• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে ৫ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি, আশঙ্কাজনক হারে কমছে বোরো আবাদ

প্রকাশ:  ০৭ মার্চ ২০২০, ১৩:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য কম পাওয়া, ফসলি জমি ভরাট করা ও কৃষি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে বোরো ধানের আবাদ। এ বছর জেলার ৮ উপজেলায় কমপক্ষে ৫ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বোরো আবাদ শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত আবাদ করা হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় এ বছর অনাবাদি জমি পড়ে আছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর। আবার অনেক কৃষক ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৮ উপজেলায় বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬২ হাজার হেক্টর। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার ২৪৫ হেক্টর। চাঁদপুর সদর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ হাজার ৫৯৫ হেক্টর, মতলব উত্তর সেচ প্রকল্পসহ ৯ হাজার ৯০ হেক্টর, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৯ হাজার ৮৬০ হেক্টর, কচুয়া উপজেলায় ১২ হাজার ২২০ হেক্টর, শাহরাস্তি উপজেলায় ৯ হাজার ৫শ’ ৩৫ হেক্টর, হাইমচর উপজেলায় ৬শ’ ৩০ হেক্টর এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার ৩০ হেক্টর।
কচুয়া উপজেলার মথুরাপুর এলাকার চকরা গ্রামের কৃষক নুরুন্নবী, আব্দুর রহিম ও ইদ্রিস মিয়া বলেন, বোরো আবাদ করে তাদের খরচই উঠে আসে না। বাজারে ধানের মূল্য কম থাকে। আমাদের গ্রামের অনেক কৃষক এ বছর বোরো আবাদি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে এ বছর আর বোরো আবাদ করা হবে না। জমিগুলো পতিত পড়ে থাকবে। তবে পাশের অন্য কৃষকরা বোরো আবাদ করেছেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার হাঁটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের কৃষক সোলাইমান মৃধা বলেন, তাদের ইউনিয়নে বোরো আবাদ কমেছে। কিছু কৃষক আউশ ও আমন ধান আবাদ করে এবং অন্যান্য ফসল করে। তবে অনেক জমি এ বছর পতিত পড়ে আছে। রাস্তার পাশের জমিগুলো বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে এবং অনেকেই ভরাট করে বাড়ি তৈরি করছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের চাপিলা গ্রামের কৃষক মামুন ও মনু মিয়া বলেন, সেচ প্রকল্পের আওতাধীন হওয়ার কারণে তাদের জমিগুলোতে প্রতি বছর আউশ, আমন ও বোরো আবাদ হয়ে থাকে। ফসল উৎপাদন হয় ভালো। জমিগুলোতে পানির অভাব না হলে এবছরও বোরো ধানের ফলন ভালো হবে। অনেক কৃষকই জমিতে বোরো ধান বপন সম্পন্ন করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও শাহরাস্তি উপজেলায় অধিকাংশ জমিতে বোরো আবাদ অনেকটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতে আলু উত্তোলন শেষ না হওয়ার কারণে বোরো আবাদে বিলম্ব হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, বোরো আবাদের বাস্তব অবস্থা দেখার জন্য বেশ কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ উপজেলা ফসলি মাঠগুলো পরিদর্শন করেছেন। এই উপজেলায় আশঙ্কাজনকহারে অনাবাদি জমি পড়ে আছে। মূলত কৃষকরা বোরো আবাদ করতে গিয়ে শ্রমিক, সেচ, বীজ খরচ দিয়ে ধান বিক্রি করতে গিয়ে সঠিক মূল্য পায় না। যার কারণে বোরো আবাদে তাদের অনীহা দেখা দিয়েছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, বোরো আবাদের জমি কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে কৃষক ধানের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। ফলে বোরো আবাদ না করে অন্য ফসল করছে। যেমন চাঁদপুরে এখন ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলি জমিগুলোর শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কেউ পুকুর কাটছে আবার অনেকে বালু দিয়ে ভরাট করে বাড়ি তৈরি করছে। এসব বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিলেও ব্যবস্থা নেয়ারমত ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে পর্যালোচনা করে দেখা যায় এ বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সরিষাসহ ওই সময়কার বেশ কিছু ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি গুনতে হয়েছে। যার ফলে বেশির ভাগ কৃষক তাদের উৎপাদন খরচ না পাওয়ায় এবং সরকার থেকে তাদের জন্য কোন সহায়তা না থাকায় তারা দিন দিন বোরো আবাদের উৎসাহ হারাচ্ছে।