স্কুল বন্ধ থাকলেও সচল বিজ্ঞানাগার!
এতিমখানায় ও রিক্সাচালকদের নিজেদের প্রস্তুতকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিলো গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়


করোনা প্রতিরোধে সারাদেশে যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের তীব্র সঙ্কট এবং তা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে তখন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিলো চাঁদপুর গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। করোনার প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও স্কুলের রসায়ন বিজ্ঞানাগারের কাঁচামাল কাজে লাগিয়ে ২শ' বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করলো স্কুল থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া একদল ছাত্র। ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন স্কুলের সদ্য বিদায়ী রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক রাসেল হাসান।
গত বুধবার নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিনের উপস্থিতিতে চাঁদপুর গণি স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়া রিক্সা চালকদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে সপরিবারে সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। বিকালে বিতরণ করা হয় দুইটি এতিমখানার এতিমদের মাঝেও।
জানা যায়, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতকারক রাসেল হাসান স্কুলের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১ জানুয়ারি চাকুরিজনিত কারণে তিনি ঢাকায় চলে যান। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সকল অফিস বন্ধ হলে চাঁদপুর এসেই তিনি পূর্বের কর্মস্থলের বিজ্ঞানাগারে বিজ্ঞান ক্লাবের ছাত্রদের নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুতি শুরু করেন। উপাদান হিসেবে অ্যাইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল, গ্লিসারিন, ডিস্টিলড ওয়াটার, অ্যালোভেরা তেল ও লেবুর রস ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাসেল হাসান বলেন, সারাদেশে যখন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের তীব্র সংকট দেখা দেয় তখন গণি স্কুলের ল্যাবরেটরীর অ্যালকোহল ও গ্লিসারিন ব্যবহার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর প্লান মাথায় আসে। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের সাথে আলাপ করলে তিনি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায়, প্রয়োজনীয় পোশাক পরে কাজটি করার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী বুধবার সারাদিন আমরা এসএসসি পরীক্ষা দেয়া ছাত্রদের সাথে নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করি।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দিন বলেন, মহামারী এই দুর্যোগে আমাদের বিজ্ঞানাগার যদি কিছুটা সহায়ক হয় তবে নিজেদের কাছে স্বস্তি লাগবে। তাই আমরা স্কুলের বিজ্ঞানাগারের রসায়ন বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকের প্রচেষ্টায় তৈরি করি হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যা অসহায় মানুষদের বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বিশেষ করে রিক্সাচালকগণ যদি ঘন ঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন তবে যাত্রীরা সুরক্ষা পাবে। এ জন্যই তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় স্যানিটাইজারের একটি করে বোতল। আগামীতে আরো প্রস্তুতির জন্যে আমরা বিজ্ঞানাগার থেকে কাজ করবো।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে পাওয়া এক রিক্সা চালক বলেন, এগুলার এতদিন নাম শুনছি, কিন্তু চোখে দেখি নাই। আজকে স্কুলের স্যারেরা হাতে দিছে। এখন প্রতিবার যাত্রী নামানোর পরেই একবার কইরা হাত পরিষ্কার করুম। আমার বাড়ির লোকজনরে ব্যবহার করতে বলমু।
স্কুল বন্ধ থাকলেও চাঁদপুর গণি মডেল হাই স্কুলের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। জেলার অন্যান্য স্কুল এভাবে ল্যারেটরীর কাঁচামাল ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক স্যানিটাইজার প্রস্তুত করাটা যেমনি শিক্ষণীয় তেমনি দুর্যোগ সহায়কও।