চাঁদপুরে মানবতার সেবায় যুবলীগ নেতা ছিডু মিজি ও তাঁর সহধর্মিনীর দৃষ্টান্ত


দেশের বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে রাতের আঁধারেও অসহায়দের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়ে চলেছেন পৌর ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বামী -স্ত্রী দু,জন মানবসেবী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্ট্যাটাস নজর কাড়ে অনেকের।
জানা যায়, নাম পরিচয় গোপন রেখে নীরবে নিভৃতে ব্যক্তিগত অর্থে কিছু পরিবারকে সহযোগিতা করছিলেন সাথী। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে অবশেষে তাঁর পরিচয় তুলে ধরেন ক'জন ব্যক্তি। তিনি ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোঃ ছিডু মিজির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সাথী।
চলমান পরিস্থিতিতে নিজের বিবেকের তাড়নায় সঞ্চিত অর্থ ও স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে গত ক'দিন যাবত উক্ত ওয়ার্ডের বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ও শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষকে নীরবে নিভৃতে একা একা রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে গিয়ে উপহার দিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের হাতে এ উপহার তুলে দিয়েছেন।
একজন গৃহিণীর এমন চমকপ্রদ মহৎকাজ বিরল দৃষ্টান্ত বলছেন উপকারভোগী পরিবারগুলো। তারা বলেন, তিনি যাকে দেন, তার সম্মান বা ইজ্জত যেনো অক্ষুণ্ন থাকে সেটি বজায় রাখছেন। ফলে তার এ উপহার হাসিমুখে গ্রহণ করেন সকলে। তিনি নিজে সরাসরি এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন উপায়ে খোঁজ নিয়ে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতের আঁধারে একা নিজের হাতে উপহারটি নিয়ে নির্দিষ্ট পরিবারের দরজায় দরজায় নক করেন। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে তা হাতে তুলে দেন, আর বলেন, প্লীজ ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সামান্য উপহার। সাময়িক সমস্যায় আছেন, তাই 'ত্রাণ' নয় বিবেকের তাড়নায় এবং দায়বদ্ধতা থেকে চেষ্টা করেছি। অনুরোধ রইলো কারো কাছে বলবেন না, আমিও বলবো না। দোয়া করবেন। ব্যাস এটুকু বলে তিনি চলে আসেন। ইসলামের নিয়মে গোপনীয়তার মধ্যে এ মহৎ কাজটি করছেন।
ফাতেমা সাথীর উপহারগুলো ৩টি আইটেমের। ১টি হলো খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট। আর ২টি খামের ১টিতে ১০০০ টাকা, অন্যটিতে ৫০০ টাকা। খাদ্য সামগ্রী নিয়ে করা প্যাকেটটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। এতে রয়েছে ৫ কেজি চাল, সয়াবিন তেল, মসুরির ডাল, খেসারী ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, ইফতারীর বুট, ১ কেজি লবণ, হাফ কেজি করে রসুন ও আদা, ২৫০ গ্রাম দুধের প্যাকেট, ২০০ গ্রাম চা পাতা, ২৫০ গ্রাম বেসন, ১ প্যাকেট বনফুল সেমাই ও ১ পিচ সাবান । এ উপহারগুলো কোন্ পরিবারকে কী দিবেন, খোঁজ নিয়ে তা নিজের সিদ্ধান্তে নিজে নিয়েই দেন।
এ প্রশংসীয় কাজটির জন্য প্রশংসা, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ বা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কেউ কেউ তাকে নীরবে নিভৃতে মানুষের দুঃসময়ে সত্যিকারের মানব সেবার প্রকৃত উদাহরণ বা বিরল দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
উক্ত স্ট্যাটাসগুলোতে লেখার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-সাথী ভাবী বা আপার এ গোপন মানব সেবাই হলো মানবতার প্রকৃত উদাহরণ। আপনার দেখানো এ মহৎ কাজ অন্যদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কয়েকজন লিখেন, জেলার ব্যবসা সমৃদ্ধ, কোটিপতি এবং শিল্পপতি, ভিআইপিদের বসবাস সমৃদ্ধ এই জেলার শীর্ষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সহ গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্ডে আপনি বুঝিয়ে দিলেন মন থাকলে সব সম্ভব। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এতো নীরবে আপনার এ সেবা সত্যি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আপনাকে স্যালুট, সমাজের মানবতার সাথী হয়ে থাকবেন।
এ বিষয়ে ফাতেমা সাথীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি, বাহবা, সমাজ সেবক হিসেবে নিজেকে জাহির বা নেতা-নেত্রী হওয়ার জন্য কাজ করছি না। তাই প্রচার চাই না।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়ানো মানে আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য-এটা ভাবা ঠিক নয়। যাদের দিচ্ছি এবং আরো দেয়ার চেষ্টা রয়েছে তারা তো প্রতিবেশী, পাড়া মহল্লাবাসী। সামনে পবিত্র রমজান, এ রমজানে আত্মীয়-স্বজন একে অপরকে ইফতার সামগ্রী দিচ্ছি না? তাই এটি উপহার, প্লীজ ত্রাণ বলবেন না। খাদ্যের উপহার প্যাকেটে ইফতার সামগ্রী রয়েছে। তাই এটি উপহার, 'ত্রাণ' নয়।