ভিডিও কনফারেন্সে চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিতকরণ
আমরা প্রাণপণে চাঁদপুরবাসীকে ভালো রাখার চেষ্টা করছি : জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে চাঁদপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চাঁদপুরের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে বলেন, আপনার আজকের ও বিগত দিনের নির্দেশনা আমরা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করে যাচ্ছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের জন্যে আপনি যে প্রণোদনার ঘোষণা দিলেন তাতে আমরা আনন্দিত হয়েছি, অনেক বেশি সাহসী হয়েছি। চাঁদপুর জেলায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২ জন প্রবাসী রয়েছেন। আমরা ২ হাজার ১শ ৭৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিলাম। প্রথম দিকেই তাদেরকে সনাক্ত করতে আমরা সক্ষম হই। শুরুতেই তাদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেছি। আজ পর্যন্ত চাঁদপুরে মাত্র একজন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। বাকি সবাই ১৪ দিন অতিক্রম করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুর থেকে করোনা সন্দেহে ১৭ জনের নমুনা গিয়েছিল। ১০ জনের ফলাফল আমরা পেয়েছি। তাদের কেউ করোনা আক্রান্ত নয়। অর্থাৎ চাঁদপুর জেলায় এই মুহূর্তে কোনো করোনা রোগী নেই। আমরা ভালো আছি। আমরা করোনার প্রাদুর্ভাবকালে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রথমেই প্রবাসীদের গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। আমরা ১১ মার্চ থেকে নিজ উদ্যোগে ১ হাজার ৭ জন প্রবাসীকে খুঁজে বের করি এবং তাদের মনিটরিংয়ে রাখি। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতায় প্রবাসীদের ঘরে রাখতে সক্ষম হই। আমরা এখনো প্রতিদিন মোবাইল কলের মাধ্যমে ২ হাজার প্রবাসীর খোঁজ রাখছি। তারা যেন ঘরের বাইরে না যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখছি।
তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলার মানুষ শিক্ষিত ও সচেতন। তারা নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে আছে। আমরা প্রতিটি মানুষকে ঘরে রাখার জন্যে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার মানুষের কাছে সরকারি ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। পাশাপাশি নতুন কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সততা স্টোর চালু করেছি। শহর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে সততা স্টোর রয়েছে। ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পণ্য নিচ্ছে। চাঁদপুর শহরেরই সততা স্টোরে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকার পণ্য হ্রাসকৃত মূল্যে প্রায় ২ হাজার লোকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমরা ৪টি হোটেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অসহায় দুঃস্থদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কয়েকদিনে ২ হাজার মানুষকে খাওয়াতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আমরা আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি। ‘ত্রাণ যাবে বাড়ি’ কর্মসূচির জন্যে দুটি মোবাইল নম্বরকে হটলাইন হিসেবে দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে কল এলে ত্রাণ বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা একশজনের মতো দেশপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবক নিয়েছি। তারা বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। গত ৬ দিনে ৬শ’ ৮৮ জনের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে দুটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় অর্ধেক দামে ওষুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও সাবান বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা দুটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ২০ ভাগ হ্রাসমূল্যে নিয়মিত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা নিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ‘দোকান যাবে বাড়ি’ কর্মসূচি চালু রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে।
তিনি বলেন, চাঁদপুর শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির বাড়ি। তিনিসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পৌরসভার কর্মকর্তাবৃন্দসহ সকলে মিলে আমরা চাঁদপুরের মানুষদের ভালো রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা প্রাণপণে চাঁদপুরবাসীকে ভালো রাখার চেষ্টা করছি। একটি মানুষও এ জেলায় না খেয়ে নেই। আমরা অনেককে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে উৎসাহিত করতে পেরেছি। তারা কাজ করছেন। জেলার শিক্ষার্থীদের জন্যে শিক্ষকরা বাসায় থেকে ফেসবুক লাইভে এসে ক্লাস করছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় আমরা জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ব্যানারে অনলাইনে শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি। এ আয়োজনে নৃত্য, সঙ্গীত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এ প্লাটফর্মটা পহেলা বৈশাখে শক্তিশালীভাবে ব্যবহার করতে পারি। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো চিত্র চাঁদপুরে নেই। খাদ্য মজুদ সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর রাখছি। এ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা যা ছিল, তার সমাধান করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরে দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। গুজবের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। দুজন গুজব রটানোকারীকে আমরা মুচলেকা দিয়ে ছেড়েছি। গুজব একেবারেই নেই বললেই চলে। তবে চাঁদপুরে একটি সমস্যা রয়েছে। চাঁদপুরের পাশর্^বর্তী জেলাসমূহে করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। সেসব জেলা থেকে নদীপথে চাঁদপুরে আসার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আমরা কঠোরভাবে তাদের আগমন বন্ধে কাজ করছি।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি চাঁদপুর জেলার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমার মনে হয় করোনা মোকাবেলায় আপনি যেভাবে কাজগুলো করছেন তাতে অন্যান্য জেলাও উৎসাহিত হবে। তারাও চাঁদপুরের নেয়া উদ্যোগগুলো নিতে পারেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও চাঁদপুরে কর্মরত নার্স আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্স ১৬ মিনিট স্থায়ী হয়।