চাঁদপুরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া পুলিশ সদস্যদের সংবর্ধনা
স্বাধীনতাই চেয়েছি সনদ নয়-চাঁদপুরে মুক্তিযোদ্ধা মমিন উল্যাহ
চাঁদপুরঃ ৭১' এর রনাঙ্গণে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে কেবলমাত্র স্বাধীনতাই চেয়েছিলাম কোন রকমের সনদ বা সুযোগ-সুবিধা নয়। যাই হউক সরকার আন্তরিক হয়ে ভাতা সহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে বিতর্ক কেন হবে? দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেলো নাকি? মুক্তিযুদ্ধারা হয়ে যাচ্ছে রাজাকার আর রাজাকার হয়ে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা! এসব নিয়ে ত আমিও এক ধরনের আতঙ্কে রয়েছি। কবে না আবার শুনি রাজাকারের খাতায় আমার নাম ঢুকে গেছে! ১৮ ডিসেম্বর বুধবার জেলা পুলিশের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী পুলিশ সদস্যদের এক সম্মননা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব মমিন উল্যাহ পাটওয়ারী (বীর প্রতীক) প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমার নিজের দেখা কত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অভাবে রয়েছে তবুও সনদ নেননি। কারন তারা সনদের জন্য যুদ্ধ করেনি বরং একটি স্বাধীন ভূখন্ড ও নীপিরীত শোষণমুক্ত জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে যুদ্ধ করেছে। আমারও প্রচুর সম্পদ ছিলো যা আমি কল্যাণ ট্রাষ্টে দিয়ে দিয়েছি। একটা কথা বলতে চাই রাজাকার যদি মুক্তিযোদ্ধা হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারের মধ্যে পার্থক্য কি? এ সময় তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস নিয়ে একাধিক সিনেমা লেখা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে হয়েছে কিন্তু আমাদের সব কাজ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অর্থাৎ যারা এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তাদের অথবা তাদের পরিবারের সদস্য যারা এখনো বেঁচে আছেন। তাদের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব এখনো রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজকে আমরা আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) সম্মানিত করছি না। বরং আপনাদের সম্মানিত করতে গিয়ে আমরা নিজেরা সম্মানিত হচ্ছি। আর আপনাদের অপূরণীয় চাহিদাগুলোর কাজগুলো করতে পারলে আমাদের আজকের এই আয়োজন স্বার্থক হবে বলে মনে করছি। পুলিশ সুপার পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ উল্যাহ মাষ্টার, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বকাউল, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লহ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান এর মেয়ে আয়েশা আক্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শহীদ উল্যাহর মেয়ে ডলি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহরুম আব্দুল করিম ভুঁইয়ার মেয়ে শাহনাজ পারভীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বর্গীয় মহনবাঁশি দত্তের ছেলে অজিত দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল বারি মিয়ার ছেলে রিয়াজ আহম্মেদ কনক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান প্রমূখ।
এই অনুষ্ঠানে ৫৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন পুলিশ লাইনস্ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুস সালাম ও গীতা পাঠ করেন শ্রীমান জগনান্দ পন্ডিত দাস ব্রহ্মচারী। অনুষ্ঠানে জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সুধীমহল উপস্থিত ছিলেন।