চাঁদপুরের নবী প্রেমিকরা এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো
মহাবিপদ সংকেত উপেক্ষা করে চাঁদপুরে বিশাল জশনে জুলুছে ঈদে-মিলাদুন্নবী (দঃ)


৯ ও ১০ নভেম্বর ছিলো চাঁদপুরে এক মহাপ্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে ওই দুইদিন চাঁদপুর ৯ এবং ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় ছিলো। এর প্রভাবে ৯ নভেম্বর শনিবার থেকেই সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ১০ নভেম্বর রোববার হচ্ছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহাপবিত্রতম এ দিবসটি উদ্যাপনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন পরিষদ, চাঁদপুর-এর উদ্যোগে ১২ রবিউল আউয়াল ১০ নভেম্বর রোববার চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জমায়েত ও আলোচনা এবং আলোচনা শেষে শহরে জশনে জুলুছ (বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা) করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতিও চলছে। এর মাঝেই এসে গেলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘বুলবুল’ নামে ঘূর্ণিঝড়।
কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের আয়োজকগণ সিদ্ধান্তে অনঢ়। যত দুর্যোগই আসুক, প্রিয় নবীজির আগমন দিবসটি যথাযথভাবে উদ্যাপন করা হবে। ‘দুর্যোগ দিয়েছেন আল্লাহ, ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানও আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের। তাই এর সফলতা আল্লাহই দিবেন’। এ বিশ্বাস থেকে আয়োজকরা অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সামান্যতমও পিছ পা হননি। শনিবার সারাদিন বৃষ্টি হলেও থেমে থেমে হয়েছে। কিন্তু এদিন দিবাগত মধ্য রাত থেকে শুরু হয় বিরামহীন বৃষ্টিপাত। মাঝারি আকারের বৃষ্টির সাথে মাঝেমধ্যে দমকা বাতাসও হচ্ছে।
ওদিক দিয়ে রোববার ভোর থেকেই চলছে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্য দিয়ে ঠিক সকাল ৯টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। ক্রমান্বয়ে শহরের বিভিন্ন অঞ্চল এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা, পীর মাশায়েখের দরবার ও মাদ্রাসা থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। অটো, সিএনজি অটোরিকশা, পিকআপ, মাইক্রো এবং অনেকে পায়ে হেঁটে আসতে থাকেন। শত শত মুসল্লি দুরূদ, সালাম, জিকিরসহ এসে যখন একত্রিত হন অনুষ্ঠানস্থলে। তখন আলোচনা সংক্ষেপ করে জুলুছের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান সকলে। বেলা সাড়ে ১১টায় জুলুছ শুরু হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে। জুলুছ শুরুর পর দেখা গেলো যে, সহস্রাধিক নবী প্রেমিকের বিশাল জুলুছ। অনেক সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেন। এর অধিকাংশই ছিলো পায়ে হেঁটে। তখনও প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে পুরো শহর সরগরম করে তোলে প্রিয় নবীজির আশেকরা ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, মারহাবা’ ইত্যাদি নাতে রাসুল এবং শ্লোগানে। এ দৃশ্য দেখে শহরবাসী হতবাক হয়ে যায়- এমন মহা দুর্যোগ উপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজে কীভাবে সম্ভব! হ্যাঁ, এমন বিরল দৃষ্টান্তই স্থাপন করলো চাঁদপুরের নবী প্রেমিক সুন্নী মুসলমানরা। জুলুছ পুরো শহর ঘুরে পুনরায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে মিলাদ-কিয়াম, মোনাজাত ও তবররুক বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
এদিকে জুলুছ শুরু হওয়ার আগে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক এএইচএম আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চাঁদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওঃ আনম মহিবুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওঃ আবু জাফর মোঃ মাঈনুদ্দিন, মাওঃ মোঃ জসিম উদ্দিন, মাওঃ আব্দুল হান্নান নিজামী, মাওঃ আব্দুর রাজ্জাক, মাওঃ মোঃ শহীদুল্লাহ, মোঃ হুমায়ুন কবির, মাওঃ হাছানুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল বাকী, মোঃ হেলাল উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল আমিন সাকী, নূরুল আলম মামুন, সালাউদ্দিন মোঃ হাসান, নুরুন্নবী মিয়াজী রুবেল প্রমুখ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান প্রফেসর মোঃ আজিম উদ্দিন, চিশতিয়া রহমানিয়া দরবার শরীফের খাদেম মাওঃ মোঃ মিজানুর রহমান, মাহফুজুর রহমান টুটুলসহ ইসলামী ছাত্রসেনা ও যুবসেনার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। মিলাদ-কিয়াম পরিচালনা করেন গাছতলা দরবার শরীফের তত্বাবধায়ক পীরজাদা মাওঃ খাজা মোঃ জোবায়ের। মোনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ মাওঃ আনম মহিবুল্লাহ।