চাঁদপুরে প্রথমবারের মতো ১৬ ফুট উচ্চতার সরস্বতী প্রতিমা নির্মাণ


আগামীকাল ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিদ্যার দেবী নামে পরিচিত শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা। পূজাকে কেন্দ্র করে বিদ্যার্থীসহ আয়োজকদের মাঝে বইছে উৎসবের আনন্দ। বহু রূপে সেজে উঠেছে পূজা ম-প। লাল নীল আলো, ব্যান্ড পার্টির বাজনা, সুউচ্চ প্যান্ডেল, সুসজ্জিত তোরণ আর নানা রকম সাজসজ্জার আয়োজনে পূজারীদের মাঝে দেখা দিয়েছে অঘোষিত প্রতিযোগিতা। পূজার আয়োজকদের আয়োজন ইতিমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে। চাঁদপুরসহ ঢাকা থেকে নামীদামী ডেকোরেশনের লোকজনের উপস্থিতি চোখে পড়ছে বিভিন্ন পূজাম-পে। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের চাকচিক্যময় সাজসজ্জা প্রদর্শনের কাজ করতে। কোনো কোনো পূজা ম-পে ইতিমধ্যে জ্বলতে শুরু করেছে লাল-নীল আলো। মৃৎশিল্পীরা প্রতিমার নির্মাণ কাজ শেষ করে ডেলিভারী দেয়ার অপেক্ষায় আছে। আজ ২৯ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যার পর আয়োজকদের সুবিধাজনক সময় তারা বাদ্যবাজনা বাজিয়ে আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে স্ব স্ব ম-পে নিয়ে যাবেন প্রতিমা। পরদিন ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধাসহ মনের আকুতি জানিয়ে দেবীচরণে অঞ্জলি প্রদান করবেন বিদ্যার্থীসহ আয়োজকবৃন্দ।
ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সরস্বতী পূজার প্রচলন বেশি থাকলেও এখন সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল বয়সী শ্রেণি-পেশার মানুষই এ পূজায় ব্রতী হয়েছেন। এ বছর শ্রী পঞ্চমীতিথি আজ বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে শুরু হয়ে তা বহাল থাকবে আগামীকাল ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত। দীর্ঘসময় পর্যন্ত শ্রী পঞ্চমীতিথি বহাল থাকলেও আয়োজকগণ আগামীকালকেই দেবীচরণে অঞ্জলি প্রদান করে পূজা শুরু করবেন। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে প্রতিমা দর্শন। আর পরদিন ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে চাঁদপুর শহরে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিমা সহকারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি বিকেল ৪টায় চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম শেষে স্ব স্ব পূজা ম-পে ফিরে যাবে।
অন্যান্য স্থানের তুলনায় চাঁদপুর শহরে সরস্বতীপূজার বেশ সুনাম রয়েছে। সে সুনাম অক্ষুণœ রেখে এ বছরও আয়োজকরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের আয়োজন ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছে। এ বছর ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে চাঁদপুর পুরাণবাজার দাসপাড়া বড় বাড়ির পূজা ম-প বিদ্যার্থী সংঘ। তারা এ বছর নির্মাণ করেছেন ১৬ ফুট উচ্চতার প্রতিমা। ইতিপূর্বে চাঁদপুরে এতো বড় সরস্বতী প্রতিমা নির্মাণ হয়নি বলে আয়োজকগণ জানান। আয়োজনকারীদের অন্যতম সদস্য মৃদুল কান্তি দাস বলেন, চাঁদপুরে এতো বড় সরস্বতী প্রতিমা আগে কখনো নির্মাণ করা হয়নি। এ বছর বিদ্যার্থী সংঘের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপনে আমরা তা স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে এ প্রতিমা নির্মাণে আগ্রহী হই। তিনি বলেন ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়া সরকার আমেরিকান সরকারকে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ একটি সরস্বতী প্রতিমা উপহার দেন। যার উচ্চতা ছিলো ১৬ ফুট। বর্তমানে যা ওয়াশিংটনের ডিসিতে ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের সামনে শোভিত রয়েছে। আমরা ওই প্রতিমার আদলেই এ প্রতিমা নির্মাণ করেছি। যা হুবহু একই রকম। প্রতিমা নির্মাণ কার্যক্রম একটু ব্যয়সাপেক্ষ হলেও আমরা খুশি হব, যদি প্রতিমা দর্শনে দর্শনার্থীগণ প্রীত হন। আমরা আমাদের এ পূজা ম-পে সকল দর্শনার্থীর শুভাগমন কামনা করছি।
নির্মাণাধীন এ প্রতিমা দর্শনে যান চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল সাহা, সদস্য উত্তম কুমার দে, দুলাল চন্দ্র দাস, জুয়েল কান্তি নন্দু, দাসপাড়া বিদ্যার্থী সংঘের উপদেষ্টা মন কুমার দাস, তাপস দাস, সুভাষ দাস, বিভাষ চন্দ্র দাস, কার্যকরী সদস্য মৃদুল কান্তি দাস, সুমন দাস, মানিক দাস, সুব্রত দাস, রাজীব দাস, মনোজ হাওলাদার, বাদল দাস, অভিজিৎ দাস, প্রণয়, তনু, সুস্ময়, দিগন্ত প্রমুখ। নির্মাণাধীন ১৬ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন সরস্বতী প্রতিমা দেখে পূজা পরিষদ ও ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা সকলকে এ প্রতিমাসহ সকল পূজা ম-প দর্শন পূর্বক শান্তিপূর্ণ আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব উদ্যাপনের আহ্বান জানান।