ইউনাইটেড হাসপাতালে রেখে যাওয়া নবজাতককে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক হস্তান্তর


চাঁদপুর শহরের মরহুম করিম পাটোয়ারী সড়কের দি ইউনাইটেড হাসপাতালে জন্ম নেয়া এক নবজাতককে রেখে তাঁর স্বজনরা পালিয়ে যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিশু কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে একটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে। এমন তথ্য নিশ্চিত করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন প্রসূতি মা তার নাম ঠিকানা এবং সকল পরিচয় গোপন করে তার গর্ভের সন্তানকে প্রসব করানোর জন্যে এ হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঐ প্রসূতি মাকে নরমাল ডেলিভারি করান। এ ডেলিভারীর পর ওই প্রসূতি মা ও তার স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর কথা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে নবজাতককে রেখে চলে যান।
এ অবস্থায় কিছু সময় পর রোগী ও স্বজনদের অনুপস্থিতি দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তাৎক্ষণিক হাসপাতালের কাগজে দেয়া তথ্য অনুযায়ী নাম-ঠিকানা যাচাই করে দেখেন হাসপাতালের দেয়া রোগীদের তথ্য মিথ্যা ও তা সঠিক নয়। এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে পরিচালক সুলতানা আক্তার সেতু চাঁদপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নং-৯১৩। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নবজাতক শিশুটিকে পরিচর্যা ও লালন-পালন করার বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিশু কল্যাণ বোর্ডকে লিখিতভাবে অবহিত করে। হাসপাতালের পরিচালক সুলতানা আক্তার সেতু এ বিষয়টি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকেও লিখিতভাবে অবহিত করেন।
পরবর্তীতে শিশু কল্যাণ বোর্ডের মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান এ শিশুটির বিষয়ে সভায় উপস্থিত সকল সদস্যকে অবহিত করেন। নবজাতক শিশুটি কোন্ পর্যায়ে রয়েছে তা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার ব্যাখ্যা দেন। পাশাপাশি শিশুকে বিকল্প পরিচর্যার জন্যে একটি পরিবারের আবেদন রয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সভায় শিশু আইন অনুযায়ী আবেদনকৃত পরিবারের হাতে শিশুটিকে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ সিদ্ধান্তের আলোকে গত ২ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের উপস্থিতিতে শিশুটি নারায়ণগঞ্জের একটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে হাসপাতাল থেকে নবজাতককে রেখে পলায়নের এ ঘটনার খবর গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে চলে যায় এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ‘চাঁদপুরে আবারও নবজাতক রেখে স্বজনদের পলায়ন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হলে এ ঘটনার বিষয়ে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
গঠিত তদন্ত কমিটি এ ঘটনার তদন্ত শেষে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে শিশুটি ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে সরকারের আইনকে অনুসরণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে এবং সরকারের এ সংস্থা শিশু আইন অনুযায়ী শিশুটিকে আবেদনকৃত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে বলে জানানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, উক্ত শিশুটি যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় সে পরিবারটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিশু কল্যাণ বোর্ডের কাছে লালন পালন করার আবেদন করে, পরবর্তীতে ওই পরিবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তাদেরকে শিশুটি দেয়া হয়। তবে এজন্যে কোনো অর্থের লেনদেন করা হয়নি এবং শিশু বিক্রি হয়নি।
এ তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ আশরাফ চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করেছি এটাই সত্যি, এর বাইরে তিনি কোনো কথা বলতে রইজ হননি।