• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
  • ||
  • আর্কাইভ

প্রশাসনের ব্যাপক অভিযানের পরও শিশু-কিশোরদের দিয়ে মা ইলিশ নিধন

প্রকাশ:  ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১১:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে শুক্রবার মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ৪ জেলেকে আটক করেছে নৌ থানা পুলিশ। আটক জেলেদের বিরুদ্বে মৎস্য আইনে মামলা করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে : মাসুদ গাজী (২৭), মেজবাহ উদ্দিন ওরফে মিজান (৪৫), রবিউল হোসেন (২৩) ও মাঈন উদ্দীন ঢালী (২৬)। চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু তাহের খান এ তথ্য জানান।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯ অক্টোবর থেকে গতকাল ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করার অপরাধে ১৬১ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ অলিদুজ্জামান, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তারসহ দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রেরিত তথ্যে জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স এ পর্যন্ত ২০৪টি অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ১২৩টি মাছঘাট, মৎস্য আড়ৎ ৭৮০টি এবং ৪৬১টি বাজার পরিদর্শন করেন তাঁরা। প্রায় ৪ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। ৪৭ লাখ ৮২৫ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় ৭৯টি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৭৪টি। জরিমানা আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং কারাদ- হয়েছে ১৬১ জন জেলের।
প্রশাসনের ব্যাপক দৃষ্টি ও অভিযান পরিচালনার পরও পদ্মা-মেঘনায় শিশু-কিশোরদের দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে মা ইলিশ নিধন করতে দেখা গেছে। বর্তমানে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে মা ইলিশ আর পানিতে বলতে গেলে সমানে সমান। নদীতে কারেন্ট জাল ফেলামাত্র ঝাঁকেঝাঁকে মা ইলিশ আটকা পড়ে। এতে করে জেলেরা সে লোভ সামাল দিতে না পেরে মা ইলিশ ধরা অপরাধ জেনেও গোপনে তা নিধন করার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।  নদীতে জাল ফেলা নিষেধ থাকলেও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নেমে মা ইলিশ শিকার করছে।
জেলেরা জানায়, এখন নদীতে ইলিশে আর পানিতে সমানে সমান। কারেন্ট জাল ফেলে কেউ খালি হাতে ফিরছে না। একবার জাল ফেললে ৪-৫ মণ ইলিশ জালে আটকা পড়ছে। এখন এ ইলিশ না ধরলে ডিম ছাড়ার পর এসব ইলিশ মাছ এ নদীতে আর থাকবে না বলে জেলেদের অভিমত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, চাঁদপুরবাসীর দাবির মুখে অভিযান পর্যাপ্ত হওয়ার পরও জেলেরা ইলিশ নিধন বন্ধ না করায় নদীতে অভিযানের জন্যে র‌্যাবের সহযোগিতা চেয়েছি। তিনি আরো জানান, নদী পাড়ের ও শহরবাসীর দাবি চাঁদপুর নৌ-সীমানায় র‌্যাব অথবা বিজিবি ক’দিন নদীতে অভিযান ও টহল চালালে অসাধু জেলেরা ভয়ে ও আতঙ্কে ইলিশ নিধনে লিপ্ত হবে না।

এদিকে জেলেরা শিশু-কিশোরদের দিয়ে মা ইলিশ নিধন করে নদীর তীরবর্তী এলাকায় হাট বসিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে এবং শহরতলী ও শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। মেঘনা নদীর হরিণা, চান্দ্রা এলাকায় নদীর পাড়, পুরাণবাজার রনাগোয়াল এলাকা, আখনের হাট, দোকানঘর, আলুরবাজার, আনন্দবাজার, কোড়ালিয়া নদীর পাড়, যমুনা ঘাট, টিলাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও এ মা ইলিশ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে।
সচেতন এলাকাবাসীরা জানায়, গত ক’দিন যাবত কোস্টগার্ডের ও নৌ পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার কারণে এখন তারা গোপনে বিভিন্ন বাড়িতে ডিফ ফ্রিজের মাধ্যমে ইলিশ মজুদ করে রাখে এবং ক্রেতা পেলে সুযোগ সুবিধা মতো বিক্রি করছে।
জেলেরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর রেখে প্রশাসনের অবস্থান জেনে নদীতে জাল ফেলে মা ইলিশ নিধন করছে। জেলেরা মেঘনা নদীতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে কারেন্ট জাল পানির উপরে ভাসিয়ে না রেখে অনেক দূরে দূরে পাতলা ককসিট জাতীয় বয়া ব্যবহার করে মা ইলিশ নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে অভিযানকালে প্রশাসন নদীতে নেমে ব্যাপক অভিযান করলেও জেলেদের কারেন্ট জাল নদীতে দেখতে পায় না। জেলেরা নদীতে ওই কৌশলে কারেন্ট জাল ফেলে চলে যায়, সময়-সুযোগ বুঝে জেলেরা শিশু ও কিশোরদের মাধ্যমে জাল টেনে নদীর তীরবর্তী স্থানে এনে বয়স্ক জেলেরা মা ইলিশ জাল থেকে খুলে বরফজাত করে রাখে। পরে রাতে সময় উপযোগী অবস্থা বুঝে ইলিশ পাচার করে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী অনেকেই অভিযোগ করে জানান।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স দিনে ও রাতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ অভিযান পর্যাপ্ত না বিধায় তারা মা ইলিশ নিধন করে চলছে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

সর্বাধিক পঠিত