• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুরে যত্রতত্র জ্বালানি তেল বিক্রি ॥ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা

শীঘ্রই এসব দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হবে : জেলা প্রশাসক

প্রকাশ:  ২১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 জ্বালানি তেল বিক্রির জন্যে কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাঁদপুরের যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল। যার ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। একজন ব্যবসায়ী ওইসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল জ্বালানি তেল বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। অথচ সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চাঁদপুরের সর্বত্র ছোট-বড় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্যপদার্থ। আর এভাবে প্রকাশ্যে জ্বালানি তেল বিক্রিতে সাধারণ মানুষ থাকে প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায়। ওষুধ, মুদি ও কাপড়ের দোকানেও চলছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রল ও কেরোসিন বিক্রি।
অপরদিকে চাঁদপুরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এ তিনটি কোম্পানির ডিপো রয়েছে। এসব ডিপো থেকে নির্ধারিত এজেন্টরা যে তেল নিয়ে থাকেন তাও বিক্রি হচ্ছে যেখানে সেখানে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২০০ লিটারের নিচে কোনো এজেন্টের কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি করার নিয়ম নেই। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই চালকদের বিরুদ্ধে ২০-৫০ লিটার তেলও বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি নিয়মনীতি মানছেন না ট্যাংক লরি মালিক বা চালকরা। ডিলার বা এজেন্টদের নির্দেশেই চালকরা বিভিন্ন স্থানে তেল বিক্রি করে থাকেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে কয়েকশ’ দোকানে বিক্রি হচ্ছে এ জ্বালানি পদার্থ। বিভিন্ন দোকানে দুই লিটার, এক লিটার অথবা আধা লিটার ওজনের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রল ভরে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি পেট্রল কিনতে পারেন। যা ব্যবহার হতে পারেন যে কোনো কাজে। এতে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়।
বাবুরহাটস্থ মতলব সড়কের এক জ্বালানি তেল বিক্রেতা বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। সারাদিনে কয়েক লিটার তেল বিক্রি করি। এ আইন সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। লোকজনের চাহিদা থাকায় এজেন্টদের কাছ থেকে তেল নিয়ে এসে বিক্রি করি। অথচ জেলায় তেল বিক্রির জন্যে ১২৪ জন এজেন্ট সদস্য রয়েছেন।
কুমিল্লা জেলা ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা এ চার জেলায় জ্বালানি তেল বিতরণ হয় চাঁদপুরের ডিপোগুলো থেকে। প্রায় ৩শ’ ট্যাংক লরি দিয়ে এসব ডিপো থেকে তেল নিয়ে বিতরণের সময় বিভিন্ন জেলা উপজেলায় তেল বিক্রি করা হয়।
কুমিল্লা জেলা ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সফিউল্লাহ জানান, ডিপো থেকে একটি গাড়িতে করে ৯ হাজার লিটার তেল নিই। বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার পর মূলত তেলের ডিলার বা মালিক তেল বুঝে পেল কিনা সেটাই দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে আমরা কোথাও অতিরিক্ত তেল বিক্রি করি না। তাছাড়া চালক বা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
জ্বালানি তেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহআলম জানান, একজন খুচরা বিক্রেতা দুই হাজার লিটার তেল নিতে পারেন। এক্ষেত্রে বিস্ফোরক লাইসেন্স লাগবে না। তবে দুই হাজার লিটারের বেশি কেউ নিলে অবশ্যই তার বিস্ফোরক লাইসেন্স লাগবে। তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকা জরুরি। কেননা পেট্রল, অকটেনের কাছাকাছি আগুন এলেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ খায়রুল কবির, মেঘনা ডিপোর ইনচার্জ মোশারফ হোসেন ও পদ্মা ডিপোর ইনচার্জ দিদারুল আলম জানান, ডিপো থেকে তেল বুঝিয়ে দেয়া পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব। তেল বাইরে কি করা হয় তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ বলেন, গত এক বছর এক মাস আমি দায়িত্বে থাকাকালীন ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সের জন্যে কোনো আবেদন জমা পড়তে দেখিনি। তাছাড়া এমন কোনো তথ্য চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসেও নেই।
জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান জানান, শীঘ্রই এসব দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যারা নিয়মনীতি না মেনে তেল বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।