• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

হাইমচরের ২ মুক্তিযোদ্ধা আজও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি

প্রকাশ:  ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাইমচর উপজেলার পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামের ২ মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের মাস্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুদাম পাহারা দিয়েছিলেন। তারা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বিএলএফের সদস্য। অথচ আজও এ দুজন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান তারা।
    জানা যায়, হাইমচর উপজেলার তৎকালীন পশ্চিম চর কৃষ্ণপুর গ্রামের ৫ মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের মাস্টার, মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী, গোলাম রাব্বানী, বশির উল্লাহ বেপারী ও আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রগুদাম পাহারা দিয়েছিলেন প্রথমে গ-ামারা গ্রামে, সেখান থেকে আলগীবাজারের উত্তর পাশে সোনা মিয়া সরদার বাড়ি ও সর্বশেষ অমর চান মাস্টারের বাড়িতে। রাত-দিন পালাক্রমে অমর চান মাস্টারের বসতঘরকে অস্ত্রগুদাম হিসেবে ব্যবহার করা কালে তারা চার কোণায় চারজন পালাক্রমে পাহারা দিয়েছেন। অক্টোবরের শেষদিকে বাগড়া বাজারের উত্তর পাশে ডাকাতিয়া নদীতে হানাদারবাহিনী অস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় তৎকালীন চাঁদপুর দক্ষিণ অঞ্চল কমান্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুর, সহকারী কমান্ডার আবুল হোসেন ঢালীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে আক্রমণ করে হানাদারদের পরাজিত করেন। এ যুদ্ধে আবুল খায়ের মাস্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী ছিলেন। পাকসেনাদের অস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করেছিল।
    তৎকালীন ২নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মনি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি কমান্ডার সৈয়দ আবেদ মুনছুরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হাতে নিজের ব্যবহৃত ও অস্ত্রগুদামের অস্ত্র জমা দেন। পরে মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী বাংলাদেশ বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ও আবুল খায়ের মাস্টার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ ফজলুল হক মনি স্বাক্ষরিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি সনদপ্রাপ্ত হন। আবুল খায়ের মাস্টার বাংলাদেশ মুক্তিফ্রন্ট চাঁদপুর থানা শাখা কর্তৃক মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সনদপ্রাপ্ত হন। যার নং ২৭৬। এই ২ মুক্তিযোদ্ধার সহযোদ্ধা গোলাম রাব্বানী ও বশির উল্লাহ বেপারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে তালিকাভুক্ত হন। অপর সহযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেয়ে মনের কষ্টে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
    গত ২০১৭ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কাজ শুরু করে। তখন এ ২ মুক্তিযোদ্ধা প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে জমা দেন। হাইমচর থেকে ৩০ জনের একটি তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই তালিকায় আবুল খায়ের মাস্টারের নং ১১ ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারীর নং ১২। সে তালিকা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। জানা যায়, আবারও এ তালিকা হতে নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হবে।
    আবুল খায়ের মাস্টার ও মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার ছিলেন সৈয়দ আবেদ মুনছুর। তিনি দেশে থাকলে আমাদের জন্যে রাজসাক্ষী হতেন। আমরা যে যে বাড়িতে অস্ত্রগুদাম পাহারা দিয়েছিলাম তার মধ্যে অমর চান মাস্টার আজও জীবিত আছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তার বাড়িতে ১ মাসের অধিক যে অস্ত্র পাহারা দিয়েছি তার সাক্ষ্য দেবেন।
    এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমর চান মাস্টার জানান, মোহাম্মদ আলী ও আবুল খায়ের মাস্টার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তারাসহ ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা আমার এই ঘরটিতে অস্ত্র রেখে পালাক্রমে ৪ কোণায় ৪ জন পাহারা দিতেন। আমার দুঃখ হয় অনেক অমুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেও এ দুজন আজও স্বীকৃতি পাননি।
    এ সম্পর্কে মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী আক্ষেপের স্বরে বলেন,  আমরা মুক্তিযুদ্ধকালীন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করলাম, অস্ত্রগুদাম পাহারা দিলাম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আজও পেলাম না। শেষ বয়সে এসে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি, তিনি যেন আমাকে মৃত্যুর পূর্বে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেন। আবুল খায়ের মাস্টার বলেন, আমার সহযোদ্ধা ৫ জনের ২ জন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়ে দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার একটাই চাওয়া, আমাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করা হোক।