অধিক লাভে বিক্রি হচ্ছে চাউল পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী


মরণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে যখন সারা বিশ্ব আতঙ্কগ্রস্ত ,তখন এদেশের কতিপয় ব্যবসায়ী এ আতঙ্ককে পুঁজি করে অধিক লাভে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করার লক্ষ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাজার মনিটরিংসহ মোবাইল কোর্ট দিয়েও তা নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। কাস্টমারদের প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মাল কেনার আগ্রহকে পুঁজি করে বিক্রেতারা এ সুযোগ নিচ্ছে বলে জানা যায়। গত ৫ দিন পূর্বে চাঁদপুরের পাইকারী বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০/৩২ টাকা, সে পেঁয়াজই গত ২ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৬০/৬৫ টাকা। আর মোবাইল কোর্টের অভিযানের কল্যাণে গতকাল ২১ মার্চ পুরাণবাজার পাইকারী দোকানে তা বিক্রি হয়েছে ৪৮টাকায়। একদিনের ব্যবধানে ১০/১৫ টাকা কমে যাওয়ার ঘটনা মোবাইল কোর্টের কল্যাণেই সাধিত হয়েছে বলে ক্রেতা সাধারণ জানান। তারা মনে করেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা যদি সক্রিয় থাকতো তাহলে রাতারাতি ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৬০/৬৫ টাকা হতো না। এজন্যে তারা মার্কেটিং অফিসারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।
গতকাল পুরাণবাজার পাইকারী পেঁয়াজ, রসুন, আদার দোকান ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা সাধারণের প্রচুর ভিড়। ভিড়ের চাপে দোকানদারদের ঠিকমত কথা বলারও সুযোগ নেই। কার আগে কে নিবে সেই নিয়েই চলছে প্রতিযোগিতা। অবশ্য দাম বেশি-কম নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। অবস্থা এমন যে, দেরি হলে প্রয়োজন অনুযায়ী মাল নাও মিলতে পারে। যার প্রয়োজন ১ কেজি সে নিচ্ছে ৫ কেজি। গতকাল পাইকারী দোকানে এলসি পেঁয়াজ ৪৮ টাকা, দেশী পেঁয়াজ ৫০ টাকা, রসুন এলসি ১৩৫ টাকা, দেশী রসুন ৯০ টাকা, আদা এলসি (চায়না) ১৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান ১৩০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মজিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মমিনুল ইসলাম উজ্জল বলেন, ভোমরা বন্দরে পাইকারী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা এবং পেঁয়াজ আমদানিও রয়েছে প্রচুর। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা গেলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব বলে তিনি জানান। চালের বাজার গত সপ্তাহ থেকে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ৭/ ৮ টাকা।
চালের বাজার বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় পুরাণবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি চাঁদপুর অটোরাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরেশ মালাকারের কাছে। তিনি জানান, চাঁদপুর আমদানি নির্ভর মোকাম। এ বছর অগ্রহায়ণ মাসে আমন ফলন কম হয়েছে। চাঁদপুরের অটোরাইস মিলগুলোতে বরগুনা, গলাচিপা, কালাইয়া, ভোলা, বরিশাল, বাইলাতলী থেকে ধান আমদানি হয়। কিন্তু তা আমদানি না হওয়ায় চাঁদপুরের মিলগুলো ধান সঙ্কটে রয়েছে। তদুপরি দিনাজপুর, সেতাবগঞ্জ, নওগাঁও, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নীলফামারী, রংপুর, বগুড়া, ঝিনাইদহসহ যে সকল পাইকারী মোকাম থেকে চাঁদপুরে চাল আমদানি হতো, সে সকল মোকামেই চালের দাম ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি নির্ভর চাঁদপুর মোকামে এ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তিনি এতটা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে করোনা ভাইরাসকে অনেকটা দায়ী করেন। তিনি বলেন, ক্রেতা সাধারণ অনেকটা হতাশার মাঝে রয়েছে। তারা মনে করেন, কোনো কারণে যদি বাজার বন্ধ হয়ে যায় তখন কী হবে। এ হতাশার কারণে যার প্রয়োজন ১ বস্তা সে নিয়ে গেছে ৫ বস্তা। যার কারণে আমদানির তুলনায় বিক্রি বেশি হওয়ায় কোনো কোনো দোকানদার এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। তিনি মনে করেন, বাজারের এ ঊর্ধ্বগতি ৪/৫ দিনের মধ্যেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে।
গতকাল পাইকারী চালের দোকানে মিনিকেট ৫২/৫৩ টাকা, ২৮ মিনিকেট ৪২/৪৩ টাকা, মোটা গুটি ৩৭/৩৮ টাকা, পাইজাম ৩৮/৩৯ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে গত ২ দিনের তুলনায় বিক্রি ছিল কিছুটা কম। গতকাল পাইকারী বাজারে চিনি (৫০ কেজির বস্তা) ২৯৮০ টাকা, ময়দা ১৩৫০ টাকা, আটা ১০৭০/১০৮০ টাকা বিক্রি হলেও তেলের বাজার ছিল স্থিতিশীল। আটা, তেল, চিনি, ময়দার পাইকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী নেপাল সাহা, মেসার্স সহদেব সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা (বিলু)সহ কয়েক জন পাইকারী ব্যবসায়ী জানান, চিনি, আটা, ময়দার দাম মিলগুলোতে বাড়ানো হলেও আমাদের হাতে মাল থাকায় আমরা পূর্বের দামেই তা বিক্রি করতে চেষ্টা করছি। তবে বর্তমান সময়ে মিলে যে দাম বাড়ানো হয়েছে তা বাজারে আমদানি হলে হয়তো কিছুটা দাম বাড়তে পারে। এলাচি, দারুচিনিসহ মসলার বাজার স্থিতিশীল থাকলেও জিরার বাজার বেড়েছে কেজি প্রতি ২শ' টাকা। আর পাইকারী দোকানে আলু বিক্রি হয়েছে ১৮/২০ টাকা। তবে পাইকারী বাজারে যে দামেই বিক্রি হোক না কেন বাজার ভেদে খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ টাকা বেশি দামে। অধিক মুনাফারোধে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণসহ প্রতিদিনই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে ক্রেতা সাধারণ মনে করেন। তারা এজন্যে চেম্বারের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষের সাথে। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে কিছু লোকের মাঝে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তারা মনে করে হয়তো প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যাবে না। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। দেশে খাদ্য সামগ্রীর অভাব নেই। যা সরকারিভাবেও বলা হচ্ছে। আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। চাঁদপুর চেম্বার নেতৃবৃন্দ সকল সময়ই ক্রেতা বান্ধবের ভূমিকা পালন করে আসছে। কোনো ব্যবসায়ী ক্রেতা সাধারণকে জিম্মি করে অধিক মুনাফা করবে, এ ধরনের অনৈতিক কাজ চাঁদপুর চেম্বার কখনো সমর্থন করে না। বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চেম্বার কাজ করছে। তিনি করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে যাতে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ানো হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য ব্যাসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানান।