• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ‘চক্ষু স্বাস্থ্য পরিচর্যা’ শীর্ষক কর্মশালা

প্রকাশ:  ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, চাঁদপুরের আয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সহায়তায় ন্যাশনাল চাইল্ডহুড ব্লাইন্ডনেস প্রজেক্ট (এনসিবিপি)-এর আওতায় গত মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে ‘ওরিয়েন্টশন অন পেডিয়াট্রিক প্রাইমারী আই কেয়ার ফর স্কুল টিচার্স’ শীর্ষক দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কর্মশালায় রামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ দৌলতুর রহমানের সভাপতিত্বে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ১০ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন। দুই পর্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গুণময় পোদ্দার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রান্তিক পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের এই ধরনের মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম হাসপাতাল, যেখানে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে দাতা সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং যথোপযুক্ত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানটি বদ্ধপরিকর। তিনি এ ধরনের কর্মশালা আয়োজনের জন্য হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদকে এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে শিশুদের চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগোপযোগী সহযোগিতা প্রদান করার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে হাসপাতালের ম্যানেজার (এডমিন) শামীম খানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদের অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদক এমএ মাসুদ ভূঁইয়া। তিনি হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে সকলকে অবগত করেন এবং রামগঞ্জ উপজেলায় স্থাপিত প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র (পিইসি)-এর সেবাসমূহ সকলকে অবগত করেন। মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের প্রশংসা করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ দৌলতুর রহমান। তিনি বলেন, হাসপাতালটি অন্ধত্ব নিবারণে বিশেষ করে শিশু অন্ধত্ব নিরসনে অত্র অঞ্চলে বিনামূল্যে স্কুল সাইট টেস্টিং প্রোগ্রাম, ভ্রাম্যমাণ চক্ষু চিকিৎসা শিবির এবং প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র (স্থায়ী চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র) স্থাপনসহ যেভাবে সেবার ধরণ প্রসার করে আসছে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দক্ষ জনবল সমৃদ্ধ হাসপাতাল সেবা নিশ্চিত করে আসছে, তার ফলে আগামীতে অল্প সময়ে অত্র অঞ্চলে অন্ধত্বের হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। উক্ত কর্মশালায় সভাপতি মহোদয় ভবিষ্যতে অত্র অঞ্চলের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহব্বান জানান। তিনি উক্ত প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণার্থীদের সহযোগিতা কামনা করেন এবং দাতা সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে ধন্যবাদ জানান।
প্রাক মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সময় হতেই চাঁদপুর ও আশে-পাশের জেলাসমূহে অন্ধত্ব নিবারণ, দূরীকরণ এবং চক্ষু রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা অন্যতম সমস্যা হিসেবে পরিগণিত ছিল। মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি চাঁদপুর জেলাসহ এর পাশর্^বর্তী জেলা সমূহে ভ্রাম্যমাণ চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। হাসপাতালটি জুন ২০১৯ পর্যন্ত স্বল্পমূল্যে ১১,০২,২৮৮ জন রোগীকে বহিঃবিভাগ এবং ৮৮,৫০৭ জন রোগীকে অন্তঃবিভাগে অপারেশন সেবা প্রদান করেছে। অন্ধত্ব নিবারণে সহায়তাদানকারী আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা আন্ধেরী হিলফি জার্মানী, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, দি ফ্রেড হলোজ ফাউন্ডেশন, ডাচ বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় জুন ২০১৯ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ১,০১১ টি ভ্রাম্যমাণ চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে ১০,৪০,১২২ জন রোগীকে বহিঃবিভাগ চিকিৎসা এবং ৯৭,৫৩৮ জন চক্ষুরোগীকে ছানি অপারেশন সেবা প্রদান করেছে। এছাড়া বিনামূল্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় জুন ২০১৯ খ্রিঃ পর্যন্ত ১,০৮৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪,৮১,৯৭৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও চশমা বিনামূল্যে প্রদান করেছে এবং টিচার্স ডেমোনেস্ট্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১,০১৫ টি বিদ্যালয়ের ২,০৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ উপকরণসহ প্রাথমিক চক্ষু স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। উল্লেখ্য যে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের দোরগোড়ায় চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে লক্ষীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলায় এবং চাঁদপুর জেলার মতলব (দঃ) উপজেলায় সর্বমোট ০৫ টি প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র তথা ভিশন সেন্টার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে চোখের গঠন ও কাজ এবং চোখের বিভিন্ন রোগ ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা ও চক্ষু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা শীর্ষক মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনাসহ বিভিন্ন গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করেন হাসপাতালের চীফ কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন শেখ। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ব্যাগ, স্বাস্থ্য সহায়িকা, ফ্লীপ চার্ট, ভিশন চার্ট ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদান করা হয়েছে এবং ভিশন চার্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দৃষ্টিত্রুটি সনাক্তকরণের বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।