• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বিয়ের দেড়শ' মেহমানের খাবার এতিমখানায়!

প্রকাশ:  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দেড়শ' মেহমানের রান্না শেষ। ছেলে পক্ষ আসার অপেক্ষায়। গিফ্ট বুঝে রাখার জন্যে খাবার প্যান্ডেলের পাশে খাতা নিয়ে লোক বসানো হয়েছে। গিফ্ট নিয়ে ইতিমধ্যে ২/১ জন মেহমান চলেও এসেছে। বাড়ির উঠোনে প্যান্ডেলের ভেতরে প্রতিটি টেবিলে সাজানো হয়েছে খাবার প্লেটসহ পানির জগ। আগের দিন রাতে অনুষ্ঠিত কনের গায়ে হলুদের প্যান্ডেলটিতে তখনো তরজাতা ফুল, বেলুন আর কনের নাম-সম্বলিত ককশীট ঝুলছে। বাড়ির অন্য পরিবারের সদস্যরা সেজেগুজে হাঁটাহাঁটি করছে খাবারের জন্যে, গেট থেকে প্যান্ডেল পর্যন্ত লাল-নীল সবুজ মরিচবাতি জ্বলছে। ঠিক এমন সময় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আয়োজকদের মাথায়। বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া। গতকাল ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরের কিছু পরে ঘটনাটি ঘটে হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের টঙ্গিরপাড় নোয়াপাড়া গ্রামে। মেয়েটি পার্শ্ববর্তী শাহরাস্তি উপজেলার ইছাপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।


বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই স্কুলছাত্রীকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপরে জন্ম নিবন্ধনের কাগজ চাইলে যা দেখানো হয় তার পুরোটাই মিথ্যা। অর্থাৎ ছাত্রীর বাবার বাড়ির মূল ঠিকানা গোপন করে হাজীগঞ্জ পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের ঠিকানা দেয়া হয়েছে, আর এ থেকেই ম্যাজিস্ট্রেট বুঝে নেন এটা মিথ্যা তথ্য-সম্বলিত জন্মনিবন্ধন। এরপরেই ছাত্রীটির টিকাকার্ড ও ৫ম শ্রেণি পাসের সার্টিফিকেট পরখ করে দেখা যায় মেয়েটি ১৮ বছর পূর্ণ হতে এখনো অনেক সময় বাকি।


এদিকে ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার পরেই ওই স্কুলছাত্রীর বাবা-মা বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বিয়ে বাড়ির অতিথিদের জন্যে রান্না করা সকল খাবার পাশের গ্রাম লাওকরা হযরত আমানত শাহ ও শাহেনশাহ (রহঃ) হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপরেই স্কুলছাত্রীকে একজন নারী চৌকিদারের মাধ্যমে নিজ গাড়িতে করে উপজেলায় নিয়ে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট। পরে মেয়েটির পরিবারের লোকজন উপজেলা সদরে আসলে এখানে আদালত বসিয়ে ছাত্রীর বাবাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দেবেন না এমন শর্তে মুচলেকা আদায় করে বাবার জিম্মায় ছাত্রীকে বুঝিয়ে দেয় আদালত।


আদালত পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জলিলুর রহমান মির্জা দুলাল, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রমিজ উদ্দিনসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা।


এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, ছাত্রীর বাবা দোষ স্বীকার করেন এবং ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে না দেয়ার অঙ্গীকার করে মুচলেকা দিলে ছাত্রীটিকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।