করোনা আতঙ্কে থমকে গেছে বাণিজ্যিক শহর চাঁদপুর


প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হানায় পুরো বাংলাদেশ কাঁপছে। এর প্রভাব বাণিজ্যিক জেলা চাঁদপুরেও পড়েছে। সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণায় এর কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। আর ঘোষণা অনুযায়ী সকল মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ। এর মধ্যে ২৬ মার্চ থেকে ১০দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবাইকে বাসায় নিরাপদে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। জনসমাগত ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসন সহ সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। এতে করে জেলার প্রায় সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফুটপাত অনেক আগেই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। জনগণও আগেভাগেই যার যার গ্রামে চলে গেছে। এতে করে পুরো শহর প্রায় জনশূন্য হয়ে থমকে গেছে। কোথাও কোনো শোরগোল নেই, নেই পথচারীদের পদচারণা। এক কথায় করোনা আতঙ্কে পুরো চাঁদপুর শহর থমকে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের একমাত্র বাসস্ট্যান্ড থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ ও ট্রেন সার্ভিসও একেবারে বন্ধ রয়েছে। যে কারণে বাস স্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চ ঘাটে কোনো যাত্রী দেখা যাচ্ছে না। শহরের কালী বাড়ি এলাকার ফুটপাত সহ সকল মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু সড়ক ও কুমিল্লা রোডসহ অন্যান্য সড়কে।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সকল দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যদিও শাখা রোডে মুদি দোকান সহ নিত্যপণ্যের দোকানগুলো খোলা ছিল। কিন্তু তাতেও শোরগোল ছিলো না। শহরের সড়কে গুটি কয়েক পথচারী ছাড়া কারো দেখা মিলেনি। যেখানে অন্য সময়ে পথচারীদের আনাগোনায় পুরো শহর মুখরিত থাকতো, সেখানে জনশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর তাতে করে পুরো শহর থমকে গেছে।
উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকল মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, হাসপাতাল, ঔষধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সব কিছু জনসমাগমশূন্য রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে প্রথমে র্যাব ও পুলিশ প্রশাসন মাঠে নামলেও পরবর্তীতে যোগ হয় সেনাবাহিনী। এর ফলে জনগণ এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে বিনা কারণে সড়কেও বের হতে পারছে না কেউ। এর মধ্যে লম্বা ছুটির কারণে অনেকে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি জমিয়েছে। এতে করে পুরো শহর ফাঁকা হয়ে পড়েছে। অনেকে শহরে অবস্থান করলেও করোনা ভাইরাস ও পুলিশ প্রশাসনের ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাছাড়া ঘর থেকে বের হয়েও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে পুরো শহর কার্যত ফাঁকা হয়ে থমকে গেছে।
পথচারী কলিম উল্লা খান জানান, দীর্ঘদিন যাবত চাঁদপুর শহরে বসবাস করি। কিন্তু ঈদের ছুটিতেও এতো নীরব কখনো দেখিনি। পথচারীদের পদচারণায় পুরো শহর সরগরম থাকলে ভালো লাগতো। কিন্তু করোনা আতঙ্কে পুরো শহর নীরব হয়ে গেছে। সবকিছু যেন থমকে গেছে।
ফুটপাতে মাস্ক বিক্রি করা সুমন বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত এই শহরে বিভিন্ন জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন করোনা আতঙ্কে মাস্কের দাম বৃদ্ধির ফলে এই ব্যবসা করছি। কিন্তু শহরে লোক না থাকায় বেচাবিক্রি অনেক খারাপ। ঈদের ছুটি ছাড়া এতো ফাঁকা কখনো দেখিনি। মনে হচ্ছে শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা বেবি বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শহরে বের হতেও ভয় লাগছে। কারণ আশেপাশে কাউকে দেখছি না। এতে করে ভয় আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতেও চাঁদপুর শহর এতো নীরব থাকে না। তখনো কিছুটা শোরগোল থাকে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে এখন পুরো শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। হঠাৎ করে যেন পুরো শহর থমকে গেছে।
মিজান মাস্টার নামের একজন বলেন, এখন মনে হচ্ছে গ্রামের বাড়িতে চলে গেলে বেশি ভাল হতো। কথা বলার মত কোনো লোক খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আর যারা শহরে আছে তারা সবাই বাড়ির ভিতরে থাকে। করোনা আতঙ্কে কারো বাড়িতেও যেতে পারছি না। আর কেউ বাড়ি থেকেও বের হচ্ছে না। এতে করে পুরো ফাঁকা শহরে অবস্থান করছি। ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। তবে এমন চিত্র আগে কখনো দেখিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাণচঞ্চল চাঁদপুর শহর হঠাৎ করে থমকে গেছে। করোনা আতঙ্কে এর সব প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে গেছে। চায়ের কাপে, বিভিন্ন টি স্টলে, বড় স্টেশনের মোলহেডে, মিনি কক্সবাজারে এখন আর আড্ডা জমছে না। আড্ডাবাজদের দল কোথায় যেন পাড়ি জমিয়েছে। করোনা আতঙ্ক এতোটাই জাপটে ধরেছে যা সবকিছুকে থমকে দিয়েছে। যদিও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগমশূন্য করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই শূন্যতা চাঁদপুরের ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায় রচনা করেছে।