ডাঃ সাজেদা বেগমের পরিকল্পনায় পথচলা শুরু হলো ‘কৈশোরবান্ধব’ ইউনিয়নের
‘এমন একটি উদ্ভাবনী পরিকল্পনা সারাদেশের জন্যে মডেল হতে পারে’


কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের মাঝে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। আর এর প্রভাবে তাদের মনোজগতেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ এ সময়টাতে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা দেয়ার লক্ষ্যে একটি উদ্ভাবনী কার্যক্রম শুরু হলো চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়ন থেকে। এ ইউনিয়নের সকল কিশোর-কিশোরীকে (১০-১৯ বছর বয়সী) এ কার্যক্রমের আওতায় এনে তাদের উপরোক্ত সেবা দেয়া হবে। আর এ লক্ষ্য নিয়েই বাগাদী ইউনিয়নকে ‘কৈশোরবান্ধব’ ইউনিয়নে রূপান্তর করতে গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এর পথচলা শুরু হলো।
গতকাল রোববার সকালে বাগাদী ইউনিয়নের বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বের পাশাপাশি এ স্কুলেই স্থাপিত ‘কৈশোরবান্ধব' স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কর্নার’ উদ্বোধন করা হয়। এ উদ্ভাবনী পরিকল্পনার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান। সভাপ্রধান ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা।
আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এ উদ্ভাবনী পরিকল্পনার প্রবক্তা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম পলিন। তিনি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে এ পরিকল্পনার বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন। এই কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কর্নারে কী কী সেবা দেয়া হবে এবং কারা সেবা দেবেন এসব কিছু তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।
তিনি আরো জানান, বাগাদী ইউনিয়নের ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক এ কর্মপরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। এর দ্বারা পুরো ইউনিয়নের সকল কিশোর-কিশোরী (স্কুলগামী এবং স্কুল বহির্ভূত) কৈশোরবান্ধব ইউনিয়নের আওতায় চলে আসবে। ডাঃ সাজেদা বেগমের কাছ থেকে তার এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনার বিবরণ শুনে অতিথিরা এর উচ্ছসিত প্রশংসা করেন এবং এর জন্যে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন।
অতিথিরা বলেন, এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনাটি সারাদেশে মডেল হতে পারে। কারণ, আমাদের জানা মতে এখনো দেশের কোথাও কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এভাবে মনোজগত থেকে চিন্তা করে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং কার্যক্রম শুরু করা সম্ভবত এই প্রথম। আর সেটির যাত্রা চাঁদপুর সদর উপজেলা থেকেই শুরু হলো। এর জন্যে সদর ইউএইচএফপিও ডাঃ সাজেদা বেগম পলিনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ, জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে উল্লেখযোগ্য যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হচ্ছেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, আবিদা সুলতানা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর, বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ খান বাদল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, মোহাম্মদ আলী মাঝি প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক মনির হোসেন তালুকদার। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন স্বাস্থ্য সহকারী জাফর গাজী।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ‘কৈশোরের জয়গান’ নামে একটি ওয়েবপেজের উদ্বোধনও করা হয়।