন অগনিত। যেই ছেলেটি পাড়া প্রতিবেশীর সকল বিপদে পাশে ছিল, সেই ছেলেটির যখন বিয়ের জন্য মেয়ের বাড়ি থেকে প্রতিবেশীদের কাছে খোজ খবর জানতে চাওয়া হয় তখন উপকারভোগী প্রতিবেশীরা অবলিলায় বলে দেয়, ছেলে ভালো না ছাত্রলীগ করে। ছাত্রলীগ করার দায় শুধুমাত্র ছেলেটিকে নয় তার পরিবারকে বহন করতে হয়। এছাড়া বিরোধী দলের নির্যাতন অত্যাচার, নিজ দলীয় গ্রুপিং তো আছেই।
ছাত্র রাজনীতি করার কারনে এদেশের অগনিত মেধাবী তরুনের জীবন ধ্বংসের পথে চলে গেছে শুধুমাত্র নিজ দলের নেতাদের উদাসীনতা ও আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারনে। এতকিছুর পরে এখনও লাখ লাখ তরুণ এই সংগঠনটির প্রেমে পড়ে, ভবিষ্যত অনিশ্চিত জেনেও ঝাপ দেয়, ভালবাসে ছাত্রলীগ।
এতো ত্যাগ এতো শ্রমের বিনিময়েও অনেক কথা শুনতে হয় এই সংগঠনটিকে। প্রয়োজনে সবার প্রিয় ছাত্রলীগ, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই আর খোজ মিলেনা। সিন্ডিকেট করে এই ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে অনেক নেতাই কোটি টাকার সাম্রাজ্য গড়েছেন, বিনিময়ে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা পেয়েছেন বনরুটি-কলা-চা। যখনই ছাত্রলীগ অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে তখনই সে তার সক্রিয়তা হারিয়েছে। আর যেটুকু হারিয়েছে সেটা হল দুর্বল নেতৃত্ব, সংগঠনে যোগ্য নেতৃত্ব থাকার পরেও নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দুর্বল নেতৃত্ব নির্বাচন। এগুলো ছাত্রলীগকে বিব্রত করেছে, যদিও ছাত্রলীগের ত্যাগের মহিমা এর চাইতে অনেকগুন। তারপরেও আমাদের সমাজের তথাকথিত সুশীলরা ছাত্রলীগের সুনামের চাইতে বদনাম করতেই বেশী পছন্দ করেন।
আজ চারিদিকে যখন এমন সংকট, অদ্ভুত এক আধার নেমেছে, সবাই যখন নিজেকে নিরাপদ রাখতে খাঁচায় ঢুকেগেছেন। খেয়াল করে দেখেন, এহেন পরিস্থিতিতে প্রথম দিন থেকেই মাঠে ছিল ছাত্রলীগ। করোনা ভাইরাস, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন এসকল শব্দের সাথে একদম অপরিচিত ছিল না দেশের মানুষ ৷ প্রথম থেকেই ছাত্রলীগ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে মাঠে থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজটি সুন্দর ভাবে করে গেছেন। এরপর অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রান পৌঁছে দিয়ে আসছেন, অসুস্থ্য মানুষের পাশে ঔষধ পৌঁছে দেওয়া, প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা মারা গেলে নিজের জীবন বিপন্ন করে দাফন করার কাজটিও করছেন ছাত্রলীগ।
এখন বাংলার কৃষক যখন পাকা ধান ঘরে তোলার জন্য কোন শ্রমিক পাচ্ছেনা, তখনও কৃষানীর বিপদের বন্ধু হয়ে পাশে দাড়ালেন ছাত্রলীগ। পাকা ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা। সত্যি গর্ব হয় আমার ভাইদের জন্য। ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এই সংগঠনটি তোমাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
আজ মনে একটা প্রশ্ন জাগে ? (দয়া করে কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিবেন না ) সব সংকটে ছাত্রলীগ মাঠে থাকে থাকবে, তাই বলে কি অন্য সংগঠন গুলো মাঠে থাকবে না।
বাংলাদেশ অনেক গুলো রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন আছে যারা অনেক আদর্শ, সততা, সহমর্মিতার কথা বলে বেড়ায় তারা আজ কোথায়। এদেশে বিষয় ভিত্তিক সংগঠন ও অনেক যেমন শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক সংগঠন, কৃষকদের জন্য কৃষক সংগঠন, তাঁতীদের জন্য তাঁতী সংগঠন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও নেহায়েত কম নয় যাদের মূলমন্ত্র হল স্বেচ্ছায় সেবা প্রদান করা। এদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে এগিয়ে আসছেন কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য মূলত ছাত্রলীগের জন্ম কিন্তু ছাত্রলীগ ছাত্র অধিকার পেড়িয়ে সাধারণ মানুষের সকল নৈতিক দাবী, আন্দোলন, দূর্যোগে প্রতিনিয়ত নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। এই আধাঁর একদিন ঠিক কেটে যাবে কিন্তু যারা নিজেদের মানুষের সেবক, গরীবের বন্ধু বলে, বিভিন্ন সংগঠনের নেতা পরিচয় দেয় অথচ এই সংকটে তাদের টিকিটাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না তারা এই আধাঁর কেটে গেলে কি পরিচয় নিয়ে মানুষের সামনে যাবে।
এই বাংলাদেশের ইতিহাস যদি একটু চোখ রাখেন তাহলে দেখতে পাবেন ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ১৯৬২ ও ১৯৬৪ সালের অন্যতম ছাত্র আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভূথ্যান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বিএনপি জামাতের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ২০০৭ সালের ১/১১ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র মুক্তির আন্দোলনসহ এদেশের সকল সংকটে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
তাই যে যাই বলুক না কেন এই সংগঠনটি মানুষের বিপদের সময় পাশে থাকবে এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য। সবচেয়ে অদ্ভুত কি জানেন, ছাত্রলীগ কোন কিছু পাওয়ার আশা করে না। কোন কিছু না নিয়ে না চেয়ে তারা অনেক কিছু সফল করে দেয়। আমি কেউ কে ছোট করে বলছি না এই দুর্যোগে মানুষের পাশে কাজ করা ডাক্তার নার্স সহ সরকারি চাকুরীজীবি অনেকের জন্য সরকার স্বাস্থ্য বীমাসহ অনেক প্রনোদনার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই দুর্যোগে আমার ছাত্রলীগের ভাইদের জন্য কোন প্রনোদনা ত দুরের কথা তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি কেউ দিতে চায় না। ছাত্রলীগ করা ভাই বোনেরা এতে মোটেই বিচলিত নয় কারন ছাত্রলীগে প্রাপ্তি বলতে তেমন কিছু নেই যা আছে শুধুই ত্যাগ। ছাত্রলীগের দলীয় সংগীতের কিছু অংশ দিয়ে শেষ করতে চাই- শিক্ষা শান্তি প্রগতির নামে মোরা মুজিবের সৈনিক, কাঁপিয়ে তুলবো সারা চরাচর মোরা কাঁপাবো দিগ্ধিদিক,
ছাত্রলীগ জয় জয় ছাত্রলীগ।
ভালো থাকুক যৌবনের প্রথম প্রেম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
লেখক : সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ।